Sunday, July 27, 2014

মাঠের খেলা মাঠেই হবে:প্রথম অালো

ঈদের পর বিএনপির আন্দোলনের হুমকি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘মাঠের খেলা মাঠেই হবে। ফুটবল মাঠে কে কয়টা গোল দেয়, সেটা সেখানেই দেখা যাবে। মাঠে নামুক না। মাঠে আওয়ামী লীগ আছে, মানুষও আছে।’ লন্ডন সফর-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। সংলাপ প্রসঙ্গটি আগের মতোই নাকচ করে দেন তিনি। সরকারি বাসভবন গণভবনে গতকাল শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় এই সংবাদ সম্মেল
নের আয়োজন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল বেলা একটায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা সংলাপের আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার স্বার্থে সরকার যদি এই দাবি অগ্রাহ্য করে, সব দলের অংশগ্রহণে দ্রুত নির্বাচন না দেয়, তাহলে তুমুল যুদ্ধের পদধ্বনি শোনা যাবে। প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন এবং ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্থনি লেকের বিশেষ আমন্ত্রণে ২১ থেকে ২৩ জুলাই লন্ডনে অনুষ্ঠিত প্রথম গার্ল সামিটে অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে থাকা, জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, ঈদের পর বিরোধী দলের আন্দোলনের হুমকিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন। যুক্তরাজ্য নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেনি: প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাজ্য সরকার ৫ জানুয়ারির নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেনি। তাঁকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ক্ষেত্রেও তাদের কোনো দ্বিধা ছিল না। ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাজ্য সরকার অস্বস্তিতে আছে—বিভিন্ন পত্রিকায় এ বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে শেখ হাসিনা বলেন, সবাই নয়, দু-একটি পত্রিকা লিখেছে। প্রধানমন্ত্রী এ কথা বললেও যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে একজন মুখপাত্রের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গত জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে অর্ধেকেরও বেশি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হতাশা প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাজ্য রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপরও গুরুত্ব দিয়েছে। ২২ জুলাই যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বক্তব্য প্রকাশ করে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘লন্ডনে আমার যাওয়াটা একটু সমস্যা ছিল। আমি একটু দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী যখন দাওয়াত দিলেন, একজন মন্ত্রী ফোন করলেন, তখন যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। যেহেতু মেয়েদের ব্যাপার এবং প্রথম গার্ল সামিট, সেহেতু এই সিদ্ধান্ত নিলাম।’ তিনি আরও বলেন, ‘যেখানে যাব, নির্বাচন নিয়ে একটু আলোচনা হবেই। উনার বক্তব্য ছিল, ইলেকশন যা হয়েছে, হয়েছেই। পেছনে আর তাকাতে চান না। উনি ফরোয়ার্ড লুকিং। সামনের দিকে এগোতে চান। কাজেই ইলেকশন যে পার্টিসিপেটরি, কিছু আনকনটেস্টেড হয়েছে এসব কথা যেকোনো সময় যেকোনো আলোচনায় আসতে পারে। তাদের ওয়েবসাইটে বিষয়টি তুলে ধরেছে।’ প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, যুক্তরাজ্য সরকারের যদি বাংলাদেশ সরকার সম্পর্কে কোনো দ্বিধা থাকত, তাহলে তাঁকে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বারবার ফোন করে দাওয়াত দিতেন না। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে নিজেই অভ্যর্থনা জানান এবং সেখানে তিনি বৈঠকে অংশ নেন বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা: শেখ হাসিনা বলেন, সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল সামরিক শাসকেরা করেছিলেন। সংবিধানে বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদের হাতে থাকলেও পরে জিয়াউর রহমান এক সামরিক ফরমানে ওই অনুচ্ছেদ বাতিল করেন। বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা পরে দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইতিমধ্যে জিয়ার শাসনামলকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। পরে আমরা একটি সর্বদলীয় বিশেষ কমিটি করে সংবিধান সংশোধন করি। তখনো বিষয়টি উঠে এসেছিল। বর্তমানে আইন কমিশন, মানবাধিকার কমিশনসহ অনেকেই এটা সংশোধনের পক্ষে মত দিয়েছে।’ এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, পঁচাত্তরের জানুয়ারিতে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদ থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে নেওয়া হয়। তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কাছে দেওয়া হয়। তখন রাষ্ট্রপতি ছিলেন জিয়াউর রহমান। শাহদীন মালিক বলেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধানে ফেরাটাই যদি যুক্তি হয়, তাহলে অনেক কিছুই বদলাতে হবে। তা ছাড়া এখনকার সংসদে ব্যবসায়ীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ; আইনজ্ঞ ও দক্ষ রাজনীতিকের অভাব রয়েছে এবং এই সংসদে আইন নিয়ে খুব একটা আলোচনাও হয় না। এমন একটি সংসদের কাছে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়ার কারণ দেখি না।’ জামায়াতের সঙ্গে আঁতাত প্রসঙ্গ: জামায়াতের সঙ্গে সরকারের আঁতাতের গুঞ্জন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আঁতাতের রাজনীতি কোন দুঃখে করতে যাব? আর জামায়াতের কাছ থেকে পাওয়ার কী আছে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে। বিচার শেষ হলে তা কার্যকর করবে নির্বাহী বিভাগ। আমি তো আর যুদ্ধাপরাধীদের ধরে এনে ফাঁসি দিতে পারব না।’ প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য প্রসঙ্গে জানতে চাইলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা চাই না, প্রধানমন্ত্রী কাউকে ধরে এনে বিচার করুন। কিন্তু আমরা চাই, দ্রুত বিচার শেষ করা হোক। এ জন্য ট্রাইব্যুনালের ঘাটতি ও অপূর্ণতাগুলো দূর করতে হবে। কিন্তু বিচার-প্রক্রিয়া, ট্রাইব্যুনালের জনবল, নিরাপত্তা ও রসদের যে হাল, তাতে আমাদের বদ্ধমূল ধারণা, বিচার আর হবে না। ২০১৩ পর্যন্ত বিচারের যে গতি ছিল, তা এ বছরে স্তিমিত হয়ে পড়েছে।’ খুনিদের প্রশ্রয় এবং আরেকটি ১৫ আগস্ট প্রসঙ্গ: বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের

No comments:

Post a Comment