Thursday, August 14, 2014

পাস ও জিপিএ ৫ বেড়েছে:কালের কন্ঠ

উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষায় এবার গড় পাসের হার ৭৮.৩৩ শতাংশ। সারা দেশে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৭০ হাজার ৬০২ জন। পাসের হার, জিপিএ ৫ প্রাপ্তি, শতভাগ পাস ও শূন্য পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- সব সূচকেই অগ্রগতি হয়েছে। এর মাধ্যমে আবার উন্নতির ধারায় ফিরেছে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। কয়েক বছর ক্রমাগত উন্নতি করলেও গত বছর পাসের হার কমে গিয়েছিল। গতবার পাসের হার ছিল ৭৪.৩০ শতাংশ। এর আগের বছর প
াস করেছিল ৭৮.৬৭ শতাংশ। এবার পাসের হারে ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে আছে ছাত্রীরা। ২০১৪ সালের আট সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের আলিম, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি (ভোকেশনাল) এবং ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ডিআইবিএস (ডিপ্লোমা ইন বিজনেস স্টাডিজ) পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়েছে গতকাল বুধবার। সকালে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ফলের অনুলিপি তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে। এরপর দুপুরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করেন এবং এর বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন শিক্ষামন্ত্রী। গণভবনে গতকাল সব বোর্ডের ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ছবি : বাসস পরীক্ষায় ভালো ফলের জন্য শিক্ষামন্ত্রী তাঁর মন্ত্রণালয়ের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, সৃজনশীল পরীক্ষা পদ্ধতি চালু এবং এ বিষয়ে শিক্ষকদের ব্যাপক প্রশিক্ষণ দেওয়ার ফলে ইতিবাচক অগ্রগতি হচ্ছে। বেশিসংখ্যক পাস এবং উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের যোগ্যতা নিয়ে বিভিন্ন মহলের প্রশ্নের কঠোর সমালোচনা করেন শিক্ষামন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আধুনিক যুগে বেশি পাস নিয়ে কোনো প্রশ্ন হতে পারে না। কেউ ফেল করার জন্য পড়ে না। কোনো শিক্ষক কিংবা অভিভাবক ফেল করানোর জন্য পড়ান না। শিক্ষার্থীরা যোগ্যতা দিয়েই পাস করছে। আমাদের প্রজন্মের চেয়ে এ প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বেশি জানে।’ গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে ৪.০৩ শতাংশ। এ ছাড়া জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী বেড়েছে ১২ হাজার ৪০৫ জন। গতবার জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৫৮ হাজার ১৯৭ জন। ১০ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে আট হাজার ১০৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সর্বমোট ১১ লাখ ৪১ হাজার ৩৭৪ জন শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অংশ নিয়েছে ১১ লাখ ২৯ হাজার ৯৭২ জন। এদের মধ্যে পাস করেছে আট লাখ ৮৫ হাজার ৭০ জন। গত বছর পাস করেছিল সাত লাখ ৪৪ হাজার ৮৯১ জন। এবার ১০ বোর্ডে গড় পাসের হার ৭৮.৩৩ শতাংশ হলেও আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসিতে পাসের হার ৭৫.৭৪ শতাংশ। গত বছর এই হার ছিল ৭১.১৩ শতাংশ। ২০১২ সালে ছিল ৭৬.৫০ শতাংশ। বোর্ডগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভালো করেছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। এ বোর্ডে পাসের হার ৯৪.০৮ শতাংশ। গতবার এ হার ছিল ৯১.৪৬ শতাংশ। কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮৫.০২ শতাংশ। গতবার এই হার ছিল ৮৫.০৩ শতাংশ। সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে পাসের হার সবচেয়ে বেশি ঢাকা বোর্ডে, ৮৪.৫৪ শতাংশ। আর সবচেয়ে কম পাসের হার যশোর বোর্ডে, ৬০.৫৮ শতাংশ। অন্যান্য বোর্ডের মধ্যে সিলেট বোর্ডে ৭৯.১৬ শতাংশ, রাজশাহী বোর্ডে ৭৮.৫৫ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৪.১৪ শতাংশ, বরিশাল বোর্ডে ৭১.৭৫ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৭০.১৪ শতাংশ এবং চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭০.০৬ শতাংশ পাস করেছে। বিদেশে অনুষ্ঠিত পাঁচটি কেন্দ্রে পাসের হার ৭২.৫১ শতাংশ। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চার লাখ ৬৭ হাজার ২১৪ জন ছাত্র এবং চার লাখ ১৭ হাজার ৮৫৬ জন ছাত্রী। পাসের হারে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীরা এগিয়ে আছে। ছাত্রীদের মধ্যে পাসের হার ৭৮.৮৬ শতাংশ, আর ছাত্রদের ৭৭.৮৬ শতাংশ। ছাত্রদের মধ্যে পূর্ণ জিপিএ পেয়েছে ৩৮ হাজার ৭৮৭ জন। আর ছাত্রীদের মধ্যে পেয়েছে ৩১ হাজার ৮১৫ জন। শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এবারও বেড়েছে। এবার শতভাগ পাস করেছে এক হাজার ১৪৭টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। গতবার এ সংখ্যা ছিল ৮৪৯। ২০১২ সালে ছিল এক হাজার ৩৬টি। শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও এবার কমেছে। গতবার ছিল ২৫টি, এবার ২৪টি। এবার এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। এবার এইচএসসির বাতিল হওয়া ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র ছাড়াও ঢাকা বোর্ডের গণিত দ্বিতীয় পত্র সম্পূর্ণ এবং রসায়ন প্রথম পত্র ও দ্বিতীয় পত্রের ফাঁস হওয়া প্রশ্নের সঙ্গে আংশিক মিলে যায় বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। নতুন প্রশ্নপত্র ছাপিয়ে এসব পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। এবার ফল ভালো হওয়ায় বিশেষ করে ঢাকা বোর্ডের ভালো করার পেছনে প্রশ্নপত্র ফাঁস কোনো ভূমিকা রেখেছে কি না জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী ‘না’ সূচক জবাব দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা সতর্ক ছিলাম। এ কারণে কোনো প্রভাব পড়েনি।’ প্রতিটি বোর্ডের শীর্ষ ২০ প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। শীর্ষ প্রতিষ্ঠান বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পাঁচটি প্যারামিটার অনুসরণ করা হয়ছে। এগুলো হলো নিবন্ধিত প্রার্থীদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থীর পাসের হার, শতকরা পাসের হার, মোট পরীক্ষার্থীদের মধ্যে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির হার, পরীক্ষার্থীর সংখ্যা এবং প্রতিষ্ঠানের গড় জিপিএ। শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট, সংশ্লিষ্ট সব পরীক্ষা কেন্দ্র বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওয়েব মেইল) এবং এসএমএসের মাধ্যমে একযোগে ফল প্রকাশ করা হয়। দুপুর দেড়টার পর থেকে শিক্ষার্থীরা ফল জানতে পারে। ফল নিয়ে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চিরাচরিত দৃশ্যের অবতারণা হয়। পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা বাঁধভাঙা আনন্দে মেতে ওঠে। আর যারা ফেল করে তাদের অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়ে। গত ৩ এপ্রিল সারা দেশে একযোগে এইচএসসি, আলিম ও এইচএসসি (বিএম/ভোকেশনাল) এবং ডিআইবিএস পরীক্ষা শুরু হয়। পরীক্ষা ৫ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ৮ জুন শেষ হয়। প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ার কারণে ঢাকা বোর্ডে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা ৮ জুন অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষা হয় দুই হাজার ৩৫২টি কেন্দ্রে। প্রধানমন্ত্রী বললেন, পাসের হার আরো বাড়বে : চলতি বছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলে আনন্দ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সবার কাছে পৌঁছে দিতে পারলে শিক্ষার মানও বাড়ানো সম্ভব হবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ ১০টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে গতকাল সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী অনলাইনে পরীক্ষার ফল উন্মুক্ত করেন এবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দিনাজপুরের কয়েক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলেন। দিনাজপুরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী সেঁজুতি হক, দিনাজপুর সরকারি কলেজের ছাত্র তমাল চন্দ্র এবং সদর উপজেলার উথরাইল সিদ্দিকিয়া আমীন মাদ্রাসার মোহাইমিনুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেন। ওই সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী কিছু লোকের কথায় দুঃখ পান। কিছু লোক আছে যাদের কাজই সমোলোচনা করা। ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ এটা মনে করলে সঠিক কাজ করা যাবে না।” বাংলা ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় ‘পরশ্রীকাতরতা’ শব্দটি নেই- এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কে কি বলল এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।’ শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পাসের হার আগামী দিনে আরো বাড়বে। প্রতি জেলায় বেসরকারি, না হয় সরকারি একটি করে বিশ্ববিদ্যালয় করে দেওয়ারও ঘোষণা দেন তিনি। পুনর্নিরীক্ষণ : পুনর্নিরীক্ষণের জন্য এসএমএসের মাধ্যমে ১৪ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত আবেদন গ্রহণ করা হবে। এ জন্য শুধু টেলিটক মোবাইল ফোন থেকে মেসেজ অপশনে গিয়ে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে স্পেস দিয়ে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। প্রতিটি বিষয় বা পত্রের জন্য ১৫০ টাকা ফি প্রযোজ্য। ফিরতি এসএমএসে আবেদন ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেওয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর দেওয়া হবে। আবেদনে সম্মত থাকলে মেসেজ অপশনে গিয়ে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে মোবাইল ফোন নম্বর দিয়ে পুনরায় ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। যেসব বিষয়ের দুটি পত্র (যেমন বাংলা ও ইংরেজি) রয়েছে, সেসব বিষয়ে একটি বিষয় কোডের বিপরীতে আবেদন দুটি পত্রের আবেদন হিসেবে বিবেচিত হবে এবং আবেদন ফি ৩০০ টাকা নেওয়া হবে। একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের আবেদন করা যাবে, এ ক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে কমা দিয়ে লিখতে হবে।  

No comments:

Post a Comment