Tuesday, September 16, 2014

আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ প্রকল্প:কালের কন্ঠ

নিজস্ব উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) না থাকায় দেশের টেলিভিশন চ্যানেল ও রেডিও স্টেশনগুলো বিদেশি অপারেটরদের শরণাপন্ন হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে ব্যান্ডউইথ ভাড়া করে সম্প্রচার কার্যক্রম চালাচ্ছে; শ্রোতা-দর্শকের চাহিদা মেটাচ্ছে। নিজস্ব স্যাটেলাইট না থাকায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষ অনেক চ্যানেল দেখতেই পায় না। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্য মতে, শুধু সম্প্রচারের জন্য বছরে প্রায় ১১০ কো
টি টাকা দেশের বাইরে চলে যাচ্ছে। নিজস্ব স্যাটেলাইট থাকলে টাকাগুলো দেশেই থাকত। প্রত্যন্ত অঞ্চলে দেশি-বিদেশি চ্যানেল দেখা সহজ হতো। কিন্তু বারবার সরকারের সিদ্ধান্ত বদল, অর্থ সংকট, স্বার্থ হাসিলের চিন্তা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে এখনো ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প’ আলোর মুখ দেখেনি। অবশেষে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে বহু আলোচিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প। আজ মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হচ্ছে। সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে। সূত্র জানায়, গত মাসে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে উষ্মা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, এত বছর হয়ে গেল, এখনো প্রকল্পটি অনুমোদন পেল না! কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হয়। দ্রুত প্রকল্পটি অনুমোদনের ব্যবস্থা করতে মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন তিনি। তাঁর নির্দেশের পর এক মাসের মধ্যে প্রকল্পটির অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ করল ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। বিটিআরসি সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে দুই হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে জোগান দেওয়া হবে এক হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। বাকি এক হাজার ৬৫২ কোটি টাকা যে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান কাজ পাবে, তারা সরবরাহ করবে। চলতি বছর কাজ শুরু করে ২০১৭ সালের জুন নাগাদ প্রকল্প শেষ হবে। গাজীপুর জেলার জয়দেবপুর এবং রাঙামাটি জেলার বেতবুনিয়ায় এর গ্রাউন্ড লোকেশন হবে। আর স্পেস লোকেশন ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশে জিওস্টেশনারি অরবিটে হবে। লোকেশন পেতে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়নের (আইটিইউ) মাধ্যমে রাশিয়ান প্রতিষ্ঠান ইন্তারস্পুৎনিকের মালিকানাধীন ১১৯.১ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ অরবিটাল স্লট লিজ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিটিআরসি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির সাবেক সভাপতি মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘বাংলাদেশের নিজস্ব একটি স্যাটেলাইটের জন্য ১৯৯৭ সাল থেকে সরকারকে বলে আসছি। দীর্ঘ ১৭ বছর পর সেই প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে।’ তিনি বলেন, এটি একটি ঐতিহাসিক কাজ এবং স্বনির্ভরতা অর্জনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এখন প্রতিটি টেলিভিশন চ্যানেল মাসে ১৬ থেকে ২০ হাজার ডলার স্যাটেলাইট ভাড়া বাবদ দিচ্ছে। নিজস্ব স্যাটেলাইট হলে আর ভাড়ার প্রয়োজন হবে না। বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প কিভাবে বাস্তবায়িত হবে, মূলত এ সিদ্ধান্ত নিতেই কেটে গেছে পাঁচ বছর। এ নিয়ে গত পাঁচ বছরে অনেক নাটক হয়েছে। বারবার সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত স্যাটেলাইট নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বেফাঁস মন্তব্যও করেছেন। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা তাঁকে ভুল পথে পরিচালিত করেছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। সূত্র জানায়, শেষ পর্যন্ত উন্মুুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়নে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয়। বিটিআরসির কর্মকর্তারা জানান, প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদন পাওয়ার পর উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। তাতে বিশ্বের সব বড় বড় কম্পানি অংশগ্রহণ করবে বলে আশা করা যায়। সর্বনিু দরদাতাকে কাজ দেওয়া হবে। বাস্তবায়নের অর্থ ওই প্রতিষ্ঠানকেও সরবরাহ করতে হবে। কাজ শেষ হওয়ার পর ওই কম্পানিকে সুদসহ ঋণ শোধ করে দেবে সরকার। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্প বাস্তবায়ন পর্যায়ে তিনটি বড় ধরনের ঝুঁকি রয়েছে। প্রথমত, স্যাটেলাইটটি জিওস্টেশনারি অরবিটে সঠিকভাবে স্থাপনের ঝুঁকি। দ্বিতীয়ত, জিওস্টেশনারি অরবিটে স্থাপনের পর স্যাটেলাইটটির ট্রান্সপন্ডারগুলোর যথাযথভাবে কাজ করা এবং তৃতীয়ত, ভূমি থেকে উৎক্ষেপণের সময় স্যাটেলাইটটির ভেঙে পড়ার ঝুঁকি। এগুলোর যেকোনো একটি মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে প্রকল্পে যত টাকা বিনিয়োগ করা হবে, তার পুরোটাই অচপয় হবে। ফলে ওই তিন ঝুঁকি নিরসনে প্রস্তাবিত স্যাটেলাইটটির অনুকূলে ১৬০ কোটি টাকা ইনস্যুরেন্স হিসাবে রাখা হয়েছে। অবশ্য ৯৯ শতাংশ উৎক্ষেপণই সফল হয় বলে জানান কর্মকর্তারা। সূত্র জানায়, ৪০টি ট্রান্সপন্ডারবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট নির্মাণ করা হবে। পরে অরবিটাল স্লটে স্থাপন করা হবে। ভূমি থেকে স্যাটেলাইটটি নিয়ন্ত্রণের জন্য দুটি গ্রাউন্ড স্টেশন স্থাপন করা হবে। একই সঙ্গে স্যাটেলাইটটির রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য একটি নতুন কম্পানি প্রতিষ্ঠা করা হবে। কর্মকর্তারা আশা করছেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট চালু করতে পারলে শুধু বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ই হবে না, স্যাটেলাইটের অব্যবহৃত অংশ নেপাল, ভুটান ও মিয়ানমারের মতো দেশকে ভাড়া দিয়ে বছরে ৫০ মিলিয়ন ডলার আয় করা যাবে। জানা যায়, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ প্রকল্পে অর্থায়নে প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিম ব্যাংক। পরে জেবিআইসি (জাপান ব্যাংক অব ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন), এইচএসবিসি, চায়না গ্রেট ওয়াল করপোরেশন এবং ইংল্যান্ডের সিডাব্লিউসি গালফ ইন্টারন্যাশনালও অর্থায়নের প্রস্তাব দেয়। প্রথম পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সিম ব্যাংক ও জেবিআইসিকে মনোনীত করা হয়। শেষ পর্যন্ত উন্মুক্ত দরপত্রের ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত হয়।

No comments:

Post a Comment