Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Sunday, July 6, 2014
দুর্ভোগের শহর ঢাকা, দেখার কেউ নেই:প্রথম অালো
‘অধিক সেবার’ কথা বলে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) দুই ভাগ করা হলেও সেবা বাড়েনি। উল্টো বেড়েছে জনদুর্ভোগ, সমস্যা ও হয়রানি। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর ডিসিসি বিভক্ত হওয়ার আড়াই বছর পরও নির্বাচন পর্যন্ত হয়নি। ফলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও নেই, যাঁর কাছে নগরবাসী দুঃখ-কষ্টের কথা জানাতে পারেন। গতকাল শনিবার সকালের ভারী বর্ষণে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায়। নিউমার্কেট, আজিমপুর, লালবাগ, মিরপুর, সেনপাড়া পর্বতা, মালিবাগ, রাজারবাগ, রামপুরা, বাড্ডা, যাত্রাবাড়ী, শান্তিনগর, শাহজাহানপুর, গ্রিন রোডসহ বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। কোনো কোনো এলাকায় দোকানপাট ও বাড়িঘরেও পানি ঢুকে পড়ে। একটু বৃষ্টিতেই পানি জমে যাওয়ার কারণে অলিগলির রাস্তাগুলো বেহাল হয়ে পড়ছে। মিরপুরের রূপনগর, দুয়ারীপাড়া, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, মণিপুর এবং মগবাজার, পুরান ঢাকা ও গুলশানের বিভিন্ন এলাকার রাস্তাগুলো এবড়োখেবড়ো হয়ে গেছে। মগবাজার এলাকায় ফ্লাইওভারের কাজ চলায় রাস্তায় বড় বড় গর্ত হয়ে দুর্ভোগ বেড়েছে। নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের সরকার বা কর্তৃপক্ষ মনে হয় নগরবাসীকে কষ্ট দিতে আনন্দ পায়। না হলে মেগাসিটি বলা হয় যে শহরকে, সেই শহরে এত অব্যবস্থাপনা থাকে কী করে? সবচেয়ে আশঙ্কার কথা হলো, দিন দিন এটা আরও খারাপ হচ্ছে। কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনা নেই। আগে সিটি করপোরেশনের মেয়র ছিলেন। খারাপ হোক, ভালো হোক, মানুষ কথা বলতে পারতেন। এখন প্রশাসকের নামও অনেকে জানেন না। রাজউক কিছু পরিকল্পনা করলেও বাস্তবায়ন করতে পারে না। ওয়াসার কাজ ছিল সুচারুভাবে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তারা সেটাও পারছে না। আর ফ্লাইওভারগুলো যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। এর মাধ্যমে কিছু লোকের টাকা হচ্ছে। কিন্তু জনগণের কোনো উপকার হচ্ছে না।’ জলাবদ্ধতা নিয়ে সমন্বয়হীনতা: সিটি করপোরেশন ও ঢাকা ওয়াসার মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে জলাবদ্ধতা এখন নিয়মিত দুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। রাজধানীর রাস্তাগুলো দেখভাল করে সিটি করপোরেশন। কিন্তু রাস্তার পানি সরানোর কাজটি করে ঢাকা ওয়াসা। অথচ এই দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয় নেই। রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে গত চার বছরে ৩০২ কোটি খরচ করা হলেও সমস্যা কমেনি। সমন্বয়হীনতার প্রমাণ মেলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ইব্রাহিম হোসেন খানের কথাতেও। রাজধানীবাসীর বিভিন্ন সমস্যার কথা জানতে চাইলে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজটি করে ঢাকা ওয়াসা। যে জায়গা দিয়ে পানি যায়, সেই পথ সরু করার কারণে এই সমস্যা বেড়েছে। আর রাস্তাঘাট সংস্কার না হওয়ার পেছনে অর্থের অভাবকে দায়ী করেন তিনি। অন্যদিকে কিছু এলাকার রাস্তাঘাট খারাপ থাকার বিষয়টি স্বীকার করে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক ফারুক জলিল প্রথম আলোকে বলেন, পরশু (সোমবার) তাঁদের বাজেট ঘোষণা করা হবে। সেই বাজেটের পর ভাঙা রাস্তাগুলো সংস্কার করা হবে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তাকসিন এ খান এই জলাবদ্ধতাকে ‘জলজট’ হিসেবে উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, রাজধানীর পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক পথগুলো বন্ধ করে ফেলা হয়েছে। এখন কৃত্রিম উপায়ে পানি সরানো হচ্ছে। ফলে বৃষ্টি হলে ‘জলজট’ কমতে কিছু সময় লাগবেই। ওয়াসার এমডির এই বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন পানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী ম. ইনামুল হক। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ওয়াসার কাজ পানি সরবরাহ ও শোধন করা। কিন্তু সেটাকে জোর না দিয়ে তাঁরা ড্রেনেজ ব্যবস্থার কাজ করছে। কিন্তু তাদের সেই যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নেই। ফলে লেজেগোবরে অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। আইনানুযায়ী এ কাজ করার কথা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (এক হাজার হেক্টরের বেশি হলে পানি উন্নয়ন বোর্ড করার কথা)। কোথায় খাল কাটাসহ কোথায় কী দরকার, সেটা নকশা করে করতে পারত পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু সেটা না হওয়ায় এই সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি না থাকায় জবাবদিহি নেই: শুধু রাস্তাঘাটের করুণ চিত্রই নয়, সিটি করপোরেশনের অধীন জন্ম, মৃত্যু, নাগরিক সনদ, ট্রেড লাইসেন্সসহ বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে হয়রানি বেড়েছে। কিন্তু নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় জবাবদিহিও নেই। অথচ মেয়াদ শেষ হওয়ার সাত বছর হতে চললেও নির্বাচনের উদ্যোগ নেই ঢাকা সিটি করপোরেশনের। এর মধ্যে ডিসিসিকে দুই ভাগ করে আমলাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে সময় পার করা হচ্ছে। আড়াই বছরে দুই করপোরেশনে ছয়জন করে ১২ জন প্রশাসক আসেন আর যান। এঁদের দু্জনের মেয়াদ ছিল মাত্র ছয়-সাত দিন। স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, যে উদ্দেশ্যে সিটি করপোরেশনকে ভাগ করা হয়েছিল, তা সফল হয়নি; বরং নির্বাচন না হওয়ায় এখন আমলাতন্ত্র আরও জোরদার হয়েছে। সেবা গৌণ হয়ে গেছে। করপোরেশন বলে কিছু আছে, সেটা মানুষ ভুলে যাচ্ছে। মূলত রাজনৈতিক কারণেই সিটি করপোরেশন ভাগ করা হয়েছিল, আবার একই কারণে নির্বাচনও হচ্ছে না। স্থানীয় সরকার বিভাগের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, আপাতত নির্বাচনের সম্ভাবনাও নেই। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের একটি পক্ষ আমলাদের পরিবর্তে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রশাসক নিয়োগের চেষ্টা করলেও সেটি আপাতত থেমে গেছে। ডিসিসি নির্বাচনের কোনো উদ্যোগ আছে কি না, জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক সম্প্রতি প্রথম আলোকে বলেন ‘কোনো উদ্যোগ নেই। আর উদ্যোগ নেব কীভাবে? সরকার তো সীমানা পুনর্নির্ধারণ করে দিতে পারেনি।’ অভিযোগ উঠেছে, মূলত রাজনৈতিক কারণেই সীমানা নির্ধারণসংক্রান্ত জটিলতার নাম করে সরকার নির্বাচন আটকে রেখেছে। স্থানীয় সরকার বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের সূত্রগুলো বলছে, মূলত সরকার চাইছে না বলেই নির্বাচন হচ্ছে না। একে তো আওয়ামী লীগের ভালো প্রার্থীর অভাব, তার ওপর নির্বাচনে হেরে যাওয়ার আশঙ্কা। এ জন্যই মূলত সরকার নির্বাচন করতে চাইছে না। ডিসিসির সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০০২ সালে। মেয়াদ শেষ হয় ২০০৭ সালে। মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও নির্বাচন না করে উল্টো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন বিগত মহাজোট সরকার ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর ডিসিসিকে দুই ভাগ করে। আইন অনুযায়ী ১৮০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসকও বদল হচ্ছে। সর্বশেষ গত ১৮ মে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ফারুক জলিলকে উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক এবং গত মাসে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইব্রাহিম খানকে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক করা হয়। এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো প্রশাসক বদল হলো। এর মধ্যে একবার প্রশাসক নিয়োগ করার কয়েক দিনের মধ্যেই প্রশাসক পরিবর্তন করা হয়েছিল। সিটি করপোরেশনের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, নির্বাচন না হওয়ায় করপোরেশনের প্রশাসক হয়ে যিনি আসেন, তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই বিদায় নেন। ফলে কাজের কাজ কিছুই হয় না। প্রশাসকেরা শুধু রুটিন কাজ করেই নির্ধারিত সময় পার করেন। দক্ষিণের বর্তমান প্রশাসকের কথাতেও বিষয়টি ফুটে ওঠে। তিনি বলেন, হয়তো কেউ উদ্যোগ নেননি, তাই কাজ হয়নি। তবে তিনি যত দিন থাকবেন তত দিন কাজ করে যাবেন। দক্ষিণে সিটিতে অর্থের অভাব: সিটি করপোরেশনের সূত্রমতে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে এখন অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। এর ফলে কাজকর্মে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। মামলা-মোকদ্দমার কারণে বিভিন্ন মার্কেট থেকে আয়ের পথও বন্ধ হয়ে গেছে। এ বিষয়ে প্রশাসক বলেন, প্রায় ২০০ কোটি টাকার কাজের বিল দেওয়া যাচ্ছে না। তবে চেষ্টা চলছে অর্থসংকট কাটানোর।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment