‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’দের চিহ্নিত করে তাঁদের সনদ বাতিল করছে সরকার। গতকাল সোমবার একজন উপসচিব ও রেলের একজন অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপকসহ ৩৫ জন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ বলেন, ‘সনদ বাতিল হওয়া ৩৫ জনই চাকরির বয়স বাড়ানোর আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তদন্তে তাঁদের মুক্তিযোদ্ধা সনদে ত্রুটি ধরা পড়ায় তা বাতিল করা হয়েছ
ে।’ মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও যাঁরা অসৎ উপায় অবলম্বন করে আইনের ফাঁক দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা সনদ সংগ্রহ করেছেন, তাঁদের সম্পর্কে অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হয়। সেই তদন্তের ভিত্তিতে এবার ৩৫ জনের সনদ ও গেজেট বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’ মন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা মুক্তিযোদ্ধা নন তাঁরা কেন সেটা দাবি করবেন? অতীতের মতো ভুলের যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সে বিষয়ে আমরা সচেতন আছি।’ মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও এভাবে সুযোগ-সুবিধা নেওয়া প্রতারণার শামিল মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, ‘৩৫ জনের আর্থিক সুবিধা ফেরত নিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে বলা হবে। এদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হবে।’ ২০১৪ সালের পর ‘ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা’ শব্দটি আর থাকবে না বলেও মন্তব্য করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী। তথ্য কর্মকর্তা জানান, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৩০ জন, জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী দুজন, মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার মতো উপযুক্ত বয়স না হওয়ায় দুজন এবং দুটি সনদ থাকায় একজনের মুক্তিযোদ্ধার গেজেট ও সনদ বাতিল করা হয়েছে। এনএসআই ও জেলা প্রশাসকের প্রতিবেদন অনুযায়ী গেজেট বাতিল হওয়া ৩২ জন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার কোনো গ্রহণযোগ্য দালিলিক প্রমাণ দেখাতে পারেননি বলেও তথ্য কর্মকর্তা জানান। এর আগেও ১১৬ জনের গেজেট ও মুক্তিযোদ্ধা সনদ বাতিল করা হয়েছিল। এ নিয়ে ১৫১ জনের সদন বাতিল হলো। যাঁদের সনদ বাতিল হলো : ওএসডি উপসচিব শেখ আলাউদ্দিন, চট্টগ্রাম রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) মো. সোলায়মান চৌধুরী, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের মো. শাফিয়ার রহমান ও মো. আব্দুল ওয়ারেছ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মো. আব্দুল হালিম এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আজহার আলী খান। ভূমি মন্ত্রণালয়ের আ ন ম বজলুল রশীদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের মো. আব্বাস আলী খান, আব্দুর রশীদ হাওলাদার, ঢাকা ভ্যাট কমিশনের রাজস্ব কর্মকর্তা (বর্তমানে পিআরএলে) শেখ মাহবুবুল আলম, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মো. শফিকুল হক, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এ কে এম জালাল ও হাশেম আলী। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এ টি এম শাহজাহান, মো. রওশন আলম (আলফাডাঙ্গা, ফরিদপুর) ও মো. আবু হোসেন মিয়া, রণজিৎ কুমার রায় (কাহারোল, দিনাজপুর), মো. মজিবুর রহমান (ঘুঘুরার চালা সপ্রাবি, ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ) ও এ কে এম হাবিবুল্লাহ (বড়জয়না সপ্রাবি, ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের মো. জয়নাল আবেদীন, কে এ নিজাহার উদ্দীন, কর অঞ্চল-২-এর মো. দেলোয়ার হোসেন, যমুনা অয়েল কম্পানির সাবেক ম্যানেজার মো. গোলাম রব মোল্লা এবং সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলা শিক্ষা অফিসের মো. আবুল হোসেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মো. দানেশ মিয়া, সোনালী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ অফিসার এ টি এম আব্দুল হাই, পুলিশ (বেতার) মো. সোলায়মান বিশ্বাস, ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মো. হারুন অর রশীদ খান, মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মো. শাহযাদ আযীম, চাঁদপুর টিএসআইয়ের মো. নুরুন্নবী পাটোয়ারী, সাতক্ষীরা শ্যামনগর-রামজীবননগরের এম এ মজিদ, নোয়াখালী বেগমগঞ্জ-কাশীপুরের মো. নূর ইসলাম, জয়পুরহাটের মো. বেলাল হোসেন, কুড়িগ্রাম উলিপুর-দড়িচরের মোহাম্মদ আলী ও টাঙ্গাইলের ঘাটাইল-শাহাপুরের মো. আব্দুল মালেকের সনদ বাতিল করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment