Tuesday, August 12, 2014

জীবন বিপন্ন করে শ্রমবাজার রক্ষা!:কালের কন্ঠ

লিবিয়া ও ইরাকে বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছে- সরকারের পক্ষ থেকে যখন এ কথা বলা হচ্ছে তখন রক্ত ঝরছে দেশ দুটিতে। ইরাকে বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশিরা আটকা পড়ে সাহায্যের আকুতি জানাচ্ছেন। ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র বাহিনীর বিমান হামলা শুরুর পর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেছেন, দেশটির পরিস্থিতি শিগগির স্বাভাবিক হচ্ছে না। লিবিয়া থেকে পাওয়া খবরে জানা যায়, শনিবার থেকে রক্তাক্ত সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়েছে ত্রিপোলিজুড়ে। সংঘাত চলছে বেনগা
জিতেও। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বেনগাজি ও ত্রিপোলি ছাড়া লিবিয়ার বাকি এলাকাগুলো শান্ত। অথচ লিবিয়ায় অবস্থানরত প্রায় ৫০ হাজার বাংলাদেশির ২২ হাজার থাকেন বেনগাজিতে, ২০ হাজার ত্রিপোলিতে ও বাকিরা আশপাশের বিভিন্ন এলাকায়। বিভিন্ন দেশ যখন দূতাবাস বন্ধ করে লিবিয়া থেকে তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে তখন বাংলাদেশ দূতাবাস সরকারের নির্দেশনার অপেক্ষায়। দূতাবাস এরই মধ্যে তার পর্যবেক্ষণের বিষয়ে সরকারকে জানিয়েছে। নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে, লিবিয়ায় গত ১৩ জুলাই থেকে শুরু হওয়া সংঘাতে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১০ বাংলাদেশি। আহতও হয়েছেন বেশ কয়েকজন। প্রায় পাঁচ হাজার বাংলাদেশি চাকরি, বাসস্থান হারিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন। এমন এমন স্থানে তাঁরা আটকে আছেন যেখানে নেই খাদ্য ও পানি সরবরাহ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জীবিকার তাগিদে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও অনেকে দেশে ফিরে আসতে চান না। আবার নিরাপত্তার তাগিদে অনেকে ফিরতেও চান। এ পর্যন্ত যাঁরা দেশে ফিরেছেন তাঁদের সব খরচ দিয়েছে নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। কেউ কেউ নিজ খরচেও এসেছেন। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধারণা, দেশে ফিরতে যাঁরা অনীহা প্রকাশ করছেন তাঁদের আশা- পরিস্থিতি শিগগিরই হয়তো স্বাভাবিক হয়ে আসবে। এ ছাড়া দেশে ফিরতে যে অর্থ প্রয়োজন তা তাঁদেরই জোগাড় করতে হবে। তবে অনেক দেশ সরকারি খরচেই নিজেদের নাগরিকদের ফিরিয়ে আনছে। বাংলাদেশও এমনটি করলে অনেকেই ফিরতে উৎসাহিত হতে পারেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মনে করে, যাঁরা দেশে ফিরতে চান, তাঁদের প্রত্যাবাসন (স্বেচ্ছায় ফিরে আসতে আগ্রহীদের ফিরিয়ে আনা) শুরু করা উচিত। তবে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় মনে করে, বাংলাদেশিরা প্রত্যক্ষভাবে সংঘাতের লক্ষ্য নয়। তাই পরিস্থিতি আরো পর্যবেক্ষণ ও তুলনামূলক নিরাপদ স্থানে তাঁদের সরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়ার পক্ষে ওই মন্ত্রণালয়। এর কারণ হলো, সংঘাত যদি শিগগির থেমে যায়, তাহলে ফিরে আসা ব্যক্তিরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। এ কারণে বাংলাদেশিদের অনেকে পরিস্থিতি আরেকটু দেখে সিদ্ধান্ত নিতে চান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকার এক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে বলেন, নিরাপত্তা পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাওয়ায় গত শনিবার পর্যন্ত ৪৫টি দেশ লিবিয়ায় তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে। আশপাশের দেশগুলো থেকে তারা উদ্যোগ নিয়ে নিজেদের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে। ভারত সরকারি অর্থায়নে তার নাগরিকদের লিবিয়া থেকে সরিয়ে নিতে শুরু করেছে এবং প্রায় ৫০০ ভারতীয় ইতিমধ্যে লিবিয়া ছেড়েছে। পাকিস্তানও প্রত্যাবাসন কাজ শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশই ব্যতিক্রম। ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, লিবিয়ার বিভিন্ন স্থানে আটকে থাকা বাংলাদেশিরা প্রত্যাবাসনে সহযোগিতার জন্য বারবার অনুরোধ জানালেও দূতাবাস থেকে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। দূতাবাসের কূটনৈতিক উইং বারবার বাংলাদেশ সরকারকে অনতিবিলম্বে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরুর অনুরোধ জানাচ্ছে। কারণ পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। এতে হঠাৎ করে প্রত্যাবাসন করতে চাইলেই বাংলাদেশিদের বিপুল সংখ্যার কারণে তা সম্ভব হবে না। কৌশলগত বিষয় নিয়ে কাজ করেন এমন পেশাদার কূটনীতিকরা বলেছেন, দেশটির পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। খুব শিগগির পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা তাঁরা দেখছেন না। গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতিতে কর্মীদের চাকরি ও প্রাণ- দুটিই হারানোর শঙ্কা আছে। কিন্তু তাঁদের এ সতর্ক বার্তাকে সরকারের নীতি-নির্ধারকরা তেমন গুরুত্ব দেননি। বরং দৃশ্যত বিদেশের মাটি আঁকড়ে ধরে রেখে কর্মীদের কর্মসংস্থান ও শ্রমবাজার রক্ষাকেই গুরুত্ব দিয়েছেন তাঁরা। জানা গেছে, পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে সম্প্রতি লিবিয়ায় নিহত হওয়া সাত বাংলাদেশির মৃতদেহ পাঠানোও সম্ভব হচ্ছে না। ত্রিপোলি, বেনগাজিসহ অনেক বড় শহরের বিমানবন্দরগুলো বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে। খোদ রাজধানী ত্রিপোলিতেই দিনের বেশির ভাগ সময় বিদ্যুৎ, পানি থাকে না। অন্য শহরগুলোর অবস্থা আরো ভয়াবহ। লিবিয়া থেকে এক বাংলাদেশি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে গত বৃহস্পতিবার সুদানের ২৩ জন নিহত হয়েছেন। দুই সপ্তাহ আগে কামানের গোলায় নিহত হয়েছেন ২০ মিসরীয়। কামানের গোলা, ক্ষেপণাস্ত্রের শিকার যে কখন কোন দেশের নাগরিক হয় তা কেউই বলতে পারছে না। হয়তো পরের গোলাটি আমাদের ঘরে এসে পড়তে পারে। ২০ বর্গফুটের এ ঘরে আমরা বাংলাদেশিরা গাদাগাদি করে আছি।’  ওই বাংলাদেশি আরো বলেন, ‘সরকার আমাদের লিবিয়া থেকে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নেবে কি না তা আমরা দূতাবাসের কাছে জানতে চেয়েছি। দূতাবাস বলছে, সরকার এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমরা অনেকেই দেশে ফিরতে চাই।’ তিনি আক্ষেপ করে বলেন, বিদেশ থেকে প্রতি বছর কী পরিমাণ রেমিট্যান্স এলো তা সরকার বড় করে দেখায়। লিবিয়া থেকে দেশে ফিরতে একেকজনের বিমান টিকিট বাবদ ৫০ হাজার টাকার মতো প্রয়োজন হতে পারে। সরকার কি এ টাকা দিয়ে তাঁদের ফিরিয়ে আনতে পারে না? জানা গেছে, ত্রিপোলি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নিয়ন্ত্রণে নেওয়া নিয়ে গত ১৩ জুলাই ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স ফোর্স অনুগত উদারপন্থী জিনতানি ব্রিগেড (এনএএফ) ও জাস্টিস অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন পার্টি (জেসিপি) অনুগত ইসলামপন্থী মিসরাতা ব্রিগেডের মধ্যে রক্তাক্ত সংঘাত চলছে। ওই বিমানবন্দরটি ২০১১ সালের অক্টোবর মাসে গাদ্দাফিকে উৎখাতের পর থেকে জিনতানি ব্রিগেডের নিয়ন্ত্রণে ছিল। মিসরাতা ব্রিগেড ১৩ জুলাই রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র, ভারী মেশিন গান, রকেটচালিত গ্রেনেড (আরপিজি) ও মর্টার নিয়ে জিনতানি ব্রিগেডের ওপর সর্বাত্মক হামলা চালায়। বিমানবন্দর এলাকায় সেদিন দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রায় ১০০ জন নিহত ও প্রায় ৫০০ আহত হন। বিমানবন্দরের রানওয়ে, অফিস এমনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে তা আবার সচল করতে কয়েক মাস লেগে যাবে। বিমানবন্দরটি অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। সংঘর্ষে ২০টি বিমান ধ্বংস হয়েছে। অক্ষত নেই কাস্টম এলাকা ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষও। গত ১৩ জুলাই থেকে সংঘর্ষে লিবিয়ায় প্রায় ৪০০ জন মিলিশিয়া ও বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, সংঘাতে উদারপন্থীরা দিন দিন দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ফলে চরমপন্থীরা শিগগিরই ত্রিপোলির নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। বেনগাজিতে জেসিপি অনুগত ইসলামপন্থী আনসার আল-শরিয়া গ্রুপ বিমানবন্দর ও এনএএফ অনুগত উদারপন্থী হাফতার ব্রিগেডের সেনা ঘাঁটিতে হামলা চালায়। তারা সেখানে সাইকা স্পেশাল ফোর্সেস ব্রিগেডের একটি সামরিক ঘাঁটি দখল করে নিয়েছে। লিবিয়া সরকার সম্প্রতি ওই ব্রিগেড মোতায়েন করেছিল। ওই ব্রিগেডটি পক্ষত্যাগী জেনারেল হাফতার গ্রুপের অনুগত ছিল। বেনগাজি এখন পুরোপুরি ইসলামপন্থীদের নিয়ন্ত্রণে। গত শুক্রবার রাতে হাফতার ব্রিগেড আনসার আল-শরিয়া ও বেনগাজি রেভ্যুলুশনারিস শুরা কাউন্সিলের ৭০ জন সদস্যকে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে। আনসার আল-শরিয়া ও রেভ্যুলুশনারিস শুরা কাউন্সিলের সদস্যরা বেনগাজির বেনিনা বিমানঘাঁটির দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে সাম্প্রতিক সংঘাতে মানবিক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি অবকাঠামো ও সেবাব্যবস্থার ক্ষয়ক্ষতি অতীতের সংঘাতগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে। ত্রিপোলি ও বেনগাজি- উভয় এলাকাতেই বিবদমান গোষ্ঠীগুলো ট্যাংক, ভারী মেশিনগান, রকেট, মর্টার, ম্যানপ্যাড লঞ্চারের (বহনযোগ্য আকাশ-প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা) মতো ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করছে। ত্রিপোলির প্রধান জ্বালানি ভাণ্ডারে ১৬ লাখ ব্যারেল ডিজেল ছিল। মর্টারের গোলার আঘাতে বড় একটি জ্বালানি-ট্যাংক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংঘাতে জনজীবন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ত্রিপোলিতে কনটেইনারে করে গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম সরবরাহ ব্যবস্থা বন্ধ করেছে। ফলে পেট্রল ও গ্যাসের চরম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এক সপ্তাহ ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহ দুটিই চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। জানা গেছে, মর্টার শেল ও বোমা হামলার মাত্রা চরমভাবে বেড়ে যাওয়ায় ত্রিপোলি ও বেনগাজির সংঘাতময় এলাকাগুলোর বাসিন্দারা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় সব দেশসহ ৪৫টি দেশ লিবিয়ায় দূতাবাস বন্ধ করে দিয়েছে। তারা তাদের নাগরিকদের যত দ্রুত সম্ভব লিবিয়া ছাড়ার পরামর্শ দিচ্ছে। জাতিসংঘ, রেডক্রসসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো তাদের অফিস গুটিয়ে প্রতিবেশী তিউনিশিয়া থেকে কার্যক্রম চালাচ্ছে। অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাতার, তুরস্ক, মিসর, কেনিয়াও তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দিয়ে নাগরিকদের লিবিয়া ছাড়তে বলেছে। ত্রিপোলিতে সংঘাত শুরুর পর ১ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্র লিবিয়ায় তার দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। সংঘাতের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকরা গাড়িতে চড়ে তিউনিশিয়া সীমান্তে পৌঁছান। তাঁদের গাড়ি বহর ঘিরে ছিল সামরিক যান, আকাশে সুরক্ষা নিশ্চিত করে তিনটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান। ফিলিপিন্স সরকার তার ১৩ হাজার নাগরিককে অনতিবিলম্বে লিবিয়া ছাড়ার বাধ্যতামূলক আদেশ জারি করেছে। ভারতও স্বেচ্ছায় দেশে ফিরতে আগ্রহীদের লিবিয়া ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে। পাশাপাশি সশস্ত্র সংঘাতের এলাকাগুলো থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে দেশটি। জানা গেছে, বাংলাদেশে চাকরির সম্ভাবনা কম থাকা সত্ত্বেও অনেক বাংলাদেশি দেশে ফিরতে চান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে মত দিলেও সংশ্লিষ্ট অন্য একটি মন্ত্রণালয় এর বিরোধিতা করছে। কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানায়, কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার দাবিতে কর্মীদের ধর্মঘটের কারণে লিবিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বন্ধ রয়েছে। বিবদমান গোষ্ঠীগুলোর সংঘাত থামাতে বয়োজ্যেষ্ঠরা উদ্যোগ নিলেও তাতে সফলতা মিলছে না। ইসলামপন্থীরা সংলাপের আহ্বানে সাড়া দেবে না বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এ কারণে আগামী দিনগুলোয় সংঘাত ও গৃহযুদ্ধ আরো তীব্র হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।  প্রবাসীকল্যাণসচিব ড. খোন্দকার শওকত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, কোরিয়ান কম্পানিগুলো লিবিয়া থেকে তাদের কর্মীদের দেশে ফেরত পাঠাচ্ছে। তবে ত্রিপোলি ও বেনগাজিতে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে। অভিবাসন ব্যয়ের কারণে বাংলাদেশিদের বেশির ভাগই দেশে ফিরতে চাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ত্রিপোলি ও বেনগাজিতেই সমস্যা। বাকি এলাকা স্বাভাবিক। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স তারিকুল ইসলাম শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রত্যাবাসন ইস্যুতে তাঁদের পর্যবেক্ষণ পররাষ্ট্র ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। ওই মন্ত্রণালয় দুটি এর প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। কোনো অবস্থায় গেলে প্রত্যাবাসন শুরু করা হবে সে বিষয়েও চিন্তা-ভাবনা চলছে। তিনি বলেন, সমস্যা কত দিন ধরে চলে, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, প্রয়োজনীয় সেবা ও সরবরাহ ব্যবস্থা কী দাঁড়ায়- এমন কয়েকটি বিষয় এ ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হতে পারে। শুরুতেই হয়তো হাজারের বেশি এমনকি দু-তিন হাজার জনকে প্রত্যাবাসনের প্রয়োজন হতে পারে। তারিকুল ইসলাম আরো বলেন, লিবিয়ায় বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা, জীবন-জীবিকা সব কিছুইকেই সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এখন বাংলাদেশিদের সংঘাতময় এলাকা থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার এবং আরো ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এদিকে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল রবিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, লিবিয়া ও ইরাকে বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন। সহিংসতার কারণে ত্রিপোলি থেকে সাড়ে তিন হাজার বাংলাদেশিকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তাঁরা সেখানে যেসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, সেখানকার কর্তৃপক্ষ তাদের দেশে ফেরার বিমানভাড়া ও ছুটি দিয়েছে। কিন্তু বিমানবন্দর বন্ধ থাকায় তাঁদের দেশে ফেরত আনা যাচ্ছে না। কর্মসংস্থানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা তাঁদের নিরাপত্তার বিষয়টিতে খুবই জোর দিচ্ছি। তবে পুরো পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণে না। তার পরও চেষ্টা করছি প্রবাসী শ্রমিকদের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার।’  সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ইরাকে বাংলাদেশিদের অবস্থা সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ইরাকে বাংলাদেশের ২৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক কাজ করছেন। সেখানে ভারতের রয়েছে মাত্র এক হাজার ৪০০ শ্রমিক। অল্প শ্রমিক থাকায় তারা তাঁদের সরিয়ে আনতে পেরেছে। কিন্তু ২৫ হাজারের বেশি শ্রমিককে দেশে ফেরাতে সময় লাগবে। তবে এটা একটা ভালো খবর হলো, কোনো দেশের সহিংসতায় বাংলাদেশিরা টার্গেট নয়। ইরাক ও লিবিয়ায় সহিংসতার প্রভাব এ দেশের অর্থনীতিতে পড়বে কি না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, সহিংসতা মাত্র দুটি দেশে হচ্ছে। বাকি দেশগুলোয় শ্রমিকরা ভালোভাবে কাজ করছেন। তাই এর প্রভাব অর্থনীতিতে খুব একটা পড়বে না। বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে ইরাকের একটি কম্পানির আগ্রহ প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ইরাকের একটি কম্পানি এরই মধ্যে এখানে এসে শ্রমিক নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। সেটি যাচাই-বাছাই করেই সেখানে নতুন করে লোক পাঠানো বা না পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

No comments:

Post a Comment