Sunday, August 10, 2014

ছাত্রদলে গুরুত্বপূর্ণ পদ পেতে চলছে দৌড়ঝাঁপ:নয়াদিগন্ত

ছাত্রদলের নয়া কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ প্রত্যাশীদের শেষ মুহূর্তের দৌড়ঝাঁপ চলছে। শীর্ষ পদে যেতে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন তারা। দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথেও যে যেভাবে পারেন, যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। ‘গ্রুপ’ রক্ষা করে সব চ্যানেল কাজে লাগাতে তৎপর সবাই। বিশেষত সভাপতি ও সেক্রেটারি পদের জন্য চতুর্মুখী লড়াই চলছে। বিএনপির শীর্ষপর্যায়ে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রদলের নতুন কমিটি
ঘোষণা করা হবে শিগগিরই। সংগঠনটি পুনর্গঠনের অংশ হিসেবেই জুয়েল-হাবিবের নেতৃত্বাধীন কমিটির বদলে নতুন কমিটি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে ‘বয়স ফ্যাক্টর’ মাথায় রেখেই কাজ এগিয়ে চলছে। কমিটি হবে সিনিয়র-জুনিয়র মিলিয়েই। তবে সভাপতি-সেক্রেটারি পদে সিনিয়র কাউকে দায়িত্ব দেয়াই অধিক যুক্তিযুক্ত মনে করছে বিএনপির হাইকমান্ড। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, মাস দুয়েকের মধ্যেই নতুন করে পুরোমাত্রায় আন্দোলনে নামবে বিএনপি। সেই আন্দোলনে ছাত্রদলকেও কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। সেক্ষেত্রে কেবল অপেক্ষাকৃত জুনিয়র নেতাদের দিয়ে নয়া কমিটি করা কোনোভাবেই সঠিক সিদ্ধান্ত হবে না। চেইন অব কমান্ড রক্ষায় সভাপতি-সেক্রেটারিকে অবশ্যই সংগঠন পরিচালনায় অভিজ্ঞ হতে হবে। অবশ্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে ভালো পদে থাকা সাবেক কয়েকজন ছাত্রদল নেতা অপেক্ষাকৃত জুনিয়রদের নেতৃত্বের সামনের কাতারে উঠিয়ে আনতে কাজ করছেন। গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাকগ্রাউন্ড আছে, এমন নেতাদের জায়গা দেয়ার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে। ছাত্রদলের সভাপতি পদের জন্য সিনিয়র নেতাদের মধ্যে এই মুহূর্তে তিনটি নাম ঘুরেফিরে আসছে। বিএনপির প্রভাবশালী কয়েকজন নেতাও এদেরকে দায়িত্ব পাইয়ে দিতে কাজ করছেন। এরা হলেনÑ ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি নুরুল ইসলাম নয়ন, বর্তমান কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, বর্তমান কমিটির সহসভাপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। নুরুল ইসলাম নয়নের বাড়ি ভোলায়। পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। বর্তমান কমিটিতে তার কোনো পদ নেই। কিন্তু পদ না পেয়েও নয়ন বিএনপির হাইকমান্ডের নজরে রয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর বরিশালের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা তার হয়ে শোডাউন করছে নিয়মিতই। কমিটির বাইরে থেকেও ৫ জানুয়ারির নির্বাচন-পূর্ব আন্দোলনে তার ভূমিকা ছিল। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কাছে নয়ন সম্পর্কে ইতিবাচক রিপোর্ট রয়েছে। নুরুল ইসলাম নয়ন নয়া দিগন্তকে বলেছেন, ‘দিনের পর দিন আমার মেধা-শ্রম সবই ছাত্রদলের জন্য ব্যয় করেছি। ম্যাডাম দায়িত্ব দিলে আমি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে প্রস্তুত আছি। আন্দোলনের মাঠেও সাংগঠনিক শক্তি প্রতিফলিত করতে সক্ষম হবো।’ বজলুল করিম চৌধুরী আবেদের বাড়ি নোয়াখালী। তিনিও পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ভদ্র ও নম্র হিসেবেই পরিচিত এই নেতার ছাত্রদলে উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে। ৫ জানুয়ারি-পূর্ব আন্দোলনে তার বেশ ভূমিকা ছিল। ছাত্রদল সভাপতি জুয়েল ও সেক্রেটারি হাবিব গ্রেফতার হওয়ার পর রাজধানীতে খুব চাপের মধ্যে থেকেও ছাত্রদল নেতাদের সংগঠিত করার চেষ্টা করেছেন আবেদ। গ্রেফতারও হয়েছেন। বিএনপির শীর্ষপর্যায়েও আবেদের সুনাম রয়েছে। তারেক রহমানের কাছে সভাপতি হিসেবে তার নামও তোলা হয়েছে গুরুত্বের সাথে। বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘ছাত্রদলের সিনিয়র সহসভাপতি হিসেবে দলের দুঃসময়ে আন্দোলনের মাঠে লড়াই করেছি। দলের প্রতি কমিটমেন্টের ঘাটতি কখনো ছিল না। সারা দেশে সংগঠন গুছিয়েছি। ম্যাডাম দায়িত্ব দিলে তা নিতে প্রস্তুত রয়েছি।’ সাইফুল ইসলাম ফিরোজের বাড়ি ঝিনাইদহে। বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি হিসেবে নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক সেক্রেটারি পদই তাকে খ্যাতি দিয়েছে অনেক। তিনি একাধিকবার বঞ্চিত হয়েছেন প্রত্যাশিত পদ পেতে। এবার তিনি আছেন গুড বুকে। বিএনপির বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা তাকে সভাপতি পদের জন্য যোগ্য মনে করছেন। সাইফুল ইসলাম ফিরোজও দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছেন বলে জানিয়েছেন। এর বাইরে সিনিয়রদের মধ্যে পদ পেতে লবিং করছেন বর্তমান কমিটির সহসভাপতি ওমর ফারুক সাফিন, আনোয়ারুল হক রয়েল, মো: আবু সাঈদ ও কামাল আনোয়ার আহমেদ। ছাত্রদলের সিনিয়র নেতাদের অনেকেই আহ্বায়ক হয়ে সারা দেশে ছাত্রদলকে গুছিয়ে দিতে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। এসব নেতার মধ্যে রয়েছেনÑ বর্তমান কমিটির সভাপতি আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল, সাবেক ছাত্র নেতা শহীদুল ইসলাম বাবুল, হাসান মামুন, আনিসুর রহমান খোকন ও আমিরুজ্জমান খান শিমুল। তবে বেগম খালেদা জিয়া আন্দোলনের কথা বিবেচনায় নিয়ে এই মুহূর্তে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পক্ষে সায় দিচ্ছেন না। ছাত্রদলে অপেক্ষাকৃত জুনিয়র (সিনিয়রদের চেয়ে বয়স কিছুটা কম) নেতারা এবার সভাপতি-সেক্রেটারির পদ পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী আন্দোলনের মাঠে সিনিয়ররা ইতোমধ্যে পরীক্ষা দিয়েছেন। তারা কতটুকু সফল হয়েছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এবার অপেক্ষাকৃত অভিজ্ঞ জুনিয়র নেতাদের নিয়ে কমিটি গঠন করাই শ্রেয় হবে। জুনিয়ররা পকেট কমিটি গঠনের বিরুদ্ধেও কথা বলেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের দায়িত্ব পেলেই বিএনপির কিছু সাবেক ছাত্রনেতা পকেট কমিটি করতে তৎপর হয়ে উঠেন। এক্ষেত্রে কে যোগ্য, কে কতটা চরিত্রবান, কে সাংগঠনিক তা বিবেচনায় আনা হয় না। ব্যক্তিগতভাবে হতাশাগ্রস্ত ও সংস্কারপন্থীদের দিয়ে কমিটি না করার পরামর্শ দিয়েছেন কোনো কোনো ছাত্র নেতা। অপেক্ষাকৃত জুনিয়রদের মধ্যে সভাপতি-সেক্রেটারি পদের জন্য লবিং-তদবিরে এগিয়ে আছেন বর্তমান কমিটির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক ওবায়দুল হক নাসির, যুগ্ম সম্পাদক আকরামুল হাসান মিন্টু, মামুনুর রশীদ মামুন, মনিরুল ইসলাম সোহাগ, মশিউর রহমান মিশু, ফেরদৌস আহমেদ মুন্না, সাংগঠনিক সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদল দক্ষিণের সভাপতি ইসহাক সরকার।

No comments:

Post a Comment