Friday, July 11, 2014

সিআইডি তদন্তের পরিবর্তে অনুসন্ধান করবে:প্রথম অালো

নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণ ও খুনের মামলা তদন্তের পরিবর্তে অনুসন্ধান করবে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট তাঁর আগের আদেশে শব্দগত সংশোধন করে বলেন, সিআইডির তদন্তের (ইনভেস্টিগেশন) জায়গায় অনুসন্ধান (ইনকোয়ারি) হবে। এ মামলার তদন্ত কার্যক্রম থেকে সিআইডিকে বাদ দিতে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন খারিজ করে গতকাল বিচারপতি মো. রেজাউল হক ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠি
ত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। তবে এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। হাইকোর্টের নির্দেশে গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) পাশাপাশি সিআইডি এই মামলার তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছে। ওই আদেশের সিআইডির তদন্ত-সংক্রান্ত অংশটুকু সংশোধন চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ গত সোমবার আবেদনটি করে। গতকাল আদালত বলেন, ডিবি মামলার নিয়মিত তদন্ত করে অভিযোগপত্র দেবে। সিআইডি ও অন্যরা অনুসন্ধান করে এই আদালতে প্রতিবেদন দেবে। প্রতিবেদন পর্যালোচনায় যদি অতিরিক্ত কোনো তথ্য বা ডকুমেন্ট আসে, তা প্রমাণ (এভিডেন্স) হিসেবে মূল প্রতিবেদনে যোগ করা যাবে কি না, সে বিষয়ে প্রয়োজনে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে। গতকাল বিবাদীদের কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের ধার্য দিনে শুনানির শুরুতে অ্যাটর্নি জেনারেল সিআইডিকে তদন্ত কার্যক্রম থেকে বাদ দেওয়ার আবেদন উপস্থাপন করেন। আদালত অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে বলেন। পরে র্যাব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, সিআইডি ও সরকারি তদন্ত কমিটির পাঠানো অগ্রগতি প্রতিবেদন পর্যায়ক্রমে উপস্থাপন করেন অ্যাটর্নি জেনারেল। এরপর শুনানিতে তিনি বলেন, আইন অনুযায়ী একটি মামলায় দুটি সংস্থা তদন্ত করতে পারে না। তাই সিআইডিকে বাদ দেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। আদালত বলেন, কোনো অগ্রগতি প্রতিবেদনে কোনো সংস্থার তদন্ত করতে অসুবিধা হচ্ছে, তা বলা হয়নি। ডিবি আর সিআইডির প্রধান তো একই ব্যক্তি। অভিযোগপত্র হবে একটি। মামলার তদন্ত কর্মকর্তার প্রতি কোনো নির্দেশ দেওয়া হয়নি, কোনো প্রতিবেদন দিতেও বলা হয়নি। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সিআইডিকে তদন্তের জন্য প্রথম যখন আদালত আদেশ দেন, ওই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গিয়েছিলাম। আপিল বিভাগ হাইকোর্টে আবেদন দিতে বলেন। সেই অনুযায়ী আবেদন দেওয়া হয়। একপর্যায়ে আদালত বলেন, আপনি যে আবেদন করেছেন, তাতে সরকারের বা কোনো মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা দেখতে পাচ্ছি না। কোনো কর্তৃপক্ষ ছাড়া অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় আবেদন করতে পারে কি? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমার সঙ্গে কথা হয়েছে। আদালত বলেন, আপনি আইনগত প্রশ্ন তুলেছেন। এ কারণে আইনের কথা বলছি। আদালত বলেন, আপনি কি পুরো আদেশ সংশোধন চান, নাকি সিআইডির অংশটুকু? পত্রিকায় এসেছে, সিআইডিকে যেন প্রত্যাহার না করা হয়। কয়েকটি চাঞ্চল্যকর মামলার প্রসঙ্গ দিয়ে প্রতিবেদনে ডিবির সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। একপর্যায়ে মাহবুবে আলম বলেন, কে কী বলল, সেটা দেখার বিষয় নয়। আইনে কী আছে, তা দেখতে হবে। ইতিপূর্বে আদালতে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থাপনকারী আইনজীবী শামীম সরদার এরপর বলেন, আইনগতভাবে সিআইডি তদন্ত করতে পারে। তদন্ত কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করতে আদালত যেকোনো আদেশ দিতে পারেন। আদেশ আইনগত হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যাখ্যার জন্য আদালত জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ দিতে পারেন। পরে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ এস এম নাজমুল হক শুনানি করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন গত ৫ মে শামীম সরদার আদালতের নজরে আনার পর এই বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত রুলের পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। কার্যক্রম বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে আদালতে দাখিল করতে বিবাদীদের নির্দেশ দেওয়া হয়। অগ্রগতি প্রতিবেদন: গতকাল অ্যাটর্নি জেনারেলের উপস্থাপন করা র্যাবের অগ্রগতি প্রতিবেদন বলা হয়, এ পর্যন্ত র্যাব সদস্যসহ মোট ৮০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আরও কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। এ জন্য অন্তত দুই সপ্তাহ সময় দরকার। সিআইডির প্রতিবেদন অনুসারে, এ মামলায় ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে চারজন ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনজন সাক্ষীও জবানবন্দি দিয়েছেন। এসব জবানবন্দি সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। সরকারি তদন্ত কমিটির অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পর্যন্ত ৩৫০ জনের বক্তব্য নেওয়া হয়েছে। যে তিনজন র্যাব সদস্য ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন, তাঁদের কারাফটকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। প্রাপ্ত তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। আরও তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহের জন্য চার সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। গত ২৭ এপ্রিল দুপুরে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র ও কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, জ্যেষ্ঠ আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ৩০ এপ্রিল তাঁদের মধ্যে ছয়জনের এবং পরদিন একজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।

No comments:

Post a Comment