বাছাই পর্বে ৯ গোল। ম্যাচপ্রতি গোল গড়ও মন্দ নয়। এর পরও ব্রাজিলে অচেনা গনজালো হিগুয়েন।
গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচে তাকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি। শেষ ষোলোয়
সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে তাকে দেখা গেল মাঝে মধ্যে। অল্পের জন্য গোলবঞ্চিতও
হন। এরই মধ্যে তাকে নিয়ে সমালোচনাও পৌঁছে যায় তুঙ্গে। তবে আর্জেন্টাইন
কোচ অ্যালেহান্দ্রো সাবেয়া ঠিকই আস্থা রাখেন হিগুয়েনের ওপর। মহামূল্যবান
‘এক’ গোল করেই তিনি নিন্দুকেদের মুখ বন্ধ করতে বাধ্য করলেন। নেপোলি
স্ট্রাইকারের কল্যাণেই আর্জেন্টিনা এখন উৎসবের দেশ। দীর্ঘ ২৪ বছর অপেক্ষার
পর তারা উঠল বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে।
কিংবদন্তি দিয়েগো ম্যারাডোনা যুগের পর ফুটবলের বিশ্বমঞ্চে
আর্জেন্টাইনদের অর্জন একেবারেই নগণ্য। নব্বইয়ের ফাইনালের পর ‘শেষ আট’
দেশটির সর্বোচ্চ সাফল্য। কখনোই কোয়ার্টার ফাইনালের বাধা পেরোতে পারেনি
তারা। গতকাল ব্রাসিলিয়া স্টেডিয়ামে ফুটবলপাগল দেশটিকে দুই যুগ পর
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার আনন্দে মাতান হিগুয়েন। তার একমাত্র গোলেই
কোয়ার্টার ফাইনালে আর্জেন্টিনা ১-০ গোলে হারিয়ে দেয় বেলজিয়ামকে। ম্যাচের
অষ্টম মিনিটে ডি-বক্সের সামান্য বাইরে থেকে দর্শনীয় ভলিতে ব্রাজিল
বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোল করেন হিগুয়েন। শেষ পর্যন্ত তার ক্যারিয়ারের ২১তম
এই গোলের লিড ধরে রেখেই মাঠ ছাড়ল আর্জেন্টিনা।
প্রথমে পিছিয়ে পড়া বেলজিয়াম দ্বিতীয়ার্ধে চমৎকার খেলেও কোনো গোলের
দেখা পায়নি। তাদের প্রতিটি আক্রমণই আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগে গিয়ে প্রতিহত
হয়। প্রথমার্ধে ডি মারিয়া ইনজুরি নিয়ে মাঠ ছাড়ায় দ্বিতীয়ার্ধের পুরো সময়টা
কাউন্টার অ্যাটাক নির্ভর খেলতে বাধ্য হয় ল্যাটিন আমেরিকার দলটি। এবং
ব্যবধান বাড়ানোর সুযোগও সৃষ্টি করে। তবে কাজে লাগাতে পারেনি। ক্রসবার
হিগুয়েনকে ম্যাচে দ্বিতীয় গোল পাওয়া থেকে বঞ্চিত করে। ৫৫ মিনিটে দলীয়
কাউন্টার অ্যাটাক থেকে বল পেয়ে তিনি চমৎকার শট নেন বেলজীয় গোলপোস্টে।
গোলরক্ষক পরাজিত হলেও হিগুয়েনের শট প্রতিহত হয় ক্রসবারে লেগে। ইনজুরি
টাইমে মেসি গোল করার চমৎকার সুযোগ নষ্ট করেন। ফলে ন্যূনতম ব্যবধানের জয়েই
সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে আর্জেন্টাইনদের। বিশ্বকাপে ইউরোপীয় দলগুলোর বিপক্ষে
৫০তম ম্যাচে এটা তাদের ২২তম জয়। ল্যাটিনের দলটির কাছে হেরেই টুর্নামেন্টের
ডার্ক হর্স বেলজিয়ামের ব্রাজিল মিশন সমাপ্ত হলো।
প্রথম একাদশ নির্বাচনেও ঝামেলা পোহাতে হয় আর্জেন্টিনাকে। মার্কোস
রহোর সাসপেনশনে মার্টিন ডেমিকেসিল প্রথমবারের মতো শুরুর দলে অন্তর্ভুক্ত
হন। তবে গ্যাগোকে বেঞ্চে রেখে সবাইকে অবাক করেন আর্জেন্টাইন কোচ সাবেয়া।
সুযোগ দেন কম অভিজ্ঞ লুকাস বিগলিয়াকে। সতর্কতার সাথেই খেলা শুরু করে দুই
দল। বল পজিশনেই সব মনোযোগ দেয় দুই বারের চ্যাম্পিয়নেরা। ছোটো-ছোটো পাসে
শৈল্পিক ফুটবল খেলে দর্শকদের শরীরে শিহরণ তোলেন মেসি অ্যান্ড কোং। এরই
ধারাবাহিকতায় খেলা জমে ওঠার আগেই লিডও পেলেন তারা।
মেসি ও ডি মারিয়ার ওয়ান-টু-ওয়ান পাস থেকে গোল করেন হিগুয়েন। অবশ্য,
ভাগ্যের সহায়তা পেলেন নেপোলির এই স্ট্রাইকার। ডি মারিয়ার ক্রস বেলজিয়ামের
ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে ফাঁকায় থাকা হিগুয়েনের সামনে পড়ে। শূন্যে ভাসমান বলে
দর্শনীয় ভলিতে গোল করেন রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক এই স্ট্রাইকার। তার গোলের
সাথে সাথেই উৎসবে মেতে উঠে আর্জেন্টাইন ভক্তরা। প্রথমার্ধেই ব্যবধান
বাড়ানোর সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি ল্যাটিন আমেরিকার দলটি। কয়েকটি হাফ
চান্স পেলেও তা গোলে পরিণত করতে ব্যর্থ হন ল্যাভেজ্জ্বি। ডি-বক্সের
সামান্য বাইরে থেকে মেসির চমৎকার ফ্রি-কিকও ক্রসবার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়।
বিরতির দুই মিনিট আগে অল্পের জন্য গোলবঞ্চিত হয় বেলজিয়াম। আর্জেন্টাইন
ডি-বক্সের মধ্য থেকে নেয়া মিরালেসের দুর্দান্ত হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ফলে
লিড অুণœ রেখেই ড্রেসিংরুমে ফিরতে সক্ষম হয় আর্জেন্টিনা।
No comments:
Post a Comment