২২ জুলাই লন্ডনে অনুষ্ঠেয় গার্ল সামিটের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতার বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি এতে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি গুরুত্ব পেতে পারে। ঢাকা ও লন্ডনের কূটনৈতিক সূত্র গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে এ তথ্য জানিয়েছে। যুক্তরাজ্য ও জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিলের (ইউনিসেফ) আয়োজনে গার্ল
সামিটে অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাল সোমবার চার দিনের সফরে যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন। ২২ জুলাই লন্ডনে দিনব্যাপী ওই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, লন্ডনের ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মঙ্গলবার সকালে শেখ হাসিনা ও ডেভিড ক্যামেরনের আনুষ্ঠানিক বৈঠকটি হবে। খসড়া সময়সূচি অনুযায়ী বৈঠকের ব্যাপ্তি হবে ৩০ মিনিট। ওই বৈঠকের পর দুই নেতা অংশ নেবেন গার্ল সামিটে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বিপক্ষীয় শীর্ষ বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দুই দেশের বাণিজ্য সম্প্রসারণ ও বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হবে। এ ছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলাসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরসঙ্গী হিসেবে যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ। খসড়া সফরসূচি অনুযায়ী, লন্ডন সফরের সময় দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও গার্ল সামিটে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিকদের সমাবেশ এবং একটি ইফতার অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। জানা গেছে, এ মাসের শুরুতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ও ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্টনি লেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গার্ল সামিটে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানান। আমন্ত্রণ পাওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে যুক্তরাজ্যের কাছে জানতে চাওয়া হয় নারীবিষয়ক এ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার ফাঁকে অন্য কোনো কর্মসূচি রয়েছে কি না। কারণ, ওই সম্মেলনে সহ-আয়োজক যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত না থাকায় সেখানে যোগ দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর জন্য কতটা সমীচীন হবে, তা নিয়ে সরকারের মধ্যে দ্বিধা ছিল। বাংলাদেশের মনোভাব ছিল, সম্মেলনের ফাঁকে একটি দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হলে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরের বিশেষ তাৎপর্য থাকে। বিশেষ করে, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন, চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র নিয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আলোচনা হলে সরকার স্পষ্টভাবে এসব বিষয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে পারবে। কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরদিন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় (তখনকার) জোটের বর্জনে অনুষ্ঠিত ওই একতরফা নির্বাচনের সমালোচনা করেছে যুক্তরাজ্য। এর চার মাস পর অবশ্য যুক্তরাজ্যের অবস্থান দৃশ্যত বদলায়। গত এপ্রিলে ঢাকা সফরের সময় ব্রিটিশ আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান উল্লেখ করেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন অস্বাভাবিক হলেও বৈধ। তবে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে ‘যথার্থ গণতন্ত্র’ দেখতে আগ্রহী এবং জনগণের প্রয়োজনের বিষয়টিতে গুরুত্ব দিয়ে তাঁর দেশ বর্তমান সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের ব্যাপারে বাংলাদেশের আগ্রহের বিষয়টি বুঝতে পেরে যুক্তরাজ্য বিষয়টিকে বিবেচনায় নেয়। গত সপ্তাহে ওই বৈঠক আয়োজনের বিষয় নিশ্চিত করে তারা বাংলাদেশকে অবহিত করে। প্রসঙ্গত, ২০০৯ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার সময় তিনবার যুক্তরাজ্য সফর করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে তিনি দ্বিপক্ষীয় সফর করেন। এরপর ২০১২ সালের জুলাইতে লন্ডন অলিম্পিক এবং ২০১৩ সালের জুলাইতে ব্যক্তিগত কারণে যুক্তরাজ্য গিয়েছিলেন তিনি। গার্ল সামিট: বাসস জানায়, বাল্যবিবাহ ও নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করায় নিজেদের গৃহীত বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপের কথা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরার জন্য ‘গার্ল সামিট’-এ অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সম্মেলনে বাংলাদেশের নারীদের বাল্যবিবাহের হার ক্রমেই কমার চিত্র এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অগ্রগতি ও সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরবেন। অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিকভাবে গতিশীল পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ‘নারীর যৌনাঙ্গ কর্তন এবং নারীর জোরপূর্বক ও বাল্যবিবাহ নির্মূল’-কে মূল প্রতিপাদ্য ধরে বিশ্বের প্রথম গার্ল সামিট আয়োজন করছে যুক্তরাজ্য ও ইউনিসেফ।
No comments:
Post a Comment