Thursday, December 4, 2014

বাইরের বক্তব্য উত্তাপ ছড়ায় নিষ্প্রাণ সংসদে:নয়াদিগন্ত

বিএনপিসহ দেশের সরকারবিরোধী প্রধান দলগুলো বর্তমান দশম জাতীয় সংসদে নেই। কিন্তু এসব দলের শীর্ষ নেতাদের বাইরে দেয়া বক্তব্য উত্তাপ ছড়ায় সংসদে। সেই বক্তব্য নিয়ে একতরফা সমালোচনা ও আক্রমণাত্মক বক্তব্যে সরগরম হয়ে ওঠে সংসদ। সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকা জাতীয় পার্টির সদস্যসহ সরকারি জোটের সদস্যরাও সেই সমালোচনা ও আক্রমণাত্মক বক্তব্য সমর্থন করে বক্তব্য রাখেন। পাল্টাবক্তব্য না থাকায় একতরফা উত্তেজনা লক্ষ করা যা
য়। আর এভাবে সংসদে না থেকেও বিএনপি ও তাদের শরিক দলগুলো সংসদে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়। সংসদের সদ্যসমাপ্ত চতুর্থ অধিবেশনে এ বিষয়টি জোরালোভাবে ফুটে ওঠে। কুমিল্লার জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্য নিয়ে গত রোববার অধিবেশনের শেষ দিনটি বেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। এ নিয়ে সরকারি দলের সাবেক দুই মন্ত্রীর পাশাপাশি খোদ প্রধানমন্ত্রীও দীর্ঘ বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া ৭১ বিধির মনোযোগ আকর্ষণ নোটিশের আলোচনা, প্রশ্নোত্তরসহ বিভিন্ন কার্যাবলির সময়ও বিএনপি এবং তাদের শরিকদের প্রসঙ্গ এনে সুযোগমতো বক্তব্য দেন সরকারি দলের মন্ত্রী-এমপিরা। গত ১৩ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ১০ কার্যদিবস চলা অধিবেশনটি ছিল একেবারেই নিষ্প্রাণ। শুরু থেকেই দিনের কার্যসূচিতে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিল না। ফলে বেশির ভাগ দিনই গতানুগতিক প্রশ্নোত্তর, নোটিশের আলোচনা, দু-একটি বিল উত্থাপন, কয়েকটি বিল পাস এবং কয়েকটি বিলের রিপোর্ট উত্থাপনের মধ্য দিয়েই চলে অধিবেশন। এতে যোগ দেয়ার ব্যাপারে সংসদ সদস্যদের আগ্রহও কম লক্ষ করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরের দিন সংসদে সাধারণত উপস্থিতি অতীতে বেশি লক্ষ করা গেলেও এবার প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তরের দিনও উপস্থিতি ছিল অনেক কম। বিশেষ করে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের উপস্থিতি ছিল কম। সবশেষ গত বুধবার প্রশ্নোত্তরের দিন ৩৫০ জন সদস্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ৭০ জনের মতো। প্রতিদিন বিকেল ৪টায় শুরু হওয়া অধিবেশনের বেশির ভাগ দিনই অধিবেশন সন্ধ্যার মধ্যেই শেষ হয়েছে। অধিবেশন ১২ দিবস চালানোর সিদ্ধান্ত হলেও দুই দিন কমিয়ে ১০ কার্যদিবস চালানো হয়। মাঝে দুই দিন অধিবেশন ছিল না।  তবে সংক্ষিপ্ত অধিবেশন হলেও এরই মধ্যে দুই দিন পৃথক দু’টি বিষয়ে সাধারণ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সিপিএ-এর চেয়ারপারসন ও সাবের হোসেন চৌধুরী আইপিও-এর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় ধন্যবাদ প্রস্তাব আনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসঙ্ঘ কর্তৃক প্রদত্ত সাউথ সাউথ পুরস্কার পাওয়ায় রোববার তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে আরেকটি প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। আর এই দুই প্রস্তাবের ওপরই দীর্ঘ আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।  আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না এবং মুক্তিযোদ্ধাদের দল নয়Ñ শনিবার কুমিল্লায় দেয়া খালেদা জিয়ার এমন বক্তব্য ঘিরেই গত রোববার সংসদ অধিবেশনে একতরফা উত্তেজনা দেখা দেয়। বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হলে তিনি প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপন করেন এবং ৭১ বিধির আলোচনা স্থগিত করেন। তার পরই পয়েন্ট অব অর্ডারে সাবেক মন্ত্রী আবুল কালাম আযাদ ও ড. হাছান মাহমুদ খালেদা জিয়ার বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য রাখেন।  আবুল কালাম আযাদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। খালেদা জিয়া তো যুদ্ধের সময় সেনাবাহিনীর অধীনে ছিলেন। তিনি কী করে এসব জানবেন। আওয়ামী লীগ নাকি গণতান্ত্রিক দল নয়। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে বলেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচন দিয়েছে। নির্বাচনে তিনি অংশ নেননি। এখন তিনি নানা কথা বলে বেড়াচ্ছেন। আমেরিকার যিনি উপমন্ত্রীও নন, সহকারী মন্ত্রী তার কাছে বলে বেড়াচ্ছেন। খালেদা জিয়ার স্মরণশক্তি কমে গেছে। তিনি যেন স্মরণশক্তি বৃদ্ধির জন্য দাওয়াই গ্রহণ করেন। একই প্রসঙ্গে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, খালেদা বলেছেন, আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল নয়। খালেদা জিয়া তার স্বামীর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে পাকিস্তানিদের আতিথেয়তায় পুরো ৯ মাস ছিলেন। যে সেনাকর্মকর্তার আতিথেয়তায় ছিলেন সে সেনাকর্মকর্তার মৃত্যুর পর সব প্রটোকল ভঙ্গ করে প্রধানমন্ত্রী না থেকেও শোক প্রকাশ করেন। এতে বোঝা যায়, তিনি কার পক্ষের লোক।  সবশেষ সমাপনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খালেদা জিয়ার কুমিল্লার বক্তব্যের জবাব দেন। তিনি বলেন, আমরা বিএনপির অন্তর্জ্বালা জানি। তার অবস্থা এখন না ঘরকা না ঘাটকা অবস্থায় চলে গেছে। এটাই হচ্ছে ওনার দুঃখ।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রী নির্বাচনে আসেনি, সংসদে নেই, এটা এক দিক থেকে মন্দের ভালো। সংসদের এখন যে পরিবেশ, তারা থাকতে তা ছিল না। তারা সংসদে কী না করেছে। স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের সংসদে আনা যেতো না। খিস্তিখেউড়, ফাইল ছোড়াছুড়ি, তারা কী না করেছে। এখন এই নভেম্বর পর্যন্ত সংসদে এসব নেই। অপবিত্র কিছু হয়নি। সে দিক থেকে জাতি বেঁচে গেছে। জাতীয় পার্টির দিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, আজকে বিরোধী দল সঠিক গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের দল না। তাহলে মুক্তিযুদ্ধ করেছে কে? সে সময় কি বিএনপির জন্ম হয়েছে? প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের আন্দোলন নাকি ভোটের ও ভাতের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে? কয়েক শ’ মানুষ হত্যা করে এখন তিনি ভোটের ও ভাতের অধিকারের কথা বলেন। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নাকি খুব খারাপ? তিনি তো এতিমের অর্থ মেরে খেয়েছেন। এখন সে মামলায় হাজিরা দিতেও ভয় পান। চোরের মনে পুলিশ পুলিশ। কেস মোকাবেলা করতে ভয় পান কেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে মানুষের ভোটের অধিকার আছে। তার প্রমাণ ৫ জানুয়ারি হাজার চেষ্টা করেও উনি নির্বাচন ঠেকাতে পারেননি। কয়েক শ’ মানুষকে হত্যা করে তিনি কিসের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান। ইলেকশন না করে খালেদা জিয়া ভুল করেছেন। তিনি বলছেন, একদলীয় শাসন চলছে। একদলীয় হলে তিনি কিভাবে বক্তব্য দিতে পারেন। জিয়া অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে বিএনপির জন্ম দিয়েছে।  সংসদের বাইরে থাকা বিএনপি চেয়ারপারসনের বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ সমালোচনা ও পাল্টা বক্তব্যের মধ্য দিয়েই উত্তাপ ছড়িয়ে অধিবেশনটি শেষ হয়।

No comments:

Post a Comment