Thursday, September 11, 2014

ঘটনার আগে পরে ৩ সিরাজের যোগসূত্র:নয়াদিগন্ত

খিলগাঁওয়ে ছিনতাই এবং পিতা-পুত্র হতাহতের ঘটনায় তিন সিরাজের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে এক সিরাজ গ্রেফতার হয়েছেন, এক সিরাজকে খুঁজছে পুলিশ এবং আরেক সিরাজ হলেন ঘটনাকালীন খিলগাঁও থানার ওসি। ওসি নিজেও ছিনতাইকৃত টাকার ভাগ পেয়েছেন বলে অভিযোগ মিলেছে। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। গত ৪ সেপ্টেম্বর রাতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় নৃশংসভাবে খুন হন শরিফুল ইসলাম সায়মন নামে এক
ব্যবসায়ী। দুর্বৃত্তদের গুলিতে আহত হন তার বাবা ইসরাইল। খুনের ঘটনা সংঘটিত হওয়ার আগে ঘটনাস্থলসংলগ্ন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের সামনে অবস্থানরত একটি প্রাইভেটকারের সূত্র ধরে গত ৭ সেপ্টেম্বর রাতে কাজী সিরাজুল ইসলাম নামে এক দুর্বৃত্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিরাজ জানিয়েছে, ওই ছিনতাই ও খুনের ঘটনায় জড়িতরা ঘটনার আগে তার বাড়িতেই অবস্থান করছিল। সিরাজের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে তিনটি অত্যাধুনিক ক্ষুদ্রাস্ত্র ও ছয় রাউন্ড গুলিসংবলিত তিনটি স্টিল ছবি ও একটি ভিডিওচিত্র পাওয়া যায়। এ অস্ত্র ও গুলি তার কাছে রক্ষিত ছিল বলে সে জানায়। কিন্তু ঘটনার অন্যতম হোতা সিরাজুল ইসলাম শাহীন ওই ঘটনার আগে এ অস্ত্র ও গুলি নিয়ে যায়। খিলগাঁও থানা পুলিশ ও স্থানীয়দের উপস্থিতিতে মোবাইলের ছবিতে প্রাপ্ত বেডশিট সিরাজের ঘর থেকে জব্দ করে। সিরাজের বাড়ির তৃতীয় তলার একটি কক্ষ থেকে ছিনতাইকৃত তিন লাখ ৯৯ হাজার টাকা ও তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি জব্দ করা হয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই সিরাজুল ইসলাম শাহীন ঢাকা মহানগর ছাত্রলীগের ১ নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি। তার নেতৃত্বেই এই ছিনতাই ও খুনের ঘটনা ঘটে। একটি সূত্র জানিয়েছে, এই শাহীন এবং কাজী সিরাজের বাসা নিহত সায়মনদের বাসার অদূরে। সায়মন এবং তার বাবা মতিঝিলে মানিচেঞ্জের ব্যবসায় করতেন। প্রতিদিন বাসায় ফেরার পথে তাদের কাছে যে লাখ লাখ টাকা থাকত তা জানা ছিল দুর্বৃত্তদের। আর সেই সূত্র ধরেই ঘটনার দিন তাদের পথ আগলায় দুর্বৃত্তরা। টাকা ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করলে পিতা-পুত্র তাদেরকে বাধা দেন। আর তখনি এলোপাতাড়ি গুলি চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে সায়মন নিহত এবং তার বাবা গুরুতর আহত হন। দুর্বৃত্তরা তাদের কাছ থেকে ৪৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেয়। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই শাহীনের বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক অভিযোগ। কাজী সিরাজ এবং এই শাহীন ওই এলাকায় দীর্ঘদিন ফেনসিডিলের ব্যবসায় করে আসছে। কাজী সিরাজ স্থানীয় প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য হওয়ায় এলাকায় তার প্রভাব রয়েছে আগে থেকেই। আর ওসি সিরাজ ওই থানায় যোগ দেয়ার পর তার প্রভাব আরো বেড়ে যায়। ওসি সিরাজ প্রায় প্রতিদিনই কাজী সিরাজের বাসায় যেতেন বলে জানা যায়। কাজী সিরাজের স্ত্রীও ফেনসিডিল ব্যবসার সাথে  সম্পৃক্ত বলে অভিযোগ আছে। তাদের বাসার সামনে একটি ছাগলের খামার রয়েছে। ওই খামারের মধ্যেই মাদক ব্যবসা চলে আসছিল। খিলগাঁও থানার সদ্য যোগদানকৃত ওসি মোস্তাফিজ বলেছেন, কাজী সিরাজের বাসার কাছ থেকে তাকে গ্রেফতারের পরদিন ১০০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার হয়েছে। এ দিকে ছিনতাইয়ের পরমুহূর্তেই এই টাকার ভাগাভাগি হয় বলে জানা গেছে। কাজী সিরাজের ভাগে পড়েছিল চার লাখ টাকা। যে টাকার অবশিষ্ট অংশই তার বাসা থেকে উদ্ধার হয়। অভিযোগ উঠেছে শাহীন নিজে এই টাকার একটি অংশ ওই রাতেই ওসি সিরাজকে দিয়ে আসে। তার দায়িত্ব ছিল পুলিশকে ম্যানেজ করা। এমন একটা ঘটনা ঘটবে তা আগে থেকেই ওসি সিরাজকে অবহিত করা হয়েছিল বলে জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওসি সিরাজ এক সময়ে রাজধানীর পল্টন থানার সেকেন্ড অফিসার ছিলেন। তার বাড়ি একটি বিশেষ জেলায়। এসআই থেকে তিনি পদোন্নতি পেয়ে ইন্সপেক্টর হলে পল্টন থানায়ই তিনি ওসি তদন্ত হিসেবে যোগ দেন। তখন ওই থানার ওসি ছিলেন শহীদুল হক। ওসি তদন্ত হওয়ার পরই সিরাজ বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তার নাম ছিল সিরাজুল ইসলাম। ওসি তদন্ত হয়েই তিনি তার নামের সাথে ‘শেখ’ শব্দটি লাগিয়ে দেন বলে তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন। অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাও বিভিন্ন সময় তার হাতে নাজেহাল হয়েছেন। তিনি সব সময় বলে বেড়াতেন স্বয়ং মহানগর পুলিশ কমিশনারের আশীর্বাদ আছে তার ওপর। এরপর ২০১১ সালের আগস্ট মাসে তিনি ওসি হিসেবে যোগ দেন খিলগাঁও থানায়। সে থেকে তিনি আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওসি সিরাজ থানায় দায়িত্ব পালন করতেন হাফপ্যান্ট এবং হাতাকাটা গেঞ্জি গায়ে। রাত ১২ টার পর থানায় দ্বিতীয় তলায় তিনি গানের আসর বসাতেন। সেখানে মডেলসহ অনেক তরুণী যোগ দিতেন। রাজধানীর আরো কয়েকটি থানার ওসিও সেখানে গিয়ে বিষয়টি উপভোগ করতেন বলে অভিযোগ মিলেছে। তার এই ঔদ্ধত্যপূর্ণ কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে জোনাল কর্মকর্তাদের কাছে বিচার দেয়া হলেও তারা বলতেন তাদের কিছুই করার নেই। ছিনতাই এবং পিতা-পুত্র হতাহতের ঘটনার পর ওসি সিরাজকে প্রত্যাহার করা হয়। মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, ঘটনার পরই ওসি সিরাজকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে রাজারবাগে আছেন।

No comments:

Post a Comment