Sunday, July 20, 2014

অসন্তুষ্ট মির্জা আব্বাস, কর্মীদের দেখা দেননি:প্রথম অালো

নবগঠিত বিএনপির ঢাকা মহানগর কমিটি নিয়ে সন্তুষ্ট নন কমিটির আহ্বায়ক মির্জা আব্বাস। ঢাকায় বিএনপির রাজনীতিতে তাঁর দীর্ঘদিনের প্রতিপক্ষ সাদেক হোসেন খোকাকে নতুন কমিটিতে রাখা এবং এ কমিটির থানাভিত্তিক ৩৬ সদস্যের বেশির ভাগই খোকার অনুসারী হওয়ায় মির্জা আব্বাস কিছুটা ক্ষুব্ধ বলেও জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ একাধিক নেতা। এ ছাড়া স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে নতুন কমিটির সদস্যসচিব করা এবং খোকার
নেতৃত্বাধীন আগের কমিটির সদস্যসচিব আবদুস সালামকেও এ কমিটির উপদেষ্টা পদ দেওয়াটাও মির্জা আব্বাসের পছন্দ হয়নি বলে জানা গেছে। এ কারণেই তিনি গতকাল দলীয় নেতা-কর্মী ও গণমাধ্যমের সঙ্গে দেখা দেননি বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো বলছে। তবে হাবিব-উন-নবী খান সোহেল গতকাল দুপুরে আব্বাসের সঙ্গে বাসায় গিয়ে দেখা করেছেন। গত শুক্রবার রাতে মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক করে ৫৭ সদস্যের ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিকে আগামী দুই মাসের মধ্যে মহানগরের সব ওয়ার্ড ও থানা কমিটি গঠন করে মহানগরের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে হবে। এ কমিটি ঘোষণার পর গতকাল শাহজাহানপুরে মির্জা আব্বাসের বাড়ির সামনে দলের অনেক নেতা-কর্মী ভিড় করেন। কিন্তু তাঁরা মির্জা আব্বাসের দেখা পাননি। এমনকি গণমাধ্যমকর্মীরা দীর্ঘ সময় সেখানে অপেক্ষা করলেও মির্জা আব্বাস কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তাঁর পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের বলা হয়েছে, একটু গুছিয়ে নিয়ে তারপর তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেছেন, মির্জা আব্বাস মনে করেন, এ কমিটি নিয়ে তাঁর পক্ষে কাজ করা কঠিন হবে। ওই নেতা আরও জানান, গত বৃহস্পতিবার রাতে দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যখন কমিটি চূড়ান্ত করেন, তখন কমিটির সদস্যসংখ্যা ছিল ৩১ জন। তাতে সাদেক হোসেন খোকা ও আবদুস সালামের নাম ছিল না। ওই দিন পর্যন্ত সদস্যসচিব পদে কারও নাম ছিল না। পরে কমিটির আকার বৃদ্ধির বিষয়টি মির্জা আব্বাস জানতেন না। অবশ্য দলের অপর একটি সূত্র জানায়, নতুন আহ্বায়ক কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ২১ সদস্যের মধ্যে চারজন বাদে বাকি সবাই মির্জা আব্বাসের ঘনিষ্ঠ। এঁদের মধ্যে সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুম, নাসির উদ্দীন আহাম্মেদ পিন্টু, সালাউদ্দিন আহমেদ, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, আমান উল্লাহ, বরকত উল্লা অন্যতম। তবে কমিটির বিভিন্ন থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত ৩৬ সদস্যের মধ্যে বেশির ভাগই সাদেক হোসেন খোকার অনুসারী। সাদেক হোসেন খোকা বিভিন্ন পদে থেকে ১৬ বছর ধরে ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন। ৫ জানুয়ারি নির্বাচন প্রতিহত করার আন্দোলনে ঢাকায় নেতা-কর্মীদের নামাতে না পারার ব্যর্থতার দায় চাপিয়ে খোকার নেতৃত্বাধীন কমিটি ভেঙে দেওয়া হলো। অবশ্য এ জন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে ছয় মাস সময় নিতে হয়েছে। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, সরকারবিরোধী আন্দোলন সামনে রেখে দল পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নতুন মহানগর কমিটি দলকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি জনগনের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে পারবে। দলের দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, সরকার বা আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক নেই, এমন নেতাদের বিএনপির ঢাকা মহানগরের নতুন কমিটিকে স্থান দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে সরকারের সঙ্গে আঁতাতের অভিযোগ না ওঠে, সে জন্য এটা করা হয়েছে। একই সঙ্গে দলের অন্তঃকোন্দল নিরসনও ছিল অন্যতম লক্ষ্য। এ জন্য আগের কমিটির সমালোচনায় মুখর ছিলেন, এমন প্রায় সব নেতাকেই নতুন কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে আন্দোলন নিয়ে কেউ যেন কারও ওপর দায় চাপাতে না পারে, সে জন্য আগের কমিটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরও এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

No comments:

Post a Comment