বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সাম্প্রতিক প্রতিবেদনকে ‘ভিত্তিহীন’ আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে অভিযুক্ত তিন পক্ষ। গতকাল রোববার শিক্ষা মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও উপাচার্যরা এক যৌথ সভা করে বলেন, তাঁরা ঘুষ নেননি বা দেননি। গত ৩০ জুন প্রকাশ করা টিআইবির গবেষণা প্রতিব
েদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্থাপন থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীদের পাস করিয়ে দেওয়া পর্যন্ত পদে পদে অবৈধ আর্থিক লেনদেন হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ইউজিসি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্বপ্রাপ্তদের একাংশ এই লেনদেনের সঙ্গে জড়িত। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আহ্বানে সচিবালয়ে গতকালের সভাটি হয়। সভা শেষে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ সভার সিদ্ধান্তের কথা জানান। সংবাদ ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ারম্যান, উপাচার্য সকলে মিলে আমরা একমত হয়েছি, টিআইবি গবেষণার নাম দিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, আমরা তা প্রত্যাখ্যান করছি।...এটি নিন্দনীয়, গ্রহণযোগ্য নয়। এটি প্রত্যাহার করতে হবে।’ শিক্ষামন্ত্রী প্রতিবেদনটিকে ‘মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও অনুমাননির্ভর’ আখ্যা দেন। টিআইবির প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে এ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বক্তব্য-বিবৃতি চলছে। শিক্ষামন্ত্রী ও ইউজিসির চেয়ারম্যান আগেও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘কেউ প্রতিবেদনকে মিথ্যা বলতেই পারেন, সেই অধিকার তাঁদের আছে। কিন্তু আমরা গবেষণাপদ্ধতি অনুসরণ করে নির্ভরযোগ্য তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই প্রতিবেদন করেছি। সুতরাং প্রত্যাহার করতে বলার যৌক্তিকতা নেই। বরং শিক্ষামন্ত্রীকে বলব, অস্বীকৃতির মানসিকতা পরিহার করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কার্যকর পদক্ষেপ নিন।’ ইউজিসি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ: ব্রিফিংয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, টিআইবির প্রতিবেদনের অভিযোগ সম্পর্কে জানার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে তথ্য চাওয়া হয়েছিল। ৭৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে মাত্র একটি ইউজিসির একজন কর্মকর্তা সম্পর্কে অভিযোগ দিয়েছে। পরে মন্ত্রণালয় ও ইউজিসিতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্রিটানিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মন্ত্রণালয়ের প্রশ্নের জবাবে বলেছে, তারা ইউজিসির একজন অতিরিক্ত পরিচালককে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ দিয়েছিল। উভয় সূত্র পরে আবার প্রথম আলোকে জানায়, ওই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের একজন অভিযোগটি প্রত্যাহার করে নেন। এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী ব্রিফিংয়ে বলেন, এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। ইউজিসির চেয়ারম্যান এ কে আজাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে অভিযোগ পাওয়ার কথা নিশ্চিত করে বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’ সভা সূত্রে জানা যায়, ঈশা খাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য দুর্গাদাস ভট্টাচার্য সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করে বক্তব্য দেন। ইউজিসির চেয়ারম্যান, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ফরাসউদ্দীন আহমেদ, নর্থ বেঙ্গল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আবদুল খালেক, ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভের উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ, বিএনপির নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানসহ বেশ কয়েকজন ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও উপাচার্য বক্তব্য দেন। মামলা করে টিকে আছে ১৫টি: শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ দাবি করেন, অনিয়মের কারণে ১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেগুলো রিট করে টিকে আছে। মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযোগ থাকা নয়টি বিশ্ববিদ্যালয় অননুমোদিতভাবে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছে। এগুলো হলো দারুল ইহসান, প্রাইম, এশিয়ান, অতীশ দীপঙ্কর, সাউদার্ন, নর্দান, দি পিপলস, বিজিসি ট্রাস্ট ও ইবাইস ইউনিভার্সিটি। এর মধ্যে দারুল ইহসান, প্রাইম ও ইবাইসের ট্রাস্টি বোর্ডে দ্বন্দ্ব আছে। ইবাইসে জমি নিয়েও জটিলতা আছে। এ ছাড়া, আমেরিকা বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, কুইন্স ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, ইউএসটিসি, আইইউবিএটি ও আমেরিকান ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটির বিরুদ্ধে মামলা চলমান আছে।
No comments:
Post a Comment