Monday, August 4, 2014

অনুমতি ছাড়া মামলা–গ্রেপ্তার নয়, আবার তৎপর সচিবেরা:প্রথম অালো

সরকারের অনুমতি ছাড়া কোনো সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের বা গ্রেপ্তারের বিপক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছে সচিব কমিটি। কাউকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে গ্রেপ্তার করা হলে তা প্রচলিত আইন ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মনে করে কমিটি। সচিব কমিটি সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৪-এর খসড়ায় এ বিষয়টি উল্লেখ করেছে। গতকাল রোববার কমিটির সভায় এই খসড়া চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে ২০ জুলাই এ বিষয়ে প্রথ
ম সভা হলেও অধিকতর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের জন্য তা মুলতবি করা হয়। গতকাল আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে খসড়াটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়। অনুমোদন পেলে এটি মন্ত্রিসভা হয়ে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হবে। সভা সূত্র জানায়, সচিব কমিটির সভার আলোচনা ও সুপারিশ গণমাধ্যমকে না জানানোর বিষয়ে সভায় উপস্থিত সচিবেরা একমত হন। এর কারণ হিসেবে তাঁরা বলেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে স্পর্শকাতর হয়ে পড়েছে। সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তারের আগে অনুমতি লাগবে কি না, তা নিয়ে সরকার ছাড়াও দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও জাতীয় সংসদে ব্যাপক আলোচনা হয়েছে। এমনকি বিষয়টি উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উচ্চ আদালত থেকে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট রায় হওয়ার পর এমন অবস্থান প্রত্যাশিত নয়। যাঁরা এ সুপারিশ করেছেন, তাঁদের জন্যও বিষয়টি বিব্রতকর। এমনকি তাঁরা আদালত অবমাননা করছেন কি না, সে প্রশ্নও উঠতে পারে। সরকারের অনুমোদন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে না—এই বিধান রেখে গত বছরের ১০ নভেম্বর জাতীয় সংসদে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সংশোধন বিল ২০১৩ পাস হয়। এর মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সুপারিশও উপেক্ষা করা হয়। দুদকের ক্ষমতা খর্ব করার অভিযোগ ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। এরপর ২৫ নভেম্বর মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে চার আইনজীবী সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩০ জানুয়ারি দুদক আইনের সংশোধনীতে আনা ৩২(ক) ধারা অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন হাইকোর্ট। ওই ধারায় বলা হয়েছে, জজ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৭(১) ধারা আবশ্যিকভাবে পালন করতে হবে। এই ধারা অনুযায়ী, সরকারের অনুমোদন ছাড়া ফৌজদারি আদালত কোনো সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আমলে নিতে পারবেন না। হাইকোর্ট ওই ধারাটি বাতিল করার পর সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব খন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে প্রথম দুর্নীতির মামলা করে দুদক। এ ক্ষেত্রে সরকারের অনুমতি নেওয়া হয়নি। খন্দকার শওকত এখন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব থাকলেও তিনি দুর্নীতির মামলার আসামি। সচিবের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলা হওয়ায় সরকারি কর্মকর্তারা নড়েচড়ে বসেন। তাঁরা সরকারি কর্মচারী আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সচিব প্রথম আলোকে বলেন, সচিবেরা প্রচলিত আইন ও সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো সুবিধা চাননি। তাঁরা চেয়েছেন, সরকারের অনুমতি নিয়ে মামলা করতে হবে। অভিযুক্তকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ১৯৭(১) ধারা উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, ওই ধারা অনুযায়ী সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তির অপরাধ আমলে নিতে পারবেন না। তবে রিট আবেদনকারীদের অন্যতম সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে সব নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান। কিন্তু দুদক আইনের সংশোধনীতে জজ, ম্যাজিস্ট্রেট ও সরকারি কর্মচারীদের বিশেষ সুরক্ষা দেওয়া হয়েছিল। এটা বৈষম্যমূলক হওয়ায় তাঁরা আইনের আশ্রয় নেন এবং আদালত তা বাতিল করেন। ২০০৪ সালের আইনে সুস্পষ্টভাবে দুদকের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে উল্লেখ করে মনজিল মোরসেদ বলেন, আইনের ২০(১) ধারায় বলা হয়েছিল, ফৌজদারি কার্যবিধিতে যা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের অধীনে অপরাধ দুদক কর্তৃক তদন্তযোগ্য হবে। কোনো নতুন আইন করার ক্ষেত্রে বিশেষ করে দুর্নীতি দমনের বেলায় এমন ধারার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু এটা সংশোধনীর মাধ্যমে বাদ দেওয়ায় তাঁরা আইনের আশ্রয় নিয়ে জয়ী হন। সচিব কমিটির সভার সিদ্ধান্ত সম্পর্কে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, সচিব কমিটি সরকারি কর্মচারী আইন, ২০১৪ পর্যালোচনা করেছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এটি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন। তবে তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীদের জনমুখী করতে, তাঁদের দক্ষতা বাড়াতে ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতেই আইনের খসড়াটি প্রণয়ন করা হয়েছে। আইনের খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, সরকারি কর্মচারীদের জন্য স্থায়ী বেতন কমিশন থাকবে। কমিশন প্রতিবছর বাজারমূল্যের গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি সমন্বয় ও তা বাস্তবায়নের সুপারিশ করবে।

No comments:

Post a Comment