Monday, August 18, 2014

মানুষ মানুষের জন্য:প্রথম অালো

ওমানে চিকিৎসাসেবা ও মানুষের আন্তরিক সহযোগিতায় জীবন ফিরে পেয়েছেন গুরুতর অসুস্থ এক বাংলাদেশি শ্রমিক। এবার তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ চলছে। একটু ভালো করে বাঁচার আর একটু ভালো রোজগারের আশায় বাংলাদেশ থেকে ওমান গিয়েছিলেন নাজমুল হক নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু ১ জুলাই মস্তিষ্কের স্ট্রোকে আক্রান্ত হন তিনি। তাঁকে ভর্তি করা হয় রাজধানী মাসকাটের উপশহর রুয়ির একটি হাসপাতালে। সেখানে নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে
(আইসিইউ) চিকিৎসা চলে তাঁর। কিন্তু নাজমুলের হাতে অর্থকড়ি নেই। স্বাস্থ্যবিমাও নেই। কে নেবে তাঁর চিকিৎসার ব্যয়ভার? দূর-প্রবাসে আত্মীয়-পরিজনহীন অসহায় নাজমুলকে নিয়ে টাইমস অব ওমান একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে পাঠকদের ব্যাপক সাড়া মেলে। হৃদয়বান বহু মানুষ নাজমুলের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। অনেকে ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাস কার্যালয়ে এবং অনেকে সরাসরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁকে অর্থসহায়তা দেন। হাসপাতালের বিলের একটি বড় অংশ পরিশোধ করেন কাশ্মীরের এক ব্যক্তি। পরোপকারী মানুষটি নিজের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক। তিনি মনে করেন, স্রষ্টার নির্দেশে অসহায় মানুষের উপকার করাই তাঁর কর্তব্য। এর অংশ হিসেবেই নাজমুলের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। রুয়ি উপশহরের বদর আল সামা হাসপাতালে নাজমুলের চিকিৎসার খরচের অংশ হিসেবে কয়েক হাজার রিয়েল পরিশোধ করেছেন তিনি। নাজমুলের সঙ্গে একই কক্ষে থাকতেন এমন একজন শ্রমিক পত্রিকাটিকে বলেন, নাজমুল ‘ফ্রি ভিসা’ নিয়ে ওমান গিয়েছিলেন। পরে শ্রমিককার্ড সংগ্রহ করেন। সারা দিন হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে মাত্র ৯০ রিয়েল রোজগার করতেন। থাকতেন অন্য কয়েকজন শ্রমিকের সঙ্গে একটি কক্ষে গাদাগাদি করে। আয়ের একটা অংশ জমিয়ে তাঁর স্ত্রী ও চার সন্তানের জন্য দেশে পাঠাতেন। স্ট্রোক করার পর অন্যরা দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু পরে জানতে পারেন নাজমুলের হাত একদম শূন্য। এক রিয়েলও সঞ্চয় করেননি তিনি। হাসপাতালের গ্রুপ বিপণন ব্যবস্থাপক কো দেভাসি পত্রিকাটিকে বলেছেন, সময়মতো চিকিৎসা দেওয়ায় নাজমুলকে প্রাণে বাঁচানো সম্ভব হয়। কিন্তু তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়েছেন। তাঁর শরীরের ডান অংশ পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মানবিক দিক বিবেচনা করে এই অসহায় শ্রমিকের চিকিৎসা ব্যয়ের অনেকটা ছাড় দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মাসকাটে বাংলাদেশ দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা পত্রিকাটিকে বলেছেন, ‘নাজমুলকে দেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে। আশা করছি, কয়েক দিনের মধ্যেই তাঁকে দেশে পাঠানো সম্ভব হবে।’

No comments:

Post a Comment