Tuesday, August 12, 2014

না’গঞ্জের বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে গডফাদাররা জড়িত:নয়াদিগন্ত

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডে গডফাদাররা জড়িত। তারা এসব হত্যাকাণ্ডের পেছনে প্রত্যক্ষ হোক আর পরোভাবে হোক জড়িত। এই গডফাদার কারাÑ সাংবাদিকেরা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের গডফাদার কারা সেটা শুধু নারায়ণগঞ্জবাসী শুধু নয়, সারা বাংলাদেশই জানে। এ গডফাদাররা প্রত্যক্ষ ও পরোভাবে চাঞ্চল্যকর সাত খুনের সাথে জড়িত। গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের আইভী এ
কথা বলেন। এর আগে নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় সেলিনা হায়াৎ আইভী বক্তব্য দিয়েছেন হাইকোর্টের নির্দেশে গঠিত প্রশাসনিক তদন্ত কমিটির কাছে। সচিবালয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান আলী মোল্লার কে বেলা পৌনে ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত এ বক্তব্য নেয়া হয়। আজ বেলা সাড়ে ১১টায় একই স্থানে নারায়ণগঞ্জের সংসদ সদস্য শামীম ওসমানকেও জিজ্ঞাসাবাদ করবে তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আইভী বলেন, কেন, কিভাবে, কী কারণে এ সাত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে তা মিডিয়ার মাধ্যমে সবাই জেনেছেন। হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেন দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার আগে তার সাথে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের টেলিফোনে কথোপকথন হয়। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র আইভী বলেন, নূর হোসেনকে দেশে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা দরকার, কেন এ ঘটনা ঘটল, কারা এর পেছনে জড়িত। দোষীদের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হলে সাত খুনের ঘটনায় ন্যায়বিচার পাওয়া সম্ভব হবে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে আইভী বলেন, স্ষ্ঠুু বিচার না হলে জনগণ সোচ্চার হবেন। তারা আইন হাতে তুলে নেবেন। তিনি বলেন, তদন্তে অনেক বিষয়ই বেরিয়ে এসেছে। এ হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারাÑ তাও ভবিষ্যতে বেরিয়ে আসবে। এ সরকারের আমলে সাত খুনের বিচার হবে কি নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে মেয়র আইভী বলেন, এ সরকারের আমলেই তিন কর্মকর্তা (র‌্যাব কর্মকর্তা) গ্রেফতার হয়েছেন। এ সরকারের আমলেই তদন্ত এগিয়ে যাচ্ছে। সরকার চাইলে বাকিরাও গ্রেফতার হবে। তিনি বলেন, অপো করুন। মূল হোতা বের হয়ে আসবে। তদন্ত কমিটি কেন ডেকেছিল জানতে চাইলে সেলিনা হায়াৎ বলেন, আপনারা জানেন, নিহত নজরুল ইসলাম আমার একজন কাউন্সিলর ছিলেন। এ ঘটনায় যিনি প্রধান আসামি তিনিও একজন কাউন্সিলর। যেহেতু আমি মেয়র, তাই এই দুইজনকে আমি কতটুকু জানি, চিনি এবং তারা কেমন লোকÑ এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছে কমিটি। এ সাত হত্যাকাণ্ডে আইভীর ঘনিষ্ঠজনেরাও জড়িতÑ শামীম ওসমানের এমন অভিযোগের বিষয়ে আইভী বলেন, হত্যাকাণ্ডে আমার ঘনিষ্ঠ কেউ এমনকি খোদ আমিও যদি জড়িত থাকি, তাহলে তা বের করুন। নারায়ণগঞ্জের বহু ঘটনার সুরাহা এখনো হয়নি উল্লেখ করে তিনি পাল্টা প্রশ্ন রেখে বলেন, ত্বকী হত্যা মামলার অভিযোগপত্র, নাট্যকর্মী চঞ্চল ও ছাত্রলীগের মিঠু হত্যার বিচারের কি কিছু হয়েছে? এ পরিস্থিতিতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, যখন একটি শহরের সব মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন তখন আমার কথা আলাদা করে বলার কিছু নেই। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, আমি মৃত্যুকে ভয় পাই না। মেয়র আইভীকে জিজ্ঞাসাবাদ প্রসঙ্গে তদন্ত কমিটির প্রধান শাহজাহান আলী বলেন, নিহত একজন এবং যার বিরুদ্ধে অভিযোগÑ দুইজনই সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর। মেয়র তাদের চেনেন কি না, তাদের মধ্যে সম্পর্ক কেমন ছিলÑ এসব বিষয়ে জানতে চেয়েছি। আইভী বিশেষ কিছু বলেছেন কি নাÑ এ প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কমিটির প্রধান বলেন, এটা তদন্তের বিষয়। যেটুকু বলা যায় সেটুকু আমরা আপনাদের বলেছি। মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্ত কমিটির কর্মকর্তারা ভারতে যাবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, অপো করুন, দেখবেন। সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্যদের জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্তে হাইকোর্টের নির্দেশে গত ৭ মে এ প্রশাসনিক তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। নারায়ণগঞ্জের অপহরণ ও হত্যার সাথে প্রশাসনের কোনো সদস্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যের প্রত্যক্ষ বা পরো ভূমিকা বা সংশ্লিষ্টতা ছিল কি নাÑ গণতদন্তের মাধ্যমে তা উদঘাটন করবে এ কমিটি। অপহৃত ব্যক্তিদের জীবিত উদ্ধারে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি নাÑ কমিটিকে তাও খতিয়ে দেখতে বলেছেন আদালত। তদন্ত কমিটি এ পর্যন্ত ৩৫০ জনের বেশি মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, যাদের মধ্যে র‌্যাবের শীর্ষ কর্মকর্তারাও আছেন। আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আদালতে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের কথা রয়েছে এ তদন্ত কমিটির। ইতোমধ্যে কমিটি হাইকোর্টে কয়েক দফা অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করে বলেছে, ঘটনার সাথে কারা জড়িত সেটা তারা জানতে পেরেছেন। কী কারণে তারা ওই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, এখন তা জানতে তদন্ত চলছে। গত ২৭ এপ্রিল ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার ও তার গাড়িচালক ইব্রাহীম। এরপর পরবর্তী ৩০ এপ্রিল ছয়জনের এবং ১ মে অপরজনের লাশ ভেসে ওঠে শীতল্যায়। পরে শীতল্যা নদী থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। অপহরণের ঘটনার পরপরই নজরুলের পরিবারের প থেকে আওয়ামী লীগ নেতা নূর হোসেনকে প্রধান আসামি করে একটি মামলা করা হয়। নূর হোসেন র‌্যাবকে ছয় কোটি টাকা দিয়ে সাতজনকে হত্যা করিয়েছেন বলে নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ইতোমধ্যে অভিযোগ করেন। শুরুতে অভিযোগ অস্বীকার করে সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য দিলেও অপহৃতদের লাশ উদ্ধারের পর গা-ঢাকা দেন নূর হোসেন। পরে দুই সহযোগীসহ তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গে গ্রেফতার হন। র‌্যাবের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠার পর র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন এবং লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এম এম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়া হয়। গ্রেফতার হওয়ার পর কয়েক দফায় জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডে নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে তারা জবানবন্দীও দেন। এ খুনের ঘটনা আগে থেকেই জানতেন বলে সে সময় র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধেও অভিযোগ ওঠে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি তাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করেছে।

No comments:

Post a Comment