Friday, July 18, 2014

মালয়েশীয় উড়োজাহাজের ২৯৫ আরোহীর সবাই নিহত:প্রথম অালো

চার মাসের মধ্যে আবারও একটি ভয়াবহ এক বিপর্যয়ের শিকার হলো মালয়েশিয়া এয়ারলাইনস। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়া সীমান্তবর্তী এলাকায় গতকাল বৃহস্পতিবার বিধ্বস্ত হয়েছে তাদের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ। এতে আরোহী ছিলেন ২৯৫ জন। সবাই নিহত হয়েছেন। উড়োজাহাজটি গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ইন্টারফ্যাক্স। ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযে
াগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়েছে। আর ইউক্রেনের রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীরা অভিযোগ করেছে, সে দেশের বিমানবাহিনীর জঙ্গি বিমানই মালয়েশিয়ার উড়োজাহাজটি গুলি করে ভূপাতিত করেছে। খবর বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্সের। এর আগে গত ৮ মার্চ মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুর থেকে চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের উদ্দেশে উড্ডয়নের পর নিখোঁজ হয় তাদের একটি উড়োজাহাজ। ১২ জন ক্রু ও ২৭২ জন যাত্রী নিয়ে নিখোঁজ হওয়া এমএইচ-৩৭০ নম্বর ফ্লাইটটির কোনো হদিস এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি, মেলেনি কোনো ধ্বংসাবশেষও। বিমান চলাচল-সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে ইন্টারফ্যাক্স জানায়, গতকাল বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজটি নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডাম শহর থেকে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে যাচ্ছিল। এর ২৯৫ জন আরোহীর মধ্যে ২৮০ জন ছিলেন যাত্রী। বাকি ১৫ জন ক্রু। বোয়িং কোম্পানির তৈরি উড়োজাহাজটির ফ্লাইট নম্বর ছিল এমএএইচ-১৭। বিধ্বস্ত হওয়া উড়োজাহাজের ২৯৫ জন আরোহীর সবাই নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আন্তোন জেরাশেঙ্কো। একজন উদ্ধারকর্মী বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে জানান, স্থনীয় সময় বিকেলে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় দোনেৎস্ক অঞ্চলের শাখতায়স্ক শহরের কাছাকাছি এলাকায় উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে। ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়েছে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে। তবে বেশির ভাগ অংশ যে জায়গাটিতে পড়েছে, সেখানে অন্তত ১০০ জনের ছিন্নভিন্ন মৃতদেহ পাওয়া গেছে। ভ্লাদিমির নামের একজন প্রত্যক্ষদর্শী রয়টার্সকে বলেন, ‘আমি ট্রাক্টর নিয়ে মাঠে কাজ করছিলাম। এর মধ্যে হঠাৎ একটি উড়োজাহাজের শব্দ পাই এবং এর পরই একটি বিস্ফোরণের শব্দ। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে উড়োজাহাজটি মাটিতে আছড়ে পড়ে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়।’ মালয়েশিয়া এয়ারলাইন কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের রাডারের সঙ্গে উড়োজাহাজটির যোগাযোগ যখন বিচ্ছিন্ন হয়, তখন সেটি ইউক্রেনের আকাশসীমায় ছিল। উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক। আর রাশিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মালয়েশিয়ার উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ক্রেমলিনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাশিয়ার নেতা বিষয়টি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে অবহিত করেছেন। ইউক্রেনের অজ্ঞাত সূত্রের বরাত দিয়ে ইন্টারফ্যাক্সের খবরে বলা হয়, উড়োজাহাজটি ভূমি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উঁচু দিয়ে চলছিল। আর মাত্র ৫০ কিলোমিটার অগ্রসর হলে এটি রাশিয়ার আকাশসীমায় প্রবেশ করত। এর আগেই এটি ভূপাতিত হয় এবং এর পরপরই আগুন ধরে যায়। দোনেৎস্কর ওই অঞ্চলে ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী ও রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মধ্যে লড়াই চলছে। সাম্প্রতিক সময়ে সেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ইউক্রেন বিমানবাহিনীর অন্তত দুটি জঙ্গি বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ ছাড়া গতকাল সকালে ইউক্রেন অভিযোগ করে, তাদের একটি জঙ্গি বিমান তাদের আকাশসীমার মধ্যেই গুলি করে ভূপাতিত করেছে রাশিয়া। ইউক্রেনের আকাশসীমা উড্ডয়ন-নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে জার্মানির লুফথানসা এবং এয়ার ফ্রান্স ও টার্কিশ এয়ারলাইনস ওই আকাশসীমা এড়িয়ে চলাচল করছে। মালয়েশিয়া এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে দোনেৎস্ক অঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীরা। তাদের একজন নেতা জানিয়েছেন, ১০ কিলোমিটার উঁচু থেকে উড়োজাহাজ ভূপাতিত করার মতো কোনো অস্ত্র তাদের হাতে নেই৷ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের এক বিবৃতিতে অভিযোগ করা হয়েছে, ইউক্রেনের বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান মালয়েশিয়ার উড়োজাহাটিকে আক্রমণ করে। এতে সেটি আকাশেই দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় এবং পরে ভূপাতিত হয়। একজন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেছেন, আকাশে ১০ কিলোমিটার ওপরের উড়োজাহাজ ভূপাতিত করতে হলে ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের প্রয়োজন এবং সেই ক্ষেপণাস্ত্র রাডার নিয়ন্ত্রিত হতে হবে। এর অর্থ, কোনো বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে উড়োজাহাজটি ভূপাতিত করা হয়েছে। আরেকটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে, জঙ্গি বিমানে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে উড়োজাহাজটিকে আক্রমণ করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment