Wednesday, September 10, 2014

বিচারপতিদের অপসারণে সংসদ কিছুই করবে না : সুরঞ্জিত:নয়াদিগন্ত

আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বিল নিয়ে হইচইয়ের কিছু নেই। বিচারপতিদের অপসারণে সংসদ ক্ষমতা কুক্ষিগত করবে বলে যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে তা সঠিক নয়। আসলে এই বিল পাস হওয়ার পরও উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের ব্যাপারে সংসদ কিছুই করবে না। সংসদ বিচারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে না। বিলটি পাসের পর একটি আইন হবে। আইন অনুযা
য়ী যা করবে তদন্ত কমিটি ও রাষ্ট্রপতি। তদন্ত কমিটি যা করে দেবে সংসদ তা অনুমোদন করবে মাত্র। তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতিই বিচারপতিদের নিয়োগ দেন এবং অপসারণও করবেন। তিনি বলেন, ’৭২-’৭৫ পর্যন্ত এই বিধান সংবিধানে ছিল; তখন কোনো বিচারকের কিছুই হয়নি, এখনো কিছুই হবে না। যারা এই বিলের বিরোধিতা করছেন তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বিরোধিতা করছেন। কেউ জেনে না জেনে আবার কেউ জেনে বিরোধিতা করছেন; কিন্তু বিরোধিতাকারীরা ব্যর্থ হবেন। সংসদে উত্থাপিত ও কমিটিতে প্রেরিত বিলটি নিয়ে গতকাল আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে আলোচনা পর সংসদের মিডিয়া সেন্টারে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সুরঞ্জিত সেন এ কথা বলেন। বিলটি রোববার সংসদে উত্থাপিত হয়। সুরঞ্জিত সেন জানান, কমিটি আজ বুধবার বৈঠকে বসে বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এ ছাড়া বিলটিতে বিশেষজ্ঞসহ স্টেকহোল্ডারদের মতামত নেয়া হবে কি না সে ব্যাপারে সরকারের মতামত চাওয়া হয়েছে। আইনমন্ত্রী সেটা আজ বুধবার কমিটিকে অবহিত করবেন। এ ছাড়া বিলের শিরোনামের আগে যে দীর্ঘ প্রস্তাবনা সংযুক্ত করা হয়েছে তা সংসদীয় কমিটি রিপোর্টে বাদ দেয়ার ব্যাপারে আলোচনা করেছেন বলেও সভাপতি জানান।  কমিটি সূত্র জানিয়েছে, আজই বিলটি চূড়ান্ত করা হবে এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিলের রিপোর্ট সংসদে উত্থাপন করা হতে পারে। বিলটি পাস হওয়ার পর বিচারপতিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে যে কমিটি গঠিত হবে তার সদস্য কারা হবেন জানতে চাওয়া হলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, সেটাই বড় বিষয়। এই বিষয়টি এ সংক্রান্ত যেই আইন করা হবে তাতে উল্লেখ থাকতে হবে। সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের বিধানে বিচারপতিদের নেতৃত্বেই বিচারপতির বিরুদ্ধে তদন্তের বিধানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমি বিচারক, আমিই অপরাধী, আমিই তদন্তকারীÑ এটাতে কি সুবিচার হয়?’ বিলটি পাসের পর নির্বাচন কমিশনারসহ রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত অন্যরা কি একইভাবে অপসারিত হবেন কি নাÑ প্রশ্ন করা হলে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, প্রত্যেকটি আইনের কনসিকুয়েন্স আছে। সংবিধানের ১১৮ (৫) অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেখানে নির্বাচন কমিশনারের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘তবে শর্ত থাকে যে, সুপ্রিম কো্ের্টর বিচারক যেরূপ পদ্ধতি ও কারণে অপসারিত হইতে পারেন, সেইরূপ পদ্ধতি ও কারণে ব্যতীত কোন নির্বাচন কমিশনার অপসারিত হইবেন না।’ ব্রিফিংয়ে সুরঞ্জিত সেন বলেন, অকারণে বিলটি নিয়ে অপপচার চালানো হচ্ছে। তাদের কথায় মনে হয়, সরকার কোর্টকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এটা করছে। কোর্টের ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করে ফেলার জন্য সরকার কিছু করে ফেলছে। দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দও এমন কথা বলছেন। তিনি বলেন, অভিশংসন ও অপসারণ এক জিনিস নয়। সংবিধানে অভিশংসন শুধু রাষ্ট্রপতির বেলায় হতে পারে। রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকারদের বিষয় ভিন্ন। তারা নির্বাচিত প্রতিনিধি; কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের বিচারকরা নিয়োগপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। ফলে তাদের অভিশংসনের প্রশ্নই নেই। তাদের পদত্যাগ বা অপসারণের বিষয় আছে। তা-ও শুধু যারা অসদাচারণ করবেন কিংবা দায়িত্ব পালনে অযোগ্য হবেন। তাদের হাত থেকে জুডিশিয়ারি বাঁচতে চায়। তিনি বলেন, ’৭২-’৭৫ তো কেউ অপসারিত হননি। পরে যারা হয়েছেন সামরিক ফরমানে হয়েছেন। তিনি বলেন, উচ্চ আদালতের মর্যাদা অক্ষুণœ রাখা এবং আদালতের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষার জন্যই সংবিধান সংশোধনী বিলটি আনা হয়েছে। কমিটির সভাপতি বলেন, বিলটি পাস হলে সংসদ বিচারকদের ব্যাপারে কিছুই করতে পারবে না। তাহলে এটা নিয়ে এত হায় হায় করার কী আছে? ’৭২-’৭৫ এ হয়নি, এখনো একই অবস্থা হবে। প্রমাণিত অসদাচরণের দায়েই কিছু হলে হবে। কোনো বিচারক অসদাচারণ করলে কি তাকে রাখা যায়? তিনি বলেন, বিলটি পাসের পর যে আইন হবে এবং তার ভিত্তিতে যে কমিটি হবে সেই কমিটি প্রমাণিত অসদাচরণকারীদের ধরে এনে দেবে তারপর সংসদ দুই-তৃতীয়াংশের সমর্থনে তা অনুমোদন করবে মাত্র। এই ক্ষমতা ইন্ডিয়ান পার্লামেন্টেও আছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা আগেই পদত্যাগ করে চলে যেতে পারবেনÑ এটা নিয়ে এত হইচই কেন? কী কারণে সর্বনাশ হয়ে যাচ্ছে? কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, মো: তাজুল ইসলাম চৌধুরী, আবদুল মতিন খসরু, সাহারা খাতুন, মো: শামসুল হক টুকু, মো: আব্দুল মজিদ খান, তালুকদার মো: ইউনুস, অ্যাডভোকেট মো: জিয়াউল হক মৃধা ও সফুরা বেগম অংশগ্রহণ করেন। বৈঠকে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগের সচিবসহ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

No comments:

Post a Comment