ভূমধ্যসাগর এলাকায় অভিবাসী সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেশগুলোর সমঝোতার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ইইউর অন্য দেশগুলো আশ্রয়প্রার্থীদের দায়িত্ব সমানভাবে ভাগ করে নিতে রাজি না হলে পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছে ইতালি। খবর এএফপি ও বিবিসির। সিরিয়া ও ইরিত্রিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপে আসা ৪০ হাজার অভিবাসীকে সমানভাবে ইউরোপের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রস্তাব নিয়ে লুক্সেমবুর্গে
ইইউভুক্ত ২৮টি দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত মঙ্গলবার আলোচনায় বসেন। পাশাপাশি ইউরোপের বাইরে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে বসবাসরত ২০ হাজার সিরীয় নাগরিকের পুনর্বাসন নিয়েও আলোচনা হয়। ফ্রান্স ও ইতালির সীমান্তে একটি রেলসেতুর নিচে অবস্থানকারী বেশ কয়েকজন অভিবাসীকে ইতালীয় পুলিশ মঙ্গলবার জোর করে সরিয়ে দেয়। তারা ফ্রান্সে প্রবেশের চেষ্টা করলেও বাধা দেওয়া হয়। এসব ঘটনার প্রভাবে লুক্সেমবুর্গের বৈঠকে অচলাবস্থা তৈরি হয়। ধারণা করা হচ্ছে, নিষ্ফল এ আলোচনার প্রভাব আগামী সপ্তাহে অনুষ্ঠেয় ইইউ সম্মেলনেও পড়বে। জার্মানি ও অস্ট্রিয়াসহ কয়েকটি দেশ অভিবাসীদের ভাগ করে ইউরোপের দেশগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব সমর্থন করলেও অন্য দেশগুলোর যুক্তি, অভিবাসীরা যেতে আগ্রহী নয়—এমন দেশগুলোতে তাদের পাঠানো উচিত হবে না অভিবাসীদের সমবণ্টন প্রশ্নে কোনো অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নেই বলে জানিয়েছেন লাটভিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রিহার্দস কোজলভস্কিস। আর লুক্সেমবুর্গের ওই আলোচনা শেষে সংবাদ সম্মেলনে ইইউর অভিবাসনবিষয়ক প্রধান দিমিত্রিস আভ্রামোপোলাস বলেন, আলোচনায় অগ্রগতি হলেও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ঐচ্ছিক নয়, বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা নিলেই ৪০ হাজার অভিবাসীকে ইইউর দেশগুলোয় ভাগ করে দেওয়ার ব্যবস্থা কার্যকর হবে। চলতি বছর অন্তত এক লাখ অভিবাসী ইউরোপে প্রবেশ করেছে। কেবল ইতালিতেই গেছে ৬০ হাজার অভিবাসী। ইইউর সীমান্তবিষয়ক সংস্থা ফ্রন্টেক্স এ হিসাব দিয়েছে। ভূমধ্যসাগরে একটি নৌ দুর্ঘটনায় গত এপ্রিলে আনুমানিক ৮০০ অভিবাসীর মৃত্যুর পরিপ্রেক্ষিতে ইউরোপীয় নেতারা এ সমস্যা নিয়ে একটি সমঝোতার উদ্যোগ নেন। জার্মানি ও অস্ট্রিয়াসহ ইইউর কয়েকটি দেশ অভিবাসীদের ভাগ করে ইউরোপের দেশগুলোতে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব সমর্থন করলেও অন্য দেশগুলোর যুক্তি, অভিবাসীরা যেতে আগ্রহী নয়—এমন দেশগুলোতে তাদের পাঠানো উচিত হবে না। যুক্তরাজ্য, ডেনমার্ক ও আয়ারল্যান্ড ওই অভিবাসী সমবণ্টন-ব্যবস্থার বাইরে থাকতে চায়। অভিবাসী সংকট নিরসন নিয়ে ফ্রান্স ও ইতালির সম্পর্কে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ইইউর নির্ধারিত আইনের প্রতি ইতালি যথাযথ মর্যাদা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ফ্রান্স। জবাবে রোম বলেছে, অভিবাসীরা ইতালিকে কেবল ইউরোপে প্রবেশের একটি পথ হিসেবে ব্যবহার করে। অভিবাসীদের দায় ইইউর সব দেশ সমানভাবে না নিলে ইতালি বিকল্প পরিকল্পনা (প্ল্যান বি) বাস্তবায়নের হুমকি দিয়েছে। ওই পরিকল্পনা অনুযায়ী অভিবাসীদের সাময়িক ভিসা দেবে ইতালি। তাহলে ওই আশ্রয়প্রার্থীরা শেনজেন আইনের আওতায় ইতালির বাইরে ইউরোপের অন্যান্য দেশে যাতায়াত করতে পারবে। ইইউভুক্ত একেকটি দেশের জনসংখ্যা, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) ও বেকারত্ব এবং ইতিমধ্যে আশ্রিত শরণার্থীসংখ্যা ইত্যাদি বিষয় বিবেচনা নিয়ে ৪০ হাজার অভিবাসীর সমবণ্টনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। ওই পরিকল্পনায় ইতালি থেকে ২৪ হাজার এবং গ্রিস থেকে ১৬ হাজার অভিবাসীকে অন্যান্য দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। সার্বিক বিবেচনায় ফ্রান্স ও জার্মানিতে ওই অভিবাসীদের ৩০ শতাংশের আশ্রয় পাওয়ার কথা ছিল। অন্য একটি প্রস্তাবে প্রায় ২০ হাজার শরণার্থীর পুনর্বাসনের কথা বলা হয়, যারা মূলত সিরিয়া থেকে পালিয়ে জর্ডান, লেবানন ও তুরস্কে আশ্রয় নিয়েছে। ১০ হাজার অভিবাসীকে আশ্রয় দেবে ফ্রান্স: ফ্রান্স আরও ১০ হাজার ৫০০ জন অভিবাসীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করবে। দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেরনাদ ক্যাজনভ গতকাল এ ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ফ্রান্সে আশ্রয়ের অনুমোদনপ্রাপ্ত অভিবাসীদের জন্য পাঁচ হাজার, আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য চার হাজার এবং অবৈধ অভিবাসীদের জন্য দেড় হাজারটি জরুরি আবাসনব্যবস্থা তৈরি করা হবে।
No comments:
Post a Comment