Tuesday, August 12, 2014

উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত:যুগান্তর

মুন্সীগঞ্জের লৌহজং চ্যানেলে পদ্মায় ডুবে যাওয়া লঞ্চের উদ্ধার অভিযান ৮ দিনের মাথায় সোমবার পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। ঢাকঢোল পিটিয়ে ১৭টি ছোট-বড় জাহাজ, এক হাজার উদ্ধারকর্মী ও পুলিশ অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ব্যবহার করেও লঞ্চটি উদ্ধারে ব্যর্থ হয়েছে। এর আগে রোববার উদ্ধার অভিযান সীমিত করা হয়েছিল। দেশের ইতিহাসে এই প্রথম ডুবে যাওয়া কোনো জাহাজ উদ্ধারে সাববটম প্রোফাইল ও সাইড স্ক্যান সোনার প্রযুক্তি ব্যবহার করেও সফল
তা আসেনি। এজন্য নদীর অসমতল গভীর তলদেশ, তীব্র স্রোত ও প্রতিকূল আবহাওয়াকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। পরিত্যক্ত ঘোষণার পর বিআইডব্লিউটিএ, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, নৌবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, রেড ক্রিসেন্টসহ সরকারি-বেসরকারি সব কটি সংস্থা মাওয়া ত্যাগ করেছে। এখন মাওয়াঘাট সুনসান। শুধু পুলিশের কন্ট্রোল রুমটি খোলা রয়েছে। সবাই চলে যাওয়ার পর স্থানীয় কয়েকজন যুবক নিজ উদ্যোগে ‘চেইন কপ্পা পদ্ধতি’তে লঞ্চটি উদ্ধারের চেষ্টা করছেন। এখন পর্যন্ত তারাও সফলতার মুখ দেখতে পারেনি। যদিও সোমবার তারা দাবি করেছেন প্রাথমিকভাবে একটি বস্তু চিহ্নিত করার। মাওয়া-কাওড়াকান্দি রুটে চলাচলকারী ৮৫ যাত্রী ধারণক্ষমতার ফিটনেসবিহীন পিনাক-৬ লঞ্চটি ৪ আগস্ট মাওয়াঘাটের কাছে ডুবে যায়। মাত্র ১৯ দশমিক ৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ছোট এই লঞ্চটি খুঁজে না পাওয়া ও অভিযান পরিত্যক্তের ঘোষণার মধ্য দিয়ে দুর্যোগকবলিত নদীমাতৃক বাংলাদেশের উদ্ধারকারী দলের চরম ব্যর্থতা ও অসক্ষমতার চিত্র ফুটে উঠেছে। ক্ষোভ ও হতাশা বেড়েছে সাধারণ মানুষ ও নিখোঁজদের আত্মীয় স্বজনের মধ্যেও। উদ্ধার অভিযান চলাকালে মাওয়া ও কাওড়াকান্দিতে কয়েক দফায় লোকজন বিক্ষোভ করে নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেছেন। উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারা। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে লঞ্চটির উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, লাশ উদ্ধারে মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশসহ পদ্মা মেঘনার ভাটির জেলাগুলোতে সার্চ কমিটির কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। বিআইডব্লিউটিএর ৮ জাহাজ : লঞ্চডুবির খবরের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ঘটনাস্থলে যায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের লোকজন। স্পিডবোট রেসকিউ-২ ও ট্রলার দিয়ে ডুবুরি নামিয়ে দড়ি টেনে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করে। কিন্তু সফলতা মেলেনি। ওইদিন বিকালেই ঘটনাস্থলে যায় বিআইডব্লিউটিএর অনুসন্ধানকারী জাহাজ তিস্তা ও তুরাগ। তারা জাহাজটি অনুসন্ধানের চেষ্টা করে। রাত ৯টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছে বিআইডব্লিউটিএর অনুসন্ধান হাজাজ সন্ধানী। তলব করা হয় উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তমকে। রাত একটা নাগাদ ঘটনাস্থলে যায় রুস্তম। একদিন পর ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বিআইডব্লিউটিএর নতুন কেনা উদ্ধার জাহাজ নির্ভীক। রুস্তম, নির্ভীক, সন্ধানী, তিস্তা ও তুরাগ থেকে সুফল না আসায় তলব করা হয় টাগবোট ৮-৩৯৭, আইটি-৩৯৪ ও ব-দ্বীপকে। বিআইডব্লিউটির আটটি জাহাজই ব্যর্থতার প্রমাণ দেয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ৩ জাহাজ : লঞ্চডুবির একদিন পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে চট্টগ্রাম থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষের জাহাজ জরিপ-১১ মাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরই সেটি বিকল হয়ে পড়লে রওনা হয় জরিপ-১০। কিন্তু সেটিও ৪ ঘণ্টা পর ফিরে যেতে বাধ্য হয়। জরিপ জাহাজের আসা নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর পাঠানো হয় কাণ্ডারি-৭। কিন্তু সেটিও মাওয়ার পথে আসতে ব্যর্থ হয়। শেষে বৃহস্পতিবার রাতে মাওয়ায় পৌঁছে কাণ্ডারি-২ নামের জরিপ জাহাজ। তারা সাইড স্ক্যান সোনার ও সাববটম প্রোফাইল দিয়ে অনুসন্ধান শুরু করে। এসব যন্ত্রে কাদা ও পলিমাটির ৭০ ফুট এবং বালুমাটির ১৮ ফুট নিচে তলিয়ে থাকা বস্তুও শনাক্ত করা সম্ভব। শনিবার থেকে কাণ্ডারি-২ এর সঙ্গে যোগ দেয় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আসা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের জাহাজ জরিপ-১০ ও কাণ্ডারি-৭ নামে আরও দুটি জাহাজ। তাদের সফলতার মধ্যে শনিবার তারা মাওয়ার এক কিলোমিটার ভাটিতে পানির ৬৫ ফুট গভীরে ১৭ থেকে ২০ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ধাতব বস্তু শনাক্ত করে। উদ্ধারে নৌবাহিনীর ২ জাহাজ : শুরুতেই উদ্ধার কাজে যোগ দেয় নৌবাহিনী। তাদের দুটি জাহাজ ও কয়েকটি স্পিডবোট উদ্ধার অভিযানে যোগ দেয়। প্রশিক্ষিত ২৪ ডুবুরি কাজ করেন। নৌবাহিনীর সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন ক্যাপ্টেন নজরুল। কিন্তু নৌবাহিনীও উদ্ধার অভিযানে সফলতা দেখাতে পারেনি। কোস্টগার্ডের এক জাহাজ : উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তায় দায়িত্বরত কোস্টগার্ড লঞ্চডুবির দিন থেকেই উদ্ধার কাজে যোগ দেয়। তাদের একটি জাহাজ ও ৫টি বিশেষায়িত স্পিডবোট উদ্ধার অভিযানে অংশ নেয়। কিন্তু তারা ৩টি লাশ উদ্ধার ছাড়া তেমন কোনো সফলতা দেখাতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিসের ৩ জাহাজ : ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিশাসক, অগ্নিবিনাশ ও রেসকিউ-২ নামে তিনটি ছোট-বড় জাহাজ উদ্ধারে কাজে অংশ নেয়। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও চাঁদপুর থেকে অভিজ্ঞ ডুবুরিদের তলব করা হয়। ২৪ জনের ডুবুরি দল ক্রমাগত চেষ্টা চালিয়েও লঞ্চ ও লাশ উদ্ধারে সফলতা দেখাতে পারেনি। তারা নদীতে দড়ি টেনে, জাল ফেলে, রশিতে ইট বেঁধে, অ্যাংকর টেনে ও ডুবুরি নামিয়ে কাজ করেন। কিন্তু কেউই সফল হননি। শুক্রবার এক পর্যায়ে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক নিজেও অনুসন্ধান অভিযান তদারকি করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবই ব্যর্থ। প্রযুক্তির ব্যবহার : লঞ্চডুবির পর নৌপরিবহনমন্ত্রী শুক্রবার মাওয়ায় বলেছেন, মালয়েশিয়ার নিখোঁজ বিমান অনুসন্ধানে যে যে প্রযুক্তি ব্যবহার হয়েছে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি খুঁজে বের করতে তারাও বিশ্বের সর্বাধুনিক ওই সব প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু আধুনিক প্রযুক্তি ও সনাতন পদ্ধতি কোনোটিতেই সফলতা পাওয়া যায়নি। লঞ্চটির অবস্থান শনাক্ত করার জন্য নৌবাহিনী ও চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দরের হাইড্রোগ্রাফার বিশেষজ্ঞ দল কাজ করে। তারা সাববটম প্রোফাইল, সাইড স্ক্যান সোনার, ইকো সাউন্ডার, ইকোগ্রাফিসহ আধুনিক বেশ কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। সেই সঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর ৩টি, নৌবাহিনীর ২টি ও বন্দর কর্তৃপক্ষের দুই সাইড স্ক্যানার ও সাববটম প্রোফাইল দিয়ে লঞ্চটি খুঁজেছেন। পাশাপাশি সনাতন পদ্ধতিতে শনিবার বিকালে কাণ্ডারি-২ জাহাজের সাইড স্ক্যান সোনার মেশিনে লঞ্চজাতীয় ধাতব বস্তুর অস্তিত্ব ধরা পড়ে। কিন্তু সেটিও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। এক হাজার উদ্ধারকর্মী : মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কন্ট্রোল রুম সূত্র জানায়, ৪ আগস্ট সোমবার থেকে ১১ আগস্ট সোমবার পর্যন্ত সরকারি বিভিন্ন সংস্থার এক হাজারের বেশি কর্মী উদ্ধারকর্মী ও পুলিশ অভিযানে যোগ দেন। ফায়ার সার্ভিসের ৮০ জন, সেনাবাহিনীর ৮০ জন, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের ২০০ জন, নৌপুলিশের ৫০ জন, বন্দও কর্তৃপক্ষের ৬০ জন ও বিআইডব্লিউটিএর প্রায় আড়াইশ’ সদস্য কাজ করেন। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের প্রায় দেড়শ’ ও মাদারীপুর জেলা পুলিশের আরও একশ’ সদস্য উদ্ধার অভিযানে কাজ করেন। লঞ্চটি উদ্ধার না হওয়ায়ও নিখোঁজদের লাশ না পাওয়ায় তাদেরও চেষ্টাও ব্যর্থ হয়েছে। পরিত্যক্ত ঘোষণা : দীর্ঘ ৮ দিনের মাথায় নিমজ্জিত লঞ্চ পিনাক-৬ শনাক্তকরণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেছেন মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ সাইফুল হাসান বাদল। সোমবার মাওয়ায় পদ্মা রেস্ট হাউসে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ৮ দিন সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখা হয়েছে। কিন্তু নদীতে প্রবল স্রোত, ঢেউ ও পানির সঙ্গে পলিমাটির কারণে লঞ্চটির সঠিক অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি। আমাদের যা ক্ষমতা ছিল তার সবই ব্যবহার করা হয়েছে। বাস্তবতা বিবেচনা করে সম্ভাব্য সব ধরনের পদক্ষেপ নিয়েও ইতিবাচক সফলতা পাওয়া যায়নি। তাই লঞ্চ শনাক্তকরণ ও উদ্ধার তৎপরতা স্থগিত করা হয়েছে। তবে ভেসে যাওয়া লাশ উদ্ধারের জন্য মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলাসহ ভাটি অঞ্চলের জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। নদী থেকে অজ্ঞাত পরিচয় কোনো মৃতদেহ উদ্ধার করলে তা মাদারীপুরের শিবচরে স্থাপিত কন্ট্রোল রুমে পাঠানো হবে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত উদ্ধারকারী জাহাজ রুস্তম মাওয়ায়ই অবস্থান করবে। জেলা প্রশাসক সাইফুল হাসান বাদল বলেন, দেশের সর্বশেষ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শনিবার পদ্মার তলদেশে একটি ধাতব বস্তু শনাক্ত করা হয়েছে। তবে ওই ধাতব বস্তুটি কি ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ এর কিনা তা শতভাগ নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কাণ্ডারি-২ এর অভিযানে ধাতব বস্তুর ইমেজ শনাক্ত করার পর নিশ্চিত হতে ডুবুরি নামানো হয়নি কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, প্রবল স্রোতের কারণে ডুবুরি পদ্মার তলদেশে যেতে পারেনি। তিনি আরও বলেন, মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুট দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের ২১ জেলার যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এছাড়া নৌরুটের পদ্মায় প্রায়ই নৌদুর্ঘটনা ঘটে। এ কারণে সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখন থেকে উদ্ধারকারী জাহাজ রস্তম অথবা নির্ভীক সব সময়ের মাওয়াঘাটের কাছে থাকবে। যাতে পরবর্তীকালে যে কোনো দুর্ঘটনায় দ্রুত উদ্ধার তৎপরতা চালানো যায়। পিনাক ডুবির ঘটনায় গৃহীত ব্যবস্থা হিসেবে বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে। থানায় মামলা হয়েছে। লঞ্চের মালিক, সারেং, সুকানিসহ আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। স্থানীয় লোকজনের উদ্ধার কার্যক্রম প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে পিনাক-৬ শনাক্ত করার কাজ চলছে। তারা পিনাক-৬ শনাক্ত করতে পারলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের পুরস্কৃত করা হবে। উদ্ধার ও নিখোঁজ : ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ লঞ্চে ২৫০ জনেরও বেশি যাত্রী ছিল। এদের মধ্যে প্রায় ১৫০ জনকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করতে সক্ষম হন। ১৩৯ জন নিখোঁজের তালিকায় নাম তালিকাভুক্ত করেছেন। এখান থেকে ৫০ জন জীবিত হিসেবে সন্ধান পাওয়া গেছে; যাদের আত্মীয়রা শুরুতেই খোঁজ না পেয়ে নিখোঁজের তালিকায় নাম লেখান। ৮ দিনে মোট ৪৭ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। পরিচয় শনাক্ত ও হস্তান্তর হয়েছে ২৮ জনের লাশ। ডিএনএ নমুনা রেখে মাদারীপুরের শিবচর পৌর কবরস্থানে ১৭ জনের লাশ দাফন করা হয়েছে। সর্বশেষ তালিকা অনুযায়ী ৬১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এসব নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনরা কোনো ক্ষতিপূরণও পাবেন না বলে জেলা প্রশাসন সূত্র জানিয়েছে। যে কারণে সফলতা আসেনি : পিনাক-৬ লঞ্চটি খুঁজে না পাওয়ার নেপথ্য কারণ হিসেবে মূলত পদ্মার অসমতল গভীর তলদেশ, তীব্র স্রোত ও প্রতিকূল আবহাওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে। উদ্ধার দলে অংশ নেয়া বিশেষজ্ঞরা মূলত পদ্মা নদীর তলদেশের অসমতলতাকে দায়ী করেছেন। এর ইকোগ্রাফি দেখতে অনেকটা আলট্রাসনোগ্রাম রিপোর্টের মতো। কখনও উঁচু, কখনও ঢালু পাহাড় পর্বতের মতো। নদীর তলদেশে বেশকিছু গভীর খাদ রয়েছে। সেগুলো ২০ থেকে ৪০ মিটার (১ মিটারে ৩.২৮ ফুট) বা তারও বেশি গভীর। উজান থেকে ভাটির দিকে লম্বালম্বির এ রকম অসংখ্য খাদ রয়েছে পদ্মায়। ধারণা করা হচ্ছে লঞ্চটি ডুবে যাওয়ার পরপরই ওই সব খাদে পড়ে গেছে। পাশাপাশি ভরা বর্ষায় শুষ্ক মৌসুমের মরা পদ্মা এখন উত্তাল। ৬ নটিক্যাল মাইলের বেশি বেগে স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। তার ওপর পলিমিশ্রিত পানি খুবই ঘোলা। প্রবল স্রোত ও ঘোলা পানিকেও উদ্ধার অভিযান ব্যর্থ হওয়ার নেপথ্যে দায়ী করা হচ্ছে। এছাড়া পদ্মায় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বা তারও বেশি। ফলে বড় বড় ঢেউয়ের কারণে উদ্ধার অভিযানে আশানুরূপ ফল মেলেনি। বিক্ষোভ ও রাস্তা অবরোধ : উদ্ধার অভিযানে ব্যর্থতা ও ধীরগতির কারণে বুধবার সকালে মাওয়ায় সড়ক অবরোধ ও সন্ধ্যায় পুলিশ এবং সাংবাদিকসহ প্রশাসনের লোকজনকে ধাওয়া করে বিক্ষোভ করেন নিখোঁজদের স্বজনরা। বৃহস্পতিবার শিবচরের কাওড়াকান্দিতে সড়ক অবরোধ করে নৌমন্ত্রী ও বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে নিখোঁজের স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে তাদের লাশ খুঁজে না দিয়ে লঞ্চ উদ্ধারে টালবাহানা করেছে। আজ সাক্ষ্য নেবে তদন্ত কমিটি : মুন্সীগঞ্জে পদ্মা নদীতে লঞ্চ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সাক্ষ্য নেবে নৌ মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত মাওয়াঘাটের কাছে পদ্মা রেস্ট হাউসে তাদের সাক্ষ্য নেয়া হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে তদন্ত কমিটিতে সংশ্লিষ্টদের সাক্ষ্য দেয়ারও অনুরোধ করেছে। লঞ্চডুবির পর সরকার দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠন করে ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলেছে।  

No comments:

Post a Comment