Tuesday, July 22, 2014

শিল্প ঋণের সুদ সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার দাবি উদ্যোক্তাদের:যুগান্তর

ব্যাংকগুলোকে শিল্প ঋণের মাত্রাতিরিক্ত সুদের হার ও সার্ভিস চার্জ কমানোর নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঋণের খরচ কমাতে এবং বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বিনিয়োগ বাড়াতে ব্যাংকগুলোকে নতুন নতুন ক্ষেত্র চিহ্নিত করার কথা বলা হয়েছে। সোমবার বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীদের সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান এ নির্দেশ দেন। তবে উদ্যোক্তারা বলেছে
ন, শিল্প ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। প্রতিবেশী দেশগুলোতে এই সুদের হার ৬ শতাংশ। বাংলাদেশে সেটা ১৮ থেকে ২৩ শতাংশ। এত সুদে ঋণ নিয়ে শিল্প করা যাবে না। শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হলে সুদের হার ও সার্ভিস চার্জ কমাতে হবে। বৈঠকে গ্রাহক ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর মাত্রাতিরিক্তি সার্ভিস চার্জ আদায়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, আমাদের কাছে অভিযোগ আছে ব্যাংকগুলো অঘোষিতভাবে বিভিন্ন ধরনের সার্ভিস চার্জ আদায় করছে। অবিলম্বে অঘোষিত সার্ভিস চার্জ আদায় বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যে কোনো চার্জ আদায় করতে হলে তা আগে গ্রাহককে জানাতে হবে। সব ধরনের চার্জই যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জাল-জালিয়াতি বন্ধে কোনো ধরনের শৈথিল্য সহ্য করা হবে না বলে হুশিয়ার করে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমান। তিনি ব্যাংকের এমডিদের উদ্দেশে বলেছেন, ব্যাংকিং খাতে যে কোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর ব্যবস্থা নেবে। ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জোরদার করতে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদেরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে শিল্প খাতের ঋণের ঘোষিত সুদের হার ১২ থেকে ১৬ শতাংশ। ৩ মাস পর পর সুদের টাকা মূল ঋণের সঙ্গে যোগ করে। ফলে মূল টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ওপর আবার সুদ আরোপ করে। এভাবে সুদের হার বেড়ে যায়। এ প্রক্রিয়ায় সুদ আরোপের ফলে বছর শেষে ঋণের গড় সুদের হার দাঁড়ায় ১৮ থেকে ২৩ শতাংশ। এর সঙ্গে রয়েছে ব্যাংকগুলোর নানা ধরনের সার্ভিস চার্জ। ফলে ঋণের খরচ আরও বেড়ে যায়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকগুলোকে বলা হয়েছে, শিল্প ঋণের সুদের হার বর্তমানে অনেক বেশি। এত বেশি সুদে ঋণ নিয়ে শিল্প স্থাপন করে তা টেকসই করা যাবে না। এই কারণে শিল্প ঋণের সুদের হার কোনোক্রমেই বছরে ১৫ শতাংশের বেশি হবে না। এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে সার্ভিস চার্জের পরিমাণ অনেক বেশি। এটি অবশ্যই কমাতে হবে। এত সার্ভিস চার্জ হতে পারে না। গ্রাহক এবং ব্যবসায়িক লেনদেন পর্যায়ে সার্ভিস চার্জ কমিয়ে আনার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে বিনিয়োগ বাড়াতে ঋণের বহুমুখী ক্ষেত্রে চিহ্নিত করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। যেসব খাতে ঝুঁকি কম এবং গ্যাসনির্ভর শিল্প নয় এমন সব খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বৈঠক শেষে ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে জাল-জালিয়াতি রোধে এবং ঋণের সুদের হার কমানোর কথা বলা হয়েছে। এসব বিষয়গুলোকে তারাও যাতে কঠোরভাবে তদারকি করে সে কথাও বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন ব্যাংকার্স, বাংলাদেশ (এবিবি) সভাপতি আলী রেজা ইফতেখার সাংবাদিকদের বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ চিন্তিত হওয়ার মতো কম নয়। উদ্যোক্তাদের মধ্যে কিছুটা দ্বিধা আছে, সেটা কেটে গেলে ঋণ প্রবাহ আবার বেড়ে যাবে। বৈঠকে ব্যাংকারদের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিনিয়োগ বাড়াতে হলে আগে উদ্যোক্তাদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করতে হবে। বর্তমানে উদ্যোক্তাদের মধ্যে যথেষ্ট আস্থা নেই বলে তারা বিনিয়োগে এগিয়ে আসছে না। তারা না এলে ব্যাংকগুলোর কিছু করার নেই। তবে শুধু ঋণের সুদের হার কমিয়ে বিনিয়োগ বাড়ানো যাবে না। এজন্য সরকারকে একটি সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। তারা বলেছেন, সরকারের দিক থেকে আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, অবকাঠামো সমস্যার সমাধান, বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিলে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসবেন। বৈঠকে ঋণের সুদের হার কমাতে আমানতের সুদের হার কমানোর কথা বলা হয়। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে, যাতে আমানতকারীরা ব্যাংক বিমুখ না হয়। ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদের হারের ব্যবধান ৫ শতাংশের বেশি হবে না মর্মে সিদ্ধান্ত থাকলেও ব্যাংকগুলো তা মানছে না। এ ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রয়োজনে আরও কঠোর হবে। আমানতের সুদের হার কমছে। এই কারণে ঋণের সুদের হারও কমাতে হবে। উদ্যোক্তারা বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে। এতেই ঋণের সুদের হার বাড়ানোর ইঙ্গিত দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ঋণের সুদের হার কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এই হার অবশ্যই সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে হবে। কেননা স্থানীয় ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদের হার বেশি হওয়ায় উদ্যোক্তারা দেশী ব্যাংক থেকে ঋণ না নিয়ে বিদেশী ব্যাংক থেকে কম সুদে ঋণ নিচ্ছে। প্রতিবেশী দেশসহ অনেক দেশে ঋণের সুদের হার ৬ শতাংশ। ফলে উদ্যোক্তারা এখন বিদেশী ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতির ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুুুল আউয়াল মিন্টু যুগান্তরকে বলেন, সরকারের চরম অব্যবস্থাপনা এবং দলীয়করণের কারণে ব্যাংকিং খাতে চরম দুরবস্থা চলছে। তিনি বলেন, একদিকে ব্যাংক ঋণের মাত্রাতিরিক্ত সুদ অপরদিকে ব্যাংকগুলোর অলস টাকার পাহাড় জমে উঠেছে। আর ব্যাংকগুলো মাত্রাতিরিক্ত সুদ নিলেও শেয়ার হোল্ডারদের লভ্যাংশ দিচ্ছে না। তিনটি নিয়ম একটি অন্যটির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। তার মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অব্যবস্থাপনার জন্য এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, এই পরিস্থিতির উন্নতি না হলে বিনিয়োগ হবে না। এদিকে চড়া সুদে দেশী ব্যাংক থেকে উদ্যোক্তারা ঋণ না নেয়ায় ব্যাংকগুলোতে অলস টাকার পাহাড় জমেছে। এই টাকা নিয়ে ব্যাংকগুলোর মতো কেন্দ্রীয় ব্যাংকও বিপাকে পড়েছে। কেননা অলস টাকা অপ্রয়োজনীয় খাতে চাহিদা সৃষ্টি করে মূল্যস্ফীতির হারকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। এ কারণে ব্যাংকের টাকা বিনিয়োগের বহুমুখী ক্ষেত্রে সৃষ্টির ওপর বৈঠকে তাগিদা দেয়া হয়েছে। বৈঠকে বলা হয়, ব্যাংকগুলোতে সাম্প্রতিক সময়ে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়েছে। ঋণ শ্রেণীকরণে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা না মেনে অনেক শ্রেণীকরণের যোগ্য ঋণকে নিয়মিত হিসাবে দেখাচ্ছে। ফলে খেলাপি ঋণের প্রকৃত চিত্র ফুটে উঠছে না। এ বিষয়েও ব্যাংকগুলোকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।  

No comments:

Post a Comment