ঈদ ঘনিয়ে আসার পর এত দিনে বেহাল মহাসড়ক মেরামতে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। মন্ত্রীসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের পরিদর্শন উপলক্ষে কাজের গতি বেড়েছে। তবে আগের মতোই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইট-বালু-খোয়ার সংমিশ্রণে জোড়াতালির মেরামত চলছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও ঠিকাদারেরা জানিয়েছেন, এই মেরামতকাজ সাময়িক এবং কোনোরকমে পরিবহনব্যবস্থা চালু রাখার কৌশল। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের গতকাল শনিবার বেহাল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর
িদর্শনে যান। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পরিদর্শনে যান যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ এন সিদ্দিক। সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী যান ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে, যে সড়কটি দিয়ে গোটা উত্তরবঙ্গ অভিমুখী যান চলে। তিনজনের সঙ্গেই পরিবহন মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন ও সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এ সময় সাংবাদিকদের বলেছেন, ২০ জুলাইয়ের মধ্যে ভাঙা সড়ক মেরামত হবে। ঈদে মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করার সব প্রস্তুতি চলছে। পরিদর্শনে অংশ নেওয়া একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের অন্তত ২০টি স্থানে অবস্থা খারাপ পাওয়া যায়। এর মধ্যে সীতাকুণ্ডেরই অন্তত পাঁচটি স্থানে গতকাল শনিবারও গর্ত ছিল। কিছু গর্ত ইট-বালু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অন্তত ১৪টি স্থানের অবস্থা খুবই বেহাল। এসব নাজুক অংশের দৈর্ঘ্য ২০০ মিটার থেকে এক কিলোমিটার পর্যন্ত। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে—মাওনা, ভালুকা বাসস্ট্যান্ড, ত্রিশাল, ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড হাসপাতালের সামনের অংশ। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও বাইপাইল, চান্দরাসহ অন্তত ১০-১২টি স্থানে ভাঙাচোরা দেখা গেছে। এসব স্থানে ইট-বালু-খোয়ার মেরামত চলছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন সমিতির সভাপতি আবুল কালাম ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘টানা কয়েক দিন মেরামত করলে যান চলাচলের উপযোগী করা যাবে। তবে বৃষ্টি হলেই সবশেষ। তাই মেরামতও করতে হবে এবং বৃষ্টি না হওয়ার জন্য দোয়া করতে হবে।’ আমাদের সীতাকুণ্ড (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি জানান, যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বেহাল মহাসড়ক পরিদর্শনে আসছেন—এমন খবর পেয়ে সীতাকুণ্ড অংশের মেরামতে তৎপর হয়ে ওঠেন সওজের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এখানে মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। যোগাযোগমন্ত্রী মহাসড়ক পরিদর্শনে এলেও সীতাকুণ্ড অংশের খানাখন্দের কোথাও নামেননি। সওজের কর্মকর্তারা তাঁকে সীতাকুণ্ড পৌর সদর এলাকায় পুরোনো মহাসড়কের খানাখন্দের ওপর দিয়ে না নিয়ে সম্প্রসারিত চার লেন (বাইপাস) দিয়ে নিয়ে যান। মন্ত্রী যখন মহাসড়ক পরিদর্শন করেন, তখন পুরোনো অংশের গর্তে চাকা ফেটে একটি ট্রাক নষ্ট হয়ে পড়ে ছিল। যোগাযোগমন্ত্রী সীতাকুণ্ডে পৌঁছানোর আগে কুমিরা রয়েল গেট থেকে চট্টগ্রাম নগরের সিটিগেট, বারআউলিয়া, মাদামবিবিরহাট এলাকায় সংস্কারের কাজ করতে দেখা যায়। এখানে মেরামতের কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড। কুমিরা থেকে বড় দারোগাহাট পর্যন্ত অংশের চার লেনের কাজ করছে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিনোহাইড্রো। কিন্তু তারা খানাখন্দ মেরামত করছে না। সওজের অনুরোধে তাহের ব্রাদার্সের কর্মচারীরা এ অংশে সাময়িক সংস্কার হিসেবে আস্ত ইটের ওপর বালু বিছিয়ে দেন। সংস্কারকাজে যুক্ত কর্মীরা বলেন, কোনোরকমে গর্ত ঢাকতে এই কাজ করা হচ্ছে। বৃষ্টি হলে তা টিকবে না। এই কাজের সুপারভাইজার এন কে নাথ বলেন, মন্ত্রী আসছেন বলে তাঁরা কাজ করছেন। এটি তাঁদের দায়িত্বের বাইরের কাজ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সওজের কর্মকর্তা মাসুদ করিম বলেন, মন্ত্রী আসা উপলক্ষে নয়, ৬ জুলাই থেকেই তাঁদের সংস্কারকাজ চলছে। কুমিরা থেকে চট্টগ্রাম সিটিগেট পর্যন্ত ৯০ শতাংশ খানাখন্দ মেরামত হয়ে গেছে। বাকি ১০ শতাংশের কাজ চলছে। কুমিল্লার নিজস্ব প্রতিবেদক ও দাউদকান্দি প্রতিনিধি জানান, যোগাযোগমন্ত্রী দাউদকান্দির মেঘনা-গোমতী সেতুর টোলপ্লাজা ও পদুয়ারবাজার বিশ্বরোড রেলক্রসিংসহ বিভিন্ন স্থানে নেমে সংস্কারকাজ পরিদর্শন করেন। গাজীপুর ও ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, সকালে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব এম এ এন সিদ্দিক ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের অবস্থা দেখতে যান। তিনি মহাসড়কের গাজীপুর অংশের টঙ্গী, চান্দনা চৌরাস্তা, মাওনা এবং ময়মনসিংহ অংশের ভালুকা, ত্রিশাল ও ময়মনসিংহ সদরের বিভিন্ন স্থানে নেমে সংস্কারের কাজ দেখেন। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন অতিরিক্ত সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী। এ সময় মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে একই রকম ইট-বালু-খোয়ার মেরামত চলতে দেখা গেছে। মন্ত্রী-সচিবেরা যা বলেন: পদুয়ারবাজার ও দাউদকান্দিতে যোগাযোগমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০ জুলাইয়ের মধ্যে দেশের সব মহাসড়ক যান চলাচলের উপযোগী করা হবে। ঈদ পর্যন্ত ১৬টি ভ্রাম্যমাণ দল কাজ করবে। কুমিল্লা, ফেনী ও চট্টগ্রামে মহাসড়কে যে উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হচ্ছে, তার কাজ ঈদ উপলক্ষে তিন দিন বন্ধ থাকবে। মন্ত্রী দাবি করেন, মহাসড়ক নিয়ে যতটা আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে বাস্তবে অবস্থা তেমন নয়। কেবল সীতাকুণ্ডে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় খানাখন্দ সৃষ্টি হয়েছে। সওজের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি, বাদল ও ঝড়ের কোনো অভিযোগ শুনব না। মহাসড়ক নিয়ে সমালোচনা হয়েছে বলে কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তৎপর আছেন।’ যোগাযোগমন্ত্রী বলেন, মহাসড়ক দখল করে যাঁরা দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিয়ে বসে আছেন, তাঁদের উচ্ছেদ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করা চলবে না। আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের নেতা-কর্মী যদি তদবির করতে আসেন, তাও না শুনতে পুলিশকে পরামর্শ দেন তিনি। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পরিদর্শনকালে যোগাযোগসচিব সাংবাদিকদের বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে যেতে পারেন, তার জন্য সব রকমের উদ্যোগ নেওয়া হবে। আমাদের টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, টাঙ্গাইলের পৌলী সেতু ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় পাশের বেইলি সেতু দিয়ে যানবাহন চালানোর নির্দেশ দেন অতিরিক্ত সচিব ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী।
No comments:
Post a Comment