Tuesday, August 5, 2014

কথা হয়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয় না:প্রথম অালো

গাজায় ইসরায়েলি অভিযানে প্রাণহানি ও ধ্বংসযজ্ঞ অব্যাহত থাকলেও যুদ্ধবিরতির কোনো উদ্যোগ সেভাবে চোখে পড়ছে না। শুরু থেকেই মিসর চেষ্টা চালিয়ে গেলেও তাতে বলার মতো সাফল্য আসেনি। কয়েকবার সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি হয়েছে বটে, কিন্তু প্রতিবারই ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির মধ্যেই নানা অজুহাত তুলে আরও বেপরোয়া ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এর মধ্যেও থেমে নেই মিসরের চেষ্টা। যদিও সেই প্রক্রিয়ার সফলতা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। ওই প্রক্
রিয়ায় অংশ নিয়ে ফিলিস্তিনি আলোচকেরা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে কিছু শর্তের বিষয়ে একমত হয়েছেন। শিগগিরই ওই শর্তগুলো মিসরের মধ্যস্থতাকারীদের হাতে তুলে দেওয়ার কথা। খবর আল-জাজিরার, এএফপি। ফিলিস্তিনের আলোচক দলটি মিসরের রাজধানী কায়রোয় অবস্থান করছে। ওই দলের সদস্য ও ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইনের (ডিএফএলপি) প্রতিনিধি কায়েস আবদুল করিম আল-জাজিরা টেলিভিশনকে বলেন, ফিলিস্তিনের বেশির ভাগ নেতা ও হামাস মধ্যস্থতাকারীদের কাছে গাজায় সামরিক অবরোধ প্রত্যাহারের দাবি তুলে ধরবেন। এ দাবির মধ্যে সীমান্ত-ক্রসিংয়ে ফিলিস্তিনিদের চলাচল ও পণ্য আনা-নেওয়ার ওপর থেকে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার বিষয়টিও থাকবে। আবদুল করিম আরও বলেন, ‘ইসরায়েলের হাতে ৬০ জন ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির বিষয়টিও তোলা হবে। ইসরায়েলি সেনা গিলাদ শালিতের মুক্তির বিনিময়ে ২০১১ সালে মুক্তি পাওয়া ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ওই ৬০ ফিলিস্তিনিও ছিলেন। সম্প্রতি তাঁদের আবারও গ্রেপ্তার করেছে ইসরায়েলি বাহিনী।’ এ ছাড়া ফিলিস্তিনিদের দাবির মধ্যে রয়েছে গাজা থেকে ইসরায়েলি সেনা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার, সেখানে পুনর্গঠন-প্রক্রিয়া শুরু ও গাজা উপকূলে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ফিলিস্তিনি জেলেদের মাছ ধরার নিশ্চয়তা দেওয়া। কায়রোতে থাকা ফিলিস্তিনি আলোচকদের মধ্যে প্যালেস্টাইন লিবারেশন অর্গানাইজেশন (পিএলও), হামাস ও ইসলামিক জিহাদের প্রতিনিধিরাও রয়েছেন। ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরভিত্তিক এই আলোচক দলটি গত শনিবার কায়রো পৌঁছায়। গত রোববার ইজ্জাত আল-রিসেকের নেতৃত্বে হামাসের একটি দলও কায়রো গেছে। ইসলামিক জিহাদের প্রতিনিধি হিসেবে জিয়াদ আল-নাখালা কায়রোর উদ্দেশে লেবাননের রাজধানী বৈরুত ছেড়েছেন। তবে মিসরের মধ্যস্থতায় চলমান যুদ্ধবিরতির এই প্রক্রিয়ায় ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিনিধি পাঠানো হয়নি। মধ্যস্থতাকারীরা ফিলিস্তিনি আলোচকদের সঙ্গে বৈঠক করার পর ইসরায়েলের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। কিন্তু ফিলিস্তিনি আলোচকেরা​ যে শর্তগুলো দিতে যাচ্ছেন, তা বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা দিতে হবে জাতিসংঘ বা তৃতীয় কোনো পক্ষকে। তার আগে ইসরায়েলকে এই শর্তগুলো মানার অঙ্গীকার করতে হবে। কিন্তু ইসরায়েল এখনো অনমনীয় মনোভাব দেখাচ্ছে। রোববার ইসরায়েলি বিচারমন্ত্রী টিজিপি লিভনি বলেন, ‘গাজা থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার বিষয়ে হামাসের সঙ্গে কোনো আলোচনায় যাবে না ইসরায়েল। এই অবস্থান থেকে ইসরায়েল কখনোই সরে আসবে না।’ তবে তিনি বলেন, ‘আন্তর্জাতিক চুক্তির ভিত্তিতে সামরিক অভিযান বন্ধ করার বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে।’ ইসরায়েলকে অনেকটা আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছে এ কারণে যে ইসরায়েলি নেতারা ভাবছেন, মিসরের সেনাসমর্থিত সরকার তাদের অবস্থানের পক্ষে রয়েছে। মিসরের প্রেসিডেন্ট সাবেক সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি শনিবার বলেন, মিসর যুদ্ধবিরতির যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেই প্রস্তাবের বাইরে যুদ্ধবিরতির ‘কার্যকর কোনো বিকল্প’ প্রস্তাব নেই। হামাস ও ফিলিস্তিনি কয়েকটি সংগঠন মিসরের ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এতে গাজার ওপর থেকে অবরোধ শিথিলের সুনির্দিষ্ট কিছুর উল্লেখ নেই। গত সপ্তাহে মিসরের প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব ভেস্তে যাওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি নতুন কোনো প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে কিছুটা দূরে সরিয়ে রেখেছেন। এর মধ্যেই আবার নতুন প্রক্রিয়া শুরু করে মিসর। কিন্তু সেটা কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইসরায়েল অভিযান বন্ধের ঘোষণা দিলেই ​কি সংকটের সমাধান হয়ে যাবে? বিষয়টি তো এত সহজ নয়। একপর্যায়ে ইসরায়েল একতরফাভাবেই সামরিক অভিযান বন্ধের ঘোষণা দেবে, কিন্তু এতে তো আর গাজার ওপর থেকে আট বছর ধরে আরোপিত ইসরায়েলি সামরিক অবরোধের অবসান হবে না।’ ইসরায়েল যুদ্ধাপরাধ করেছে: এইচআরডব্লিউ ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজার সংঘাতবিক্ষুব্ধ এলাকা ছেড়ে পলায়নরত বেসামরিক লোকজনকে হত্যার অভিযোগ এনেছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনটির মতে, যা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়ে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ গতকাল সোমবার এক প্রতিবেদনে বলেছে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় খান ইউনিস শহরের নিকটবর্তী খুজা নগর থেকে পালিয়ে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর জুলাইয়ের শেষ দিকে হামলা চালানো হয়। নিউইয়র্কভিত্তিক সংগঠনটি বলেছে, ‘ইসরায়েলি সেনারা ২৩ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় নগর খুজায় গোলাবর্ষণ করে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করেছে, যা স্পষ্টত যুদ্ধ আইনের লঙ্ঘন।’

No comments:

Post a Comment