সঙ্কটে পড়েছে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি। পার্টির একটি অংশ প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে দল ছেড়ে যাওয়ায় এ সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। অন্য দিকে এই অংশটির বিরুদ্ধেও পার্টির সাধারণ সম্পাদকসহ পুরো দল ব্যবস্থা নিয়েছে। আর এ ধরনের সঙ্কটে দলটি কার্যত ভাঙনের মুখে পড়তে যাচ্ছে। শিগগিরই দল থেকে বেরিয়ে পড়া অংশটি নতুন পার্টি করবে বলে জানা গেছে। সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নতুন দলের ঘোষণা দেয়া
হবে। জানা গেছে, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রেসিডিয়ামের তিনজনসহ বেশির ভাগ নেতাকর্মী বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি ছেড়ে চলে গেছেন। পার্টির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানান সম্পর্কোচ্ছেদকারী প্রেসিডিয়ামের তিন সদস্যের অন্যতম নাসিরউদ্দীন আহমেদ নাসু। তিনি জানান, পার্টির কন্ট্রোল কমিশনের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম লাকিও দলের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। এ পদটিও প্রেসিডিয়াম সদস্য মর্যাদার। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য হচ্ছেন মোট পাঁচজন। তারা হলেন সাইফুল হক, বহ্নিশিখা জামালী, নাসিরউদ্দীন আহমেদ নাসু, রাজা মিয়া ও শিবলুল বারী রাজু। এ দিকে গত রোববার ওয়ার্কার্স পার্টির সভায় ধারাবাহিক মিথ্যাচার, প্রতারণা, নেতৃত্বের চরিত্র হনন এবং পার্টির নীতি, আদর্শ ও শৃঙ্খলাবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকায় পার্টি গঠনতন্ত্রের ২৫ ধারার ২ ও ৩ উপধারা অনুযায়ী পার্টির কেন্দ্রীয় সদস্য নাসিরুদ্দীন আহমেদ নাসু ও রাজা মিয়াকে পার্টি থেকে বহিষ্কার এবং বিকল্প সদস্য মোফাজ্জল হোসেন মোস্তাককে পার্টির সব দায়-দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হয়। নয়া দিগন্তকে সাইফুল হক জানান, পার্টিতে একটি অংশ দীর্ঘ দিন ধরে দল ও গঠনতন্ত্রবিরোধী কার্যকলাপে জড়িত। রোববার এসব নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা ছিল। গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজের জন্য তাদের শোকজ করার কথা। এ কারণেই এরা আগেভাগে সরে গেছেন। পার্টিতে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার বদলে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ প্রসঙ্গে সাইফুল হক বলেন, এগুলো শঠতা, অসত্য নোংরা বক্তব্য। তিনি বলেন, পার্টির সংখ্যাগরিষ্ঠ কেউ নেই ওদের সাথে। নয়া দিগন্তকে নাসিরউদ্দীন আহমেদ নাসু জানান, পার্টির প্রেসিডিয়ামের তিনজন, কেন্দ্রীয় কমিটির সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ, শ্রেণী গণসংগঠনের বেশির ভাগ নেতাকর্মী বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে সম্পর্ক ছেদ করেছে। গতকাল এক বিবৃতিতে নাসিরউদ্দীন আহমেদ নাসুসহ প্রেসিডিয়ামের সদস্যরা এ ব্যাপারে জানান, ২০০৪ সালে রাশেদ খান মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে বেরিয়ে একই ধাঁচের আরেকটি পার্টি গড়ে তোলার উদ্যাগ নিতে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক নীরব ছিলেন। বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি গঠনের সময়ে কথা ছিল আমরা একটি পার্টি প্রক্রিয়া গড়ে তুলব। সেখানে ঐকমত্য গড়ে তোলার জন্য মতাদর্শিক সংগ্রাম জারি রাখব। কিন্তু বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক শুরুতেই সবার মতামত অগ্রাহ্য করে পার্টি ঘোষণা দিয়ে বসলেন। বিপ্লবী পার্টি গড়ে তোলার সব নিয়মনীতি জলাঞ্জলি দিলেন। যাকে-তাকে পার্টিতে এনে দলভারী করার পথ নিলেন। স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতার বদলে স্বেচ্ছাচারিতা, গণতান্ত্রিক কেন্দ্রিকতার বদলে আমলাতান্ত্রিকতা জারি রাখলেন। তার আচরণ উপজাতি সরদারের মতো হতে থাকল। এই প্রোপটে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট প্রেসিডিয়ামের তিনজন (প্রেসিডিয়ামের অপর দুই সদস্য সাইফুল হক ও তার স্ত্রী বহ্নিশিখা জামালী)। এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বেশির ভাগ সদস্যসহ শ্রেণী-গণসংগঠনের বেশির ভাগ সদস্য পার্টির সাথে সব রাজনৈতিক-সাংগঠনিক সম্পর্ক চ্ছিন্ন করার কথা ঘোষণা করেছেন বলে নাসিরউদ্দিন নাসু জানান। ২০০৪ সালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে বেরিয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করা হয়। বর্তমানে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতৃত্বে রয়েছেন রাশেদ খান মেনন। আদর্শ ও শৃঙ্খলাবিরোধী অপতৎপরতায় লিপ্ত থাকার অভিযোগ এনে ২০০৪ সালে মেননের নেতৃত্ব থেকে বেরিয়ে এসেই বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি গঠন করা হয়।
No comments:
Post a Comment