Thursday, August 7, 2014

লাশ বহুদূর:কালের কন্ঠ

তিন দিনেও হদিস মেলেনি মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটের অদূরে পদ্মা নদীতে ডুবে যাওয়া পিনাক-৬ নামের লঞ্চটির। এখনো অনুসন্ধানই চলছে। তবে দুর্ঘটনাস্থলসহ বহুদূরে নদীর ভাটিতে বিভিন্ন স্থানে ভেসে উঠছে লঞ্চযাত্রীদের লাশ। গত তিন দিনে উদ্ধার করা হয়েছে ২০টি লাশ। এর মধ্যে গতকাল বুধবারই ১৬ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ইতিমধ্যে ১১টি লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে স্বজনদের কাছে। লাশের জন্য হতভাগ্য স্বজনদের দীর্ঘ অপেক্ষা আর বুকফাটা আর্ত
নাদ ও ক্ষোভে অন্য রকম এক পরিবেশ বিরাজ করছে দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার মাওয়ায়। গতকাল ভোলার মেঘনা নদী থেকে ছয়টি, চাঁদপুরের মেঘনা থেকে তিনটি, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কাঁচিকাটা ও চরআত্রার পদ্মা নদী থেকে দুটি এবং গোসাইরহাট উপজেলার মেঘনা নদী থেকে একটি; বরিশালের কালাবদর ও মেহেন্দীগঞ্জের মেঘনা নদী থেকে শিশুসহ দুটি এবং মুন্সীগঞ্জের দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে থেকে নারীসহ দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর আগে মঙ্গলবার চাঁদপুরের মেঘনা নদী থেকে দুটি এবং সোমবার দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে থেকে আরো দুটি লাশ উদ্ধার করা হয়। মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল হাসান বাদল জানিয়েছেন, তালিকা অনুযায়ী সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত ১২২ জন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছে। মাদারীপুরের কাওড়াকান্দি থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া ঘাটে আসার পথে উঁচু ঢেউ ও স্রোতের টানে গত সোমবার সকাল ১১টার দিকে লঞ্চটি ডুবে যায়। লঞ্চে প্রায় ৩০০ যাত্রী ছিল। এর মধ্যে ১০০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ঈদের ছুটি কাটিয়ে আসা ঢাকামুখী মানুষের চাপে লঞ্চটিতে অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করা হয়েছিল। এদিকে অত্যাধুনিক সোনার যন্ত্র ব্যবহার করে নৌবাহিনী, বিআইডাব্লিউটিএ ও ফায়ার সার্ভিস তিনটি জাহাজে করে একযোগে আশপাশের ছয় কিলোমিটার এলাকার নদীর তলদেশে সন্ধান চালিয়েও গতকাল রাত ১টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত লঞ্চটির অবস্থান নিশ্চিত করতে পারেনি। লঞ্চের অবস্থান খুঁজে বের করতে শক্তিশালী যন্ত্রপাতি নিয়ে টাগবোট ‘কাণ্ডারী-২’ চট্টগ্রাম থেকে মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পৌঁছেছে।  গতকাল রাত ১২টার দিকে টাগবোটটি মাওয়ায় পৌঁছে তল্লাশি শুরু করে বলে জানিয়েছেন কাণ্ডারী-২-এর ক্যাপ্টেন মঞ্জুর। তিনি জানান, সমুদ্র জরিপে ব্যবহৃত ‘সাইড স্ক্যান সোনার’, ‘গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম’ ও ‘সাববটম প্রোপেলার’ নিয়ে এসেছে নৌযানটি। এ ছাড়া দুর্ঘটনাস্থলে রয়েছে ‘নির্ভীক’ ও ‘রুস্তম’। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান গতকাল বিকেলে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে সন্ধ্যায় মাওয়া পদ্মা সেতু রেস্টহাউসে বৈঠক করেছেন। মন্ত্রী বলেছেন, লঞ্চ উদ্ধারে সব রকম প্রচেষ্টা চলছে। তা ছাড়া প্রবল স্রোতে হয়তো লঞ্চটি ডুবে যাওয়া স্থানে নেই। বালির নিচেও চাপা পড়ে থাকতে পারে। তাই লঞ্চটির অবস্থান চিহ্নিত করা কঠিন হচ্ছে। বিআইডাব্লিউটিএর চেয়ারম্যান ড. খন্দকার শামসুদ্দোহা খন্দকার গতকাল সন্ধ্যায় জানান, দুর্ঘটনাস্থলের কাছে নদীর তলদেশে অনুসন্ধানকারী জাহাজের একটি নোঙরের সঙ্গে ভারী বস্তুর আঘাত লেগেছে। এটিই ‘পিনাক-৬’ কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। ভোলার মেঘনা থেকে শিশুসহ ছয় লাশ উদ্ধার : গতকাল সকাল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত ভোলার মেঘনা নদী থেকে শিশুসহ ছয়জনের লাশ উদ্ধার করেছেন পুলিশ ও কোস্টগার্ডের সদস্যরা। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তাঁর নাম ফাহাদ (২৩)। তিনি ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া উপজেলার উত্তর আগুরা গ্রামের লুৎফর রহমানের ছেলে। তিনি ঢাকার তেজগাঁও কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র ছিলেন। গতকাল সকাল ১০টার দিকে ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ইউনিয়নের রামদাসপুর এলাকায় মেঘনার পাড় থেকে তাঁর লাশ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইলিশা পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ওসি মো. বরকত জানান, রামদাসপুর এলাকার মেঘনায় ফাহাদের লাশ ভাসতে দেখে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে স্থানীয় লোকজন খবর দেয়। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট চৌধুরী রওশন ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ সকাল ১০টার দিকে তাঁর লাশ উদ্ধার করে। পরে ফাহাদের স্বজনরা এসে তাঁকে শনাক্ত করে এবং গ্রামের বাড়িতে লাশ নিয়ে যায়। অন্য চারটি লাশের পরিচয় উদ্ধারের জন্য মাওয়া ঘাটের তথ্যকেন্দ্রে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে বিকেলে ফাহাদের লাশ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের জন্ম হয়। বিকেলে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন সম্পন্ন হয়। ওসি জানান, সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সদর উপজেলার রামদাসপুর, কাঠির মাথা, কাচিয়া ইউনিয়নের ভাংতির খাল, মাঝের চরের কাছাকাছি এলাকার মেঘনা নদী থেকে পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া রাত ৮টার দিকে দৌলতখান উপজেলার মেদুয়ার চর এলাকার মেঘনা নদী থেকে ৪০-৪৫ বছরের এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে ৮-১০ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। তার পরনে ছিল হলুদ রঙের হাফ প্যান্ট। ১২-১৪ বছরের একটি ছেলের শরীরে ছিল কচুপাতা রঙের পায়জামা ও পাঞ্জাবি। ১৬-১৭ বছরের এক তরুণের পরনে ছিল কালো প্যান্ট ও লাল রঙের গেঞ্জি। ৫৫-৬০ বছরের এক বৃদ্ধের পরনে কোনো কাপড়চোপড় ছিল না। তবে হাতের আঙুলে একটি তামার আংটি ও কোমরে একই ধরনের দুটি চাবি ছিল। শরীয়তপুরে মিলেছে শিশুসহ তিন লাশ : ডুবে যাওয়া লঞ্চের নিখোঁজ ব্যক্তিদের স্বজনরা এখন ট্রলার নিয়ে লাশ খুঁজে বেড়াচ্ছে। গতকাল শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ও কাঁচিকাটা এবং গোসাইরহাট উপজেলার কোদালপুরের মেঘনা নদী থেকে শিশুসহ তিনজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক রামচন্দ্র দাস জানান, গতকাল সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নড়িয়ার  চরআত্রা ও কাঁচিকাটার পদ্মা নদী থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবক এবং মাদারীপুরের দুরাইল গ্রামের ইমা আক্তারের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ছাড়া গোসাইরহাটের কোদালপুরের মেঘনা নদী থেকে তিন বছরের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশ তিনটি মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লাশ ভেসে এলে উদ্ধারের জন্য পুলিশের টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। বরিশালে শিশুসহ দুই লাশ উদ্ধার : বরিশালের কালাবদর ও মেঘনা নদী থেকে এক শিশুসহ দুজনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে গতকাল সন্ধ্যায় মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার মেঘনা নদীর উলানিয়া এলাকায় এক শিশুর লাশ এবং দুপুর দেড়টার দিকে বরিশাল সদর উপজেলার কালাবদর নদী থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, লাশ দুটি উদ্ধারের পর মাওয়ায় পাঠানো হচ্ছে, যাতে তাদের স্বজনরা পরিচয় নিশ্চিত করে নিয়ে যেতে পারে। মেহেন্দীগঞ্জ থানার ওসি উজ্জ্বল কুমার দে জানান, মেঘনার উলানিয়ায় শিশুটির লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয় লোকজন খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। শিশুটির পরনে ছিল জিন্সের হাফ প্যান্ট, গায়ে সবুজ রঙের কার্টুন আঁকা গোলগলার গেঞ্জি ও পায়ে কালো রঙের চামড়ার স্যান্ডেল। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বন্দর থানার ওসি রেজাউল ইসলাম জানান, লাহারহাট ফেরিঘাটসংলগ্ন কালাবদর নদীতে এক নারীর লাশ দেখতে পেয়ে স্থানীয় লোকজন খবর দিলে পুলিশ গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে। তার পরনে ছিল কালো-হলুদ কামিজ ও খয়েরি রঙের সালোয়ারের ওপর কালো বোরকা। চাঁদপুরের মেঘনায় আরো তিন লাশ : গতকাল চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার মেঘনায় আরো তিনটি লাশ পাওয়া গেছে। উদ্ধার হওয়া লাশের মধ্যে একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তিনি ফরিদপুরের নগরকান্দার তালমা এলাকার মনিরুদ্দিন ফকিরের ছেলে জামাল হোসেন (২৫)। গতকাল সন্ধ্যায় স্বজনরা তাঁর লাশ নিয়ে গেছে। সদর উপজেলার ব্যাপারীকান্দির চরে তাঁর লাশটি ভেসে ওঠে। তিনি রাজধানীর  সবুজবাগ থানার ওসির (তদন্ত) ব্যক্তিগত গাড়িচালক ছিলেন। এ ছাড়া হাইমচরের মাঝিরবাজার এলাকা থেকে এক নারী ও এক কিশোরের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এই নিয়ে গত দুই দিনে চাঁদপুরে পাঁচটি লাশ পাওয়া গেছে। হাইমচরের নীলকমল ইউপি চেয়ারম্যান হাজি ইয়াসিন রতন জানান, তাঁর এলাকায় দুটি লাশ ভাসছে এ খবরে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত হন। পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে। এদিকে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার আমির জাফর জানান, চাঁদপুরের মেঘনায় পুলিশ, কোস্টগার্ড, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা টহল দিচ্ছেন, যাতে কোনো লাশ দক্ষিণের ভাটিতে চলে যেতে না পারে। নৌমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন : নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সোনার সিস্টেমের মাধ্যমে অনুসন্ধান কাজ অব্যাহত রয়েছে। তিনটি সোনার সিস্টেম স্ক্যানার কাজ করছে। দড়ি দিয়ে টেনে ডুবে যাওয়া লঞ্চটি অনুসন্ধানের চেষ্টা করছে ফায়ার সার্ভিস। অনুসন্ধানী জাহাজ কাণ্ডারীর-২ বিলম্ব প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, মঙ্গলবার চাঁদপুরের কাছে এসে জাহাজটি নোঙর করেছিল। নোঙরটি বালুতে আটকে গেলে সেখান থেকে জাহাজটি ছেড়ে আসতে বিলম্ব হয়। কাণ্ডারী-২ মাটির নিচে ১৫-১৮ ফিট গভীরে অনুসন্ধান কাজ চালাতে পারবে। মন্ত্রী বলেন, মাল্টিবিন ইকো সাউন্ডার যন্ত্র সহকারে আরো একটি জাহাজ ডাকা হয়েছে। এটি মাটির নিচে কোনো ধাতব বস্তু থাকলে তা জানিয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি সাইড স্ক্যানারের কাজও করবে। মন্ত্রী আরো বলেন, ভাটি অঞ্চলের চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল ও শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসককে নদীতে ভেসে ওঠা লাশ উদ্ধারের কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৪ তারিখ ডিজি শিপিংয়ের সঙ্গে বিআইডাব্লিউটিএর একটি প্রতিনিধিদল মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে লঞ্চের সার্ভে কাজ চালাবে বলে জানান নৌপরিবহনমন্ত্রী। তিনি বলেন, যেসব লঞ্চের সার্ভে সনদে গরমিল পাওয়া যাবে সেগুলোর রুট পারমিট বাতিল করা হবে। এ সময় এ নৌরুটে লঞ্চের সংকট সৃষ্টি হলে বিআইডাব্লিউটিসি থেকে সি-ট্রাক দেওয়া হবে। এরপর এ নৌরুটে প্রাইভেট সেক্টর থেকে বড় বড় লঞ্চ নিয়ে আসা হবে। মনিটরিং সেল সম্পর্কে মন্ত্রী বলেন, ঈদের আগে পরে পাঁচ দিন করে এই মনিটরিং সেল কার্যকর ছিল। কিন্তু ছয় দিনের মাথায় দুর্বল মনিটরিংয়ের সময় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া লঞ্চটি ছিল একটি কাটা সার্ভিস বা পরিবহনের লঞ্চ। কাওড়াকান্দি থেকে নির্দিষ্ট পরিবহনের যাত্রী নিয়ে লঞ্চটি ছেড়ে গেলেও কাঁঠালবাড়ী থেকে অবৈধভাবে লোকাল যাত্রী তুলেছিল লঞ্চটি। ক্ষুব্ধ স্বজনদের হামলা : গতকাল সন্ধ্যায় দুই দফায় মিডিয়াকর্মীদের ওপর হামলা চালায় ক্ষুব্ধ স্বজনরা। এর আগে মঙ্গলবার সকালেও সাংবাদিকদের ওপর তারা হামলা চালিয়েছিল। সাংবাদিকদের পাশাপাশি মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশের সাব-কন্ট্রোল রুম ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ক্যাম্পেও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে স্বজনরা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় ক্ষুব্ধ স্বজনরা মাছরাঙা টেলিভিশনের গাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা বলতে থাকে, মিডিয়া শুধু লোকদেখানো কাজ করছে। তারা শুধু বলে যাচ্ছে লঞ্চের সন্ধানে কাজ চলছে। কোথায় সন্ধান কাজ? সন্ধান কাজ যদি চলেই থাকে তাহলে কেন এখনো লঞ্চ উদ্ধার হচ্ছে না? পরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি শান্ত করে। এর আধাঘণ্টা পর আবারও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় স্বজনরা। এ সময় তারা যমুনা টেলিভিশনের কর্মীদের ওপর হামলা চালায়। মঙ্গলবার সকালে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশনের অভিযোগ এনে মাওয়া ঘাটে পেশাগত দায়িত্বরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় ক্ষুব্ধ স্বজনরা। এতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বাংলাভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার সিকান্দার রেমান ও ক্যামেরা ম্যান মনিরুল ইসলাম আহত হন। থেমে নেই বেপরোয়া লঞ্চ চলাচল : মাওয়ায় পিনাক-৬ ডুবে যাওয়ার তিন দিন না পেরোতেই উত্তাল নদীতে আইন লঙ্ঘন করে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বেপরোয়াভাবে চলাচল শুরু করেছে মাওয়া-কাওড়াকান্দি রুটের লঞ্চগুলো। এ রুটের লঞ্চগুলোর ৮৫ থেকে ১৬০ জন ধারণক্ষমতা থাকলেও অধিকাংশ লঞ্চই চলছে ২০০ জনের অধিক যাত্রী নিয়ে। লঞ্চগুলোয় নেই তেমন কোনো নিরাপত্তা উপকরণও। অভিযোগ উঠেছে, বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে লঞ্চগুলো অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে চলাচল করলেও কোনো ভ্রৃক্ষেপ নেই বিআইডাব্লিউটিএর কর্মকর্তাদের। বুধবার সরেজমিনে মাওয়া ঘাটে এমন চিত্র দেখা যায়। দেখা গেছে, দায়িত্বশীল সবার উপস্থিতিতেই চলছে অতিরিক্ত যাত্রী পারাপার। লঞ্চের গায়ে এর দৈর্ঘ্য, যাত্রী ও মালামাল ধারণক্ষমতা লেখার নিয়ম থাকলেও মাওয়া ঘাটে কোনো লঞ্চেই এ তথ্য দেখা যায়নি। মাওয়া-কাওড়াকান্দি রুটে চলাচলরত প্রিন্স অব শিবচরের যাত্রী ধারণক্ষমতা ৯৭। কিন্তু লঞ্চটিতে যাত্রী ওঠানো হয় ১৭০ জন। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চালক লাভলু মোল্লা বলেন, ‘আজকে আবহাওয়া ভালো, পদ্মা শান্ত। তাই যে পরিমাণ যাত্রী তুলেছি, তাতে কোনো সমস্যা হবে না। ১৮ বছর যাবৎ এ রুটে লঞ্চ চালাচ্ছি, কখনো কোনো সমস্যায় পড়িনি।’ বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডাব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, বিআইডাব্লিউটিএর নৌ-ট্রাফিক বিভাগ গন্তব্য থেকে লঞ্চ ছাড়ার আগে লঞ্চের ধারণক্ষমতার সনদ পরীক্ষা করে যাত্রী গুনে দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। প্রতিটি লঞ্চে প্রয়োজনীয়সংখ্যক বয়া ও লাইফ জ্যাকেট না থাকলে লঞ্চ চলাচল বন্ধ করে দেওয়ারও নিয়ম রয়েছে। মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌপথে নৌ-ট্রাফিকের একজন পরিদর্শক কর্মরত রয়েছেন। তিনি মাওয়া ঘাটে দায়িত্ব পালন করেন। তবে এত বড় দুর্ঘটনার পরও কোনো লঞ্চই মানছে না বিআইডাব্লিউটিএর এসব নিয়ম। [প্রতিবেদন তৈরিতে তথ্য দিয়েছেন মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধি মো. মাসুদ খান, ফরিদপুরের নিজস্ব প্রতিবেদক নির্মলেন্দু চক্রবর্তী, শরীয়তপুর প্রতিনিধি আবদুল আজিজ শিশির, চাঁদপুর প্রতিনিধি ফারুক আহম্মদ, ভোলা প্রতিনিধি শিমুল চৌধুরী, ঝালকাঠি প্রতিনিধি কে এম সবুজ, শিবচর (মাদারীপুর) প্রতিনিধি প্রদ্যুৎ কুমার সরকার ও বরিশাল অফিসের এস এম মঈনুল ইসলাম]

No comments:

Post a Comment