Tuesday, August 12, 2014

মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতা গুটিয়ে নিতে সম্প্রচার নীতিমালা: তথ্যমন্ত্রী:প্রথম অালো

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু দাবি করেছেন, সম্প্রচার নীতিমালা গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধের জন্য নয়, বরং এর প্রতিটি ধারা গণমাধ্যমের জন্য কল্যাণকর ও সম্প্রচারে সহায়ক। ঘোষিত সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে গতকাল সোমবার সচিবালয়ের তথ্য অধিদপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী এ কথা বলেন। তাঁর দাবি, সম্প্রচার নীতিমালায় তথ্য মন্ত্রণালয়কে কোনো ক্ষমতা দেওয়া হয়নি; বরং মন্ত্রণালয় সম্প্রচার মাধ্যমের ওপর থেকে বিদ্যমান দায়িত
্ব গুটিয়ে নিয়ে কমিশনের হাতে সেই দায়িত্ব অর্পণের জন্য স্বপ্রণোদিত হয়ে এই নীতিমালা প্রণয়ন করেছে। সম্প্রচার নীতিমালা নিয়ে কয়েক দিন ধরে চলা সমালোচনার জবাব দেওয়ার জন্যই এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সম্প্রচার মাধ্যমে সংবাদ, অনুষ্ঠান ও বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিধিনিষেধ আরোপ করে ৪ আগস্ট মন্ত্রিসভায় সম্প্রচার নীতিমালা অনুমোদন দেওয়া হয়। দুই দিন পরই সেটির গেজেট প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন সাংবাদিক, মানবাধিকার ও রাজনৈতিক সংগঠন এবং ব্যক্তিপর্যায়ে সমালোচনা হচ্ছে। তথ্যমন্ত্রী বিভিন্ন বিষয় ধরে ধরে সমালোচনার জবাব দেন। তিনি বলেন, কণ্ঠরোধের অভিযোগের বিষয়টি সম্পূর্ণ অমূলক ও কল্পনাপ্রসূত। ঘোষিত সম্প্রচার নীতিমালায় বলা হয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী ও আইনশৃঙ্খলায় নিয়োজিত কোনো বাহিনীর প্রতি কটাক্ষ, বিদ্রূপ বা পেশাগত ভাবমূর্তি বিনষ্টকারী দৃশ্য বা বক্তব্য প্রচার করা যাবে না। এ নিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এ ধারায় সত্য প্রকাশে বিরত থাকতে বলা হয়নি। কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী যদি শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেন, তার বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাধা নেই। কিন্তু কোনো কটাক্ষ বা বিদ্রূপ বা সেই সংস্থার বিরুদ্ধে ঢালাও মন্তব্য করা অনৈতিক। এ ক্ষেত্রে তিনি ‘দ্য কোড ফর সেন্সরশিপ অব ফিল্ম ইন বাংলাদেশ, ১৯৮৫’-এর সংশ্লিষ্ট ধারা তুলে ধরে বলেন, কোনো বাহিনীর সদস্যদের অনৈতিক কাজ সংশোধনের লক্ষ্যে ধারণকৃত বিষয়বস্তু প্রদর্শনের অনুমতি রয়েছে। মন্ত্রী দাবি করেন, সংবিধানের ৩৯ ধারা সুমুন্নত রেখে এবং দেশের প্রচলিত আইনের সঙ্গে সংগতি রেখেই সম্প্রচার নীতিমালা তৈরি করা হয়েছে। হাসানুল হক ইনু বলেন, এই সম্প্রচার নীতিমালা নির্দেশনামূলক। এটা কোনো আইন নয়। এর আলোকে প্রণীত আইন দিয়ে গঠিত সম্প্রচার কমিশন সম্প্রচার মাধ্যমসংক্রান্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করবে। আর যত দিন আইন না হচ্ছে, তত দিন প্রচলিত আইন প্রযোজ্য হবে। যেমন যে ১৪ শর্তে টেলিভিশনের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তা ভঙ্গ করলে লাইসেন্স বাতিল করা যাবে। সম্প্রচার কমিশন কবে গঠন করা হবে, তার উল্লেখ না থাকায় অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘যত দ্রুত সম্ভব সম্প্রচার কমিশন গঠনের জন্য আমরা কাজ করে যাব। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সব কাজ বন্ধ করে হলেও আইন ও কমিশন গঠনের কাজ করতে।’ অংশীজনদের মতামত নিয়েই এই আইন করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। কমিশন গঠনে পাঁচ-ছয় মাস সময় লাগতে পারে বলে জানান তিনি। হাসানুল হক ইনু বলেন, কমিটির সদস্যদের যুক্তিযুক্ত প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে। কোনো কোনো পক্ষ এই নীতিমালা বাতিল করে নতুন করে করার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রী বলেন, আগামীতে এ নীতিমালার ভিত্তিতে আইন হবে। তাই এই নীতিমালার কোনো ব্যাখ্যা থাকলে আইন প্রণয়নের সময়ে সেই ব্যাখ্যা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এ জন্য মন্ত্রী সব অংশীজনকে আইন প্রণয়নের সময় আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান। তথ্যমন্ত্রী বলেন, গঠিত কমিশন সম্প্রচার সম্পর্কিত অভিযোগের বিচার করতে, নিষ্পত্তি করতে, প্রয়োজনে জরিমানা করবে। আর প্রচলিত আইন ভঙ্গ করা হলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা হবে। সাংবাদিকদের সম্পর্কে সমাজকল্যাণমন্ত্রী মহসিন আলীর অশালীন মন্তব্য সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসানুল হক বলেন, মহসিন আলী খুবই হাসিখুশি ও রসিক মানুষ। তিনি যা বলেছেন তা প্রকাশ করেছেন, উনি দুঃখ প্রকাশ করেও বক্তব্য দিয়েছেন। তবে এটি উনার ব্যক্তিগত বক্তব্য, সরকারের ভাষ্য নয়। এ সময় তথ্যমন্ত্রী সরকার ও মহসিন আলীর পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করেন। ঈদের আগের দিন বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে বিতর্কিত ব্যক্তি মুসা বিন শমসেরকে কৃতী বাঙালি হিসেবে উপস্থাপন করার বিষয়ে করা প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, দু-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

No comments:

Post a Comment