সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন প্রায় আড়াই বছর আগে। তাঁর শূন্যতায় এখনো ধুঁকছে সিলেটে বিএনপির সব কমিটি। এর আগে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পুরো সময়টা সিলেট বিএনপি ছিল দুই ধারায় বিভক্ত। এর একাংশ ছিল সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের অনুসারী। অপর অংশের নেতৃত্বে ছিলেন তৎকালীন সাংসদ ইলিয়াস আলী। ২০০৯ সালের ৫
সেপ্টেম্বর এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান সাইফুর রহমান। এর এক সপ্তাহ পর ১৩ সেপ্টেম্বর সাইফুর রহমানের স্মরণে আয়োজিত শোকসভায় বিএনপির উভয় অংশ ঐক্যবদ্ধ হয়। এরপর অল্প দিনের মধ্যে সিলেটে বিএনপির একচ্ছত্র নেতা হয়ে ওঠেন ইলিয়াস আলী। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল রাতে ঢাকার বনানীতে নিজ বাসার কাছ থেকে গাড়িচালকসহ ‘নিখোঁজ’ হন ইলিয়াস আলী। বিএনপির অভিযোগ, সরকারই ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। এরপর এখন পর্যন্ত ইলিয়াস আলী ও তাঁর গাড়িচালকের খোঁজ মেলেনি। এরপর সিলেটে বিএনপির রাজনীতিও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি এম এ হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘কারো শূন্যতা কখনো পূরণ হওয়ার নয়। আবার এ জন্য দল থেমেও থাকে না।’ তাঁর মতে, ইলিয়াস আলীর শূন্যতাকে শক্তিতে পরিণত করে এগিয়ে যাওয়াটাই হচ্ছে আসল সার্থকতা। এদিকে এম এ হককে সভাপতি ও আবদুল কাইয়ূম জালালীকে সাধারণ সম্পাদক করে ২০১০ সালের নভেম্বরে গঠিত সিলেট মহানগর বিএনপির নতুন কমিটির তিন বছরের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। গত ৩১ আগস্ট সিলেটে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে দল পুনর্গঠন নিয়ে মতবিনিময় করে। এ সময় স্থানীয় নেতাদের একাংশ বিএনপির নগর কমিটি পুনর্গঠন ও ছাত্রদলের নতুন কমিটি গঠনের পক্ষে মত দেয়। সালাহউদ্দিন আহমদ এ ব্যাপারে কেন্দ্রকে অবহিত করা হবে বলে জানান। কমিটি পুনর্গঠনের এ প্রস্তাবকে কেন্দ্র করে বিএনপিতে পুরোনো বিভেদ আবার উঁকি দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেন দলটির নগর কমিটির একজন দায়িত্বশীল নেতা। তিনি বলেন, বর্তমান কমিটির শীর্ষ পদে থাকা নেতারা চাচ্ছেন, এ কমিটি বহাল থাকুক। আবার ইলিয়াস আলীর পুরোনো অনুসারীরা মনে করছেন, নেতৃত্বে গতিশীলতা আনতে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন কমিটি করা দরকার। এ মতের পক্ষে যুক্তি দিয়ে নগর কমিটির কোষাধ্যক্ষ ফরহাদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা নগর বিএনপিকে আন্দোলনমুখী করতেই নতুন কমিটির প্রস্তাব করেছি। কেন্দ্র এটি যত দ্রুত করবে, তত বিএনপির জন্য মঙ্গল।’ এ অবস্থায় সিলেটে বিএনপির রাজনীতিতে আবার বিভেদ দেখা দিচ্ছে কি না, এ প্রশ্ন করা হলে নগর বিএনপির সভাপতি এম এ হক দাবি করেন, ‘কিছু ভিন্নমত থাকতেই পারে। ভিন্নমত দেখিয়ে বিভেদ সৃষ্টি করাটা দলের জন্য মঙ্গলজনক হবে না।’
No comments:
Post a Comment