প্রবল জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারে ছোট ফেনী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ডান তীরের ১১০ কিলোমিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। জোয়ারের ফলে গত দুই সপ্তাহে নদীতীরবর্তী সহস্রাধিক বাড়ি, মসজিদ, মাদ্রাসা, মৎস্য খামারসহ কয়েক হাজার একর ফসলি জমি বিলীন হয়ে যায়। সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কোনো ধরনের ত্রাণ না পাওয়ায় ভাঙনকবলিত অসহায় পরিবারগুলো বর্তমানে বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়ে খোলা আকাশে
র নিচে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মুছাপুর স্লুইস গেটের ক্লোজার নির্মাণ করতে ব্যর্থ হওয়ায় পানি সরতে না পেরে প্রবল জোয়ারে নদীর তীরবর্তী ১১০ কিলোমিটার এলাকার ভাঙন ঠেকানো যাচ্ছে না। এ ছাড়া বেড়িবাঁধসংলগ্ন লোকালয়ে নোনা পানি প্রবেশ করে উপজেলার উপকূলীয় এলাকার জনগুরুত্বপূর্ণ রাস্তা-ঘাট, বেড়িবাঁধ ও স্লুইস গেট বিধ্বস্ত হয়েছে। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় জনগণ বারবার লিখিতভাবে অভিযোগ জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত দিদার আলম টিপু জানান, এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে কিছুদিনের মধ্যে কোম্পানীগঞ্জের বেশির ভাগ অংশ মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। নোয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজুল হাসান, উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম ও শাখা কর্মকর্তা আবু নাছের জানান, মুছাপুর রেগুলেটর চালু না হলে নদী ভাঙন অব্যাহত থাকবে। সংশোধিত ডিজাইন করে ফের আগামী বছর কাজ করা হবে। রিয়াজুল হাসান বলেন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের জন্য বারবার আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। বরাদ্দ পেলে তবেই ভাঙনকবলিত এলাকা রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সরেজমিন নদীভাঙন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বর্ষা মৌসুমে নদীর প্রবল জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের ফলে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার গুচ্ছগ্রাম রিং বাঁধ, বামনিয়া নদীর ডান তীর, লেংটার ঘাট, এলাহী ঘাট, ছোট ফেনী নদীর চরপার্বতী ও চরহাজারী এলাকার বেড়িবাঁধ এবং বামনি নদীর বেড়িবাঁধসহ ১১০ কিলোমিটার এলাকা ভেঙে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। প্রবল জোয়ারে ২০০৬-০৭ সালে চার কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত বামনি অতিরিক্ত স্লুইস গেটটি সম্পূর্ণ তলিয়ে যাওয়ায় হাসনা মওদুদ প্রাথমিক বিদ্যালয়, এলাহী মসজিদ, চর মওদুদ কিল্লা, সাইক্লোন শেল্টার, স্কুল, মসজিদ, মাদ্রাসা, মৎস্য খামার ও একটি গ্রাম সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত সকিনা বেগম জানান, ৬০ বছরে ওই এলাকায় এমন ভাঙন হয়নি। এবারের ভাঙনে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট বোন রোকেয়া বেগমের চরপার্বতী ইউনিয়নের কদমতলার বাড়িটি সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। খুব শিগগিরই ওই বাড়িসংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী কদমতলা উচ্চ বিদ্যালয়টিও নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার পথে। মুছাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক চৌধুরী বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ কোম্পানীগঞ্জে মুছাপুর রেগুলেটরের ক্লোজার ক্লোজ না করা পর্যন্ত জোয়ার-ভাটায় ভাঙন অব্যাহত থাকবে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় জরুরি পদক্ষেপ না নিলে কোম্পানীগঞ্জের উপকূলীয় এলাকার কয়েক হাজার একর ভূমি, বসতবাড়ী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ, বাজার, বিভিন্ন মৎস্য ও পোলট্রি খামার এ বর্ষা মৌসুমে নদী গর্ভে তলিয়ে যাবে। জানা গেছে, সাবেক স্থানীয় সংসদ সদস্য ও আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ক্ষমতায় থাকাকালীন মুছাপুর রেগুলেটরের ক্রস ড্যাম (নদীতে বাঁধ) করার জন্য ১৭ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পরবর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর ওই বরাদ্দ বার বার বৃদ্ধি করে বর্তমানে ৪৯ কোটি টাকা করা হলেও নদীতে বাঁধ দেওয়া সম্ভব হয়নি। ওই এলাকার সংসদ সদস্য ওবায়দুল কাদের বর্তমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও নদী ভাঙন রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
No comments:
Post a Comment