রাজধানীর উত্তরায় কলেজছাত্রীকে অপহরণ ও নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন এক যুবক (২৬) গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে হাতিরঝিলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।ডিবি পুলিশ বলেছে, নিহত যুবক গিয়াস উদ্দিন ওরফে আপন ও শফিকুল ইসলাম ওরফে শফিক এ দুটি নাম ব্যবহার করতেন। ডিবি পুলিশ বলেছে, সম্প্রতি সাদা প্রিমিও গাড়ি দিয়ে ছিনতাই হওয়ায় বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে হাত
িরঝিলে ওই রকম একটি গাড়ি দেখে ডিবির টহল দলের সন্দেহ হয়।ডিবির দলটি গাড়িটিকে ধাওয়া করে।একপর্যায়ে গাড়িটি বাড্ডা থানা এলাকাসংলগ্ন হাতিরঝিলে ১ নম্বর সেতুর ঢালে গিয়ে থামে।ওই গাড়ি থেকে ডিবির সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়া হয়।জবাবে ডিবিও গুলি চালায়। একপর্যায়ে দু-তিনজন যুবক গাড়িটি থেকে নেমে দৌড়ে পালিয়ে যান।পরে গাড়িটির কাছে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় এক যুবক পড়ে আছেন।বাড্ডা থানার পুলিশকে খবর দেওয়া হলে ওই থানার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) নূর আলী মোল্লা ঘটনাস্থলে এসে গুলিবিদ্ধ যুবককে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে ভোর সাড়ে চারটার দিকে ওই যুবক চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ডিবি জানায়, ওই ঘটনায় ডিবির একজন এএসআই ও একজন কনস্টেবল আহত হন। তাঁরা রাজারবাগ পুলিশ লাইনস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, ওই যুবকের লাশ ঢাকা মেডিলেক কলেজ মর্গে রয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাসরিন সুলতানার তত্ত্বাবধানে আপনের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন বাড্ডা থানার এসআই জয়ন্ত কুমার মণ্ডল। সুরতহালে ‘গিয়াস উদ্দিন ওরফে শফিকুল ইসলাম শফিক ওরফে আখন্দ’ লেখা হয়েছে।সুরতহালে বলা হয়, নিহতের শরীরের সামনের অংশে আটটি ও পেছনের দিকে নয়টি ছিদ্র আছে। গতকাল রাত পৌনে আটটার দিকে মর্গে লাশ শনাক্ত করেন নিহত আপনের স্ত্রী মোছাম্মৎ জেসমিন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, তাঁদের চার বছরের এক মেয়ে আছে। তিন বছর আগে তাঁরা মিটফোর্ড এলাকায় থাকতেন। এর পর থেকে তাঁরা নোয়াখালীতে গ্রামের বাড়িতে থাকেন। তাঁর স্বামী গ্রামে মাছ চাষ করতেন। মাঝেমধ্যে ঢাকায় আসতেন।তিন দিন আগে তিনি ঢাকায় আসেন। তবে কেন এসেছেন, তা জানেন না। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে কথা হয়।এর পর থেকে তাঁর মুঠোফোন নম্বর বন্ধ। পরে টেলিভিশনে সংবাদ দেখে তিনি ঢাকায় এসেছেন। ডিবির (উত্তর) উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল সকালের দিকে ওই যুবকের নাম-পরিচয় জানা যায়। পরে নথিপত্র ঘেঁটে তাঁর বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলার সন্ধান মেলে। উত্তরার কলেজছাত্রী অপহরণ ও ধর্ষণ এবং নিরাপত্তাকর্মীকে হত্যার ঘটনা ছাড়াও আপনের বিরুদ্ধে হত্যা, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অভিযোগে অন্তত ১৫টি মামলা আছে। তাঁর বিরুদ্ধে উত্তরা, রামপুরা ও গুলশান এলাকায় ছিনতাই, অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তাঁর গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার পূর্ব চানপুরে। শেখ নাজমুল আলম আরও বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নিহত আপন ও তাঁর সহযোগীরা ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যেই সাদা প্রিমিও গাড়িতে করে ঘোরাঘুরি করছিলেন। ঘটনাস্থল থেকে ওই গাড়ি, একটি পিস্তল, দুটি গুলি, তিনটি গুলির খোসা ও তিনটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়। ৩ জুলাই রাত ১১টার দিকে উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টরে এক কলেজছাত্রীকে গাড়িতে তুলে অপহরণ করে দুর্বৃত্তরা। এতে বাধা দিলে নিরাপত্তাকর্মী লিয়াকত হোসেন ওরফে লিটনকে গুলি করে হত্যা করে তারা। অপহৃত ছাত্রীকে গাড়িতেই ধর্ষণ করে ভোররাতে উত্তরা এলাকায় নামিয়ে দেয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পুলিশ ছাত্রীটির পূর্বপরিচিত একজনকে গ্রেপ্তার করেছে। ডিবি জানায়, এ ঘটনায় নিহত আপন অন্যতম সন্দেহভাজন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত অন্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার উপকমিশনার মাসুদুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, গত দুই বছরে আপনকে একাধিকবার ডিবি গ্রেপ্তার করেছিল। ২০১০ সালে তিনি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে গিয়ে আদালত থেকে পালিয়ে যান। উত্তরার অপহরণের শিকার ছাত্রীকে আপনের ছবি ও লাশ দেখানো হয়েছে। ওই ছাত্রী নিশ্চিত করেছেন, আপন অপহরণের ঘটনায় জড়িত ছিলেন।
No comments:
Post a Comment