Sunday, August 10, 2014

চা শ্রমিক ইউনিয়ন নির্বাচনকে ঘিরে উৎসবমুখর পরিবেশ:নয়াদিগন্ত

দেশের চা শিল্পের সাথে জড়িত সাত লক্ষাধিক শ্রমিকের দাবিদাওয়া আদায়ের একমাত্র সংগঠন বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের তিন ক্যাটাগরির কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ ১০ আগস্ট। ছয় বছর পর এ নির্বাচনকে ঘিরে মৌলভীবাজার জেলার ছোট বড় সব মিলিয়ে ১৩৫টি চা বাগানসহ দেশের ২২৮টি চা বাগানে বিরাজ করছে এক উৎসবমুখর পরিবেশ। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিজেদের পক্ষে ভোট আদায়ে প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন দু’টি প
্যানেলে বিভক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা। তিন ধরনের ব্যালটের মাধ্যমে মোট ৯৪ হাজার ৫৮৩ জন চা শ্রমিকের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হবেন পঞ্চায়েত বা বাগান কার্যকরী কমিটি, ভ্যালি কার্যকরী কমিটি ও কেন্দ্রীয় কার্যকরী কমিটি। এ দিকে ছয় বছর পর নির্বাচনকে ঘিরে চা শ্রমিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক উৎসাহ ও উদ্দীপনা। মৌলভীবাজার জেলার ছোট বড় মিলিয়ে ১৩৫টি চা বাগানের ৫৮ হাজার ৩৩৬ জন ভোটার ছাড়াও সিলেট, হবিগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটি জেলার ২২৮টি চা বাগানের হাজার হাজার ভোটারের মধ্যে চলছে জল্পনা কল্পনা। কে হচ্ছেন তাদের নির্বাচিত নেতা? প্রতিদিনই শ্রীমঙ্গল থেকে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা ছুটে যাচ্ছেন এসব জেলায় অবস্থিত চা বাগানের ভোটারদের কাছে। তাদের হাতে বিলি করা হচ্ছে লিফলেট-পোস্টার। বাগানের হাটবাজারগুলোয় ঝুলছে প্রার্থীদের ছবি ও মার্কাসংবলিত পোস্টার। এ দিকে বছরের পর বছর ধরে বেতন বৈষম্যসহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে চা শ্রমিকেরা আন্দোলন সংগ্রাম করলেও নির্বাচিত কমিটি না থাকায় তাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন হয়নি। সর্বশেষ ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও পরে বিবদমান দু’টি অংশের নেতৃত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব ও সঙ্ঘাতের কারণে ২০১৩ সালের মে মাসে শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত চা শ্রমিক ইউনিয়নের প্রধান কার্যালয় ‘লেবার হাউজে’ তালা ঝুলিয়ে দিয়ে সংগঠনটির সার্বিক দায়িত্ব গ্রহণ করে শ্রম মন্ত্রণালয়। এর পর থেকে অনেকটাই অকার্যকর হয়ে পড়েছিল লেবার হাউজ। চা শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট প্রায় এক লাখ চা শ্রমিকসহ তাদের সাত লাখ পোষ্যের দাবি বাগানে নিয়মিত শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ২০০ টাকায় বৃদ্ধি, রেশন বৃদ্ধি, বছরে ২০ দিন ছুটি এবং উৎসব ভাতা বাড়ানোসহ ১৮ দফা দাবিকে প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়া সংগ্রাম কমিটির নেতৃবৃন্দ বাগানে বাগানে সাধারণ শ্রমিকদের নিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা। অপর দিকে নিজেদের পক্ষে ভোট আদায়ে চা শ্রমিক গণঐক্য পরিষদের নেতারা শ্রমিকদের ঘরে ঘরে গিয়ে দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। এ দিকে এবারের নির্বাচনেও কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও সম্পাদক পদে শ্রমিক ইউনিয়নের দু’টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। চা শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির ব্যানারে সভাপতি পদে মাখন লাল কর্মকার ও সাধারণ সম্পাদক পদে রাম ভজন কৈরী এবং চা শ্রমিক গণ্যঐক্য পরিষদের ব্যানারে সভাপতি পদে বিজয় ব্যানার্জী ও সাধারণ সম্পাদক পদে সীতারাম অলমিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া ২২৮টি চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটি এবং সাতটি ভ্যালির কার্যকরী কমিটির নির্বাচনেও আলাদা আলাদাভাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উভয় প্যানেলের নেতৃবৃন্দ।  চা শ্রমিকদের বৃহৎ এই নির্বাচনের ব্যাপারে চা শ্রমিক সংগ্রাম কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী রামভজন কৈরী জানান, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তারা পূর্ণ প্যানেলে জয়লাভ করবেন। অপর দিকে, চা শ্রমিক গণ্যঐক্য পরিষদ সভাপতি পদপ্রার্থী বিজয় ব্যানার্জী জানান, তারা চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে সবসময়ই সোচ্চার ছিলেন। তারা আশাবাদি এবারের নির্বাচনে চা শ্রমিকরা তাদের প্যানেলকে নির্বাচিত করবে। নির্বাচনের সার্বিক প্রস্তুতির বিষয়ে চা শিল্প শ্রম কল্যাণ বিভাগের উপশ্রম পরিচালক মো: গিয়াস উদ্দিন জানান, বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচনের জন্য পাঁচটি জেলার আওতাধীন মোট ২০টি উপজেলার সম্পৃক্ততা থাকায় এসব উপজেলার নির্বাহী অফিসার সহকারী রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন এবং পাঁচটি জেলার পাঁচজন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করবেন। আর এসব কিছু মনিটর করবেন শ্রম অধিদফতরের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন, নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলাসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। আগামীকাল (আজ) ১০ আগস্ট ১২৮টি চা বাগানে একযোগে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীন ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

No comments:

Post a Comment