Thursday, September 4, 2014

সম্প্রচার নীতিমালা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী:নয়াদিগন্ত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অংশীজনদের সাথে সময় নিয়ে আলোচনা করে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে। এখন সমালোচকেরা যেসব প্রশ্ন উত্থাপন করছেন সেসব প্রশ্ন নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করার সময় উত্থাপন করা হয়নি। সরকার জনসাধারণ ও সম্প্রচার মাধ্যমের কল্যাণের জন্য নীতিমালাটি প্রণয়ন করেছে।   সংসদে প্রশ্নোত্তরে গতকাল নুরুল ইসলাম মিলনের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন
। বিকেলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদের বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।  নুরুল ইসলাম মিলন প্রশ্ন করতে গিয়ে বলেন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা আজ সবার সমালোচনার মুখে। সরকার হয়তো ভাবেনি এই নীতিমালা এত বেশি সমালোচনার সম্মুখীন হবে। আসলে এই নীতিমালা রচনার সাথে যারা সম্পৃক্ত তারা ছাড়া অন্য কেউ এর সমর্থনে কথা বলছেন না। কোনো বুদ্ধিজীবী, শিল্পী-সাহিত্যিক এই নীতিমালা সমর্থন করে কথা বলছেন না। টকশো ও টিভির খবরের ক্ষেত্রে এটি বেশি ব্যবহৃত হবে। মানুষ টিভির সংবাদ না শুনে বিবিসি ও সিএনএনের প্রতি বেশি ঝুুঁকে পড়বে। এ কারণে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার বিষয়টি আবার ভেবে দেখবেন কি?  জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত কয়েকটি সরকারের আমলে নীতিমালাটি প্রণয়নের জন্য সম্প্রচার সেক্টর থেকে দাবি উত্থাপিত হয়েছিল। এ জন্যই নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছে। এ নীতিমালার ধারাবাহিকতায় একটি ‘স্বাধীন সম্প্রচার কমিশন’ গঠনের জন্য আইন প্রণয়নের কাজ চলছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবাই পরামর্শ প্রদান করতে পারেন যাতে নীতিমালায় কোনো অসম্পূর্ণতা থেকে থাকলে আইনের মাধ্যমে তা পূরণ করা যায়। আমরা বিশ্বাস করি এই নীতিমালা জারি করার ফলে আমাদের গণমাধ্যম অধিক দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে দেশকে দ্রুত উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে। তিনি বলেন, সম্প্রচার মাধ্যমগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে সরকারের দায়িত্ব রয়েছে। এসব বিষয় বিবেচনায় সম্প্রচার মাধ্যমের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি সুষম নীতিমালা থাকা বাঞ্ছনীয়। নীতিমালা ছাড়া গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সম্প্রচারকার্যক্রমের স্বাধীনতা, বহুমুখিতা, দায়বদ্ধতা ও দায়িত্বশীলতা নিশ্চিত করা যায় না। এই উদ্দেশ্যে নীতিমালাটি প্রণয়ন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী। তিনি বলেন, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালার খসড়া প্রণয়নের লক্ষ্যে ২০১২ সালের ১ নভেম্বর ১৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার বিশিষ্ট সাংবাদিকবৃন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, এনজিও প্রতিনিধি, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টরা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এই কমিটি নীতিমালার একটি প্রাথমিক খসড়া প্রণয়নের জন্য একটি উপ-কমিটি গঠন করে। উপ-কমিটি বিবিসিসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর নীতিমালা পর্যালোচনা করে একটি প্রাথমিক খসড়া প্রণয়ন করে। নীতিমালার খসড়াটি ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তথ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে সর্বসাধারণের মতামত আহ্বান করা হয় এবং পরে ২১ দিন পর্যন্ত তা ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত হয়। এখন বিভিন্ন সমালোচক যেসব প্রশ্ন উত্থাপন করছেন সেসব প্রশ্ন নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করার সময় উত্থাপন করা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মতামত আহ্বানের পরিপ্রেক্ষিতে অ্যাসোসিয়েশন অব টিভি চ্যানেল ওনার্স (এটকো), আর্টিকেল-১৯, টিআইবি, বাংলাদেশ এনজিও নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশন ও বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গ তাদের বক্তব্য ও পরামর্শ প্রেরণ করেন। পত্রপত্রিকাতেও বেশ কিছু মতামত পাওয়া যায়। প্রণীত খসড়া নীতিমালার ওপর কমিটির অন্যতম সদস্য আন্তর্জাতিক এনজিও আর্টিকেল-১৯ এর উদ্যোগে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়। ওই কর্মশালায় গণমাধ্যমের বিশিষ্ট সাংবাদিকবৃন্দ, সুশীলসমাজের প্রতিনিধি, এনজিও প্রতিনিধি, শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধি, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, নারী সমাজের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট অনেকে অংশগ্রহণ করেন। তাদের মতামতের সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে তিনটি সভা করে কমিটি নীতিমালার খসড়াটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ে চূড়ান্ত করে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘চলতি বছর ১২ জুন তথ্য মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় নীতিমালার খসড়াটি পর্যালোচনা করা হয় এবং কিছু পর্যবেক্ষণসহ নীতিমালাটি অনুমোদনের সুপারিশ করে। স্থায়ী কমিটির ওই সভার পর্যবেক্ষণগুলো বিবেচনায় নিয়ে খসড়া নীতিমালাটি আরো সমৃদ্ধ করা হয়। এরপর রুলস অব বিজনেস-১৯৯৬ মোতাবেক এ নীতিমালার বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, অর্থ বিভাগ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামতের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা সম্প্রচার নীতিমালার খসড়াটি গত ৪ আগস্ট মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিসভা খসড়াটির সামান্য সংশোধনসহ অনুমোদন করে।

No comments:

Post a Comment