হওয়া এসব মামলায় আদালতে ধারাবাহিকভাবে অভিযোগপত্র জমা দিচ্ছে পুলিশ। এসবের ওপর ভিত্তি করে শুরু হচ্ছে বিচারকাজ। সম্প্রতি এই জোটের শীর্ষ ১৪৭ জন নেতার বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ জানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব মামলা দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাচরিতার্থ করতেই সরকার এখন এসব মামলায় অভিযোগপত্র দিচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, সরকার যদি মনে করে এভাবে মামলায় অভিযুক্ত করে রাজনীতিবিদদের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেবে, তাহলে তারা ভুল করবে। অতীতেও এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তা সফল হয়নি। এভাবে আন্দোলন দমন করা যায় না, নেতাদের জনবিচ্ছিন্ন করা যায় না। আমি মনে করি সরকার এই অশুভ পথে না হেঁটে সুস্থ রাজনীতির ধারায় ফিরে আসবে। বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. পিয়াস করিম বলেন, সরকার স্পষ্টতই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব মামলা সচল করছে। বিরোধী দল আন্দোলনের কথা বলছে। তাদের আন্দোলন দমিয়ে দেয়ার জন্য একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করতে সরকার এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে হয়। বিএনপি জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে কী পরিমাণ মামলা আছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই নেতৃত্বদানকারী দল বা কারো কাছে। তবে জোটের প্রধান দল বিএনপির চেয়ারপারসন থেকে শুরু করে প্রায় সব নেতার বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়া দিগন্তকে বলেন, সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১০-১২ হাজার রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত আছেন প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মী। এদের মধ্যে এখনো কারাগারে আছেন প্রায় সাত হাজার নেতাকর্মী। জোটপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে পাঁচটি মামলা। ইতোমধ্যে দু’টি মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নি¤œ আদালতে একটি দুর্নীতি মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে এখনো বিচারাধীন আছে ১৪টি মামলা। সব মিলিয়ে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে রয়েছে ২৬টি মামলা। দলটির স্থায়ী কমিটির ১৮ সদস্যের মধ্যে দুইজন বাদে সবার বিরুদ্ধেই রয়েছে মামলা। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী দীর্ঘ দিন কারাগারে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে দণ্ডিত করেছেন ট্রাইব্যুনাল। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুর্নীতির অভিযোগে হওয়া এক মামলায় কয়েক মাস ধরে জেলে। একাধিকবার জামিন নিয়েও মুক্তি মেলেনি তার। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ২০টির বেশি। ১৪ মামলার আসামি স্থায়ী কমিটির আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একটি মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক। স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহ ১১ মামলার আসামি, এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে রয়েছে ৯ মামলা, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে আছে ২৩ মামলা, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪১টি মামলা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪৭টি মামলা। এ ছাড়া বিএনপির কিছু নেতার বিরুদ্ধে আছে শতাধিক মামলা। বিএনপির সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ১৬০টি, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ১১০টি, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরবের বিরুদ্ধে ১৩০টি মামলা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে রয়েছে ৭৫টি মামলা। ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের বিরুদ্ধে ৮০টি, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবের বিরুদ্ধে ১৪০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা ছাড়াও থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা লক্ষাধিক। গত সোমবার রাজধানীর পল্টন থানায় করা দ্রুত বিচার আইনের একটি মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জশিট) গঠন করেছেন আদালত। এ মামলায় ২৫ সেপ্টেম্বর স্যাগ্রহণের দিনও ধার্য করা হয়েছে। অপর একটি মামলায় আরো কয়েক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এই দু’টি মামলায় মোট ১৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন আমানউল্লাহ আমান, বিরোধীদলীয় সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, মোহাম্মদ শাহজাহান ছাড়াও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা। এ দিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খসড়া ফাঁসের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত বৃহস্পতিবার আদালতে চার্জশিট দিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই মামলায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী-ছেলে, আইনজীবীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন দুদককেও কয়েক দিন ধরে মামলা নিয়ে বেশ সচল দেখা গেছে। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সরকারদলীয় কয়েক নেতার পাশাপাশি বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গত সোমবার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান ও তার ছেলেকে অর্থ পাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ মামলায় এম মোরশেদ খান ও তার ছেলেসহ অভিযুক্তরা জামিনে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক কমিশনার জানান, অর্থ পাচারের এ মামলায় শিগগিরই চার্জশিট দেয়া হবে। নিয়মবহির্ভূতভাবে সিটি করপোরেশনের দোকান বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা সাদেক হোসেন খোকার নামেও নতুন করে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় সব নেতাই আছেন কারাগারে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাদের কয়েকজনকে দণ্ডিত করা হয়েছে, কয়েকজনের রায় অপেক্ষমাণ। দণ্ডপ্রাপ্তদের একজনের রায় কার্যকর করেছে সরকার। একজন ইন্তেকাল করেছেন কারাগারে। দলটির দ্বিতীয় সারির প্রায় সব নেতাও রাজনৈতিক মামলায় আটক আছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ৫ জানুয়ারির আগে যে আন্দোলন হয়, সেই আন্দোলনের সময় পুলিশের করা বিভিন্ন মামলায় তাদেরও আসামি করা হয়। এসব মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার অভিযোগ গঠন করা হয় জামায়াত ও শিবিরের সাবেক ও বর্তমান ১৫৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া আছে আরো অনেক মামলায়। দলটির যেসব নেতাকর্মী এখন বাইরে আছেন, তাদের বেশির ভাগই আছেন পলাতক ও আত্মগোপনে। গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রায় দেড় বছর রাজধানীসহ সারা দেশে হরতাল-অবরোধে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা হয়। এসব ঘটনায় শুধু রাজধানীতেই বিএনপি-জামায়াতসহ তখনকার ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় প্রায় ৩০০ মামলা হয়। এর মধ্যে শতাধিক মামলায় এরই মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। বাকিগুলোর তদন্ত চলছে। বেশির ভাগ মামলায়ই বিএনপি-জামায়াত জোটের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরপর্যায়ের নেতাকর্মীরা আসামি। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকার রাজনৈতিকভাবে তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করবে। কিন্তু সরকার যে পদ্ধতি অবলম্বন করছে তাতে জনগণ এবং বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার ুণœ হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক জোটের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমাতেই তারা দ্রুততার সাথে বিভিন্ন মামলায় অভিযোগপত্র দিচ্ছে। তারা সম্প্রচার নীতিমালার মতো একটি কালো নীতিমালা করেছে। বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদে নিচ্ছে। এটি এমন একটি সংসদে নেয়া হচ্ছে যার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। ৭২ মামলায় অভিযোগপত্র : পুলিশের অপরাধ ও তথ্য প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় কেবল ঢাকাতেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন তখনকার ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২০০টি মামলা হয়। এতে নামে এক হাজার ৪০০ এবং বেনামে কয়েক হাজার লোককে আসামি করা হয়। তবে এর মধ্যে একই ব্যক্তি একাধিক মামলার আসামি আছেন। গত সাত মাসে ৭২টি মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ২১ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুলকে ৪৭টি মামলায় আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি মামলার বিচার শুরু হয়েছে। ঢাকায় গত এক মাসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ১২ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। চার মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারও শুরু হয়েছে। সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ তারেক মঈনুল ইসলাম ভূঁইয়া দুই মামলায় বিএনপির ৪১ জন নেতার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন। শাহজাহানপুর থানায় দায়ের করা দ্রুত বিচার আইনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। আগামী ২ অক্টোবর অভিযোগ শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করা হয়েছে। একই আদালত পল্টন মডেল থানায় দায়ের করা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরকতউল্লাহ বুলু, আলালসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১২ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
Headlines from most popular newspapers of Bangladesh. বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রধান প্রধান দৈনিক পত্রিকার সংবাদ শিরোনামগুলো এক নজরে দেখে নিন।
Friday, September 5, 2014
মামলায় নাজেহাল বিএনপি জোট:নয়াদিগন্ত
হওয়া এসব মামলায় আদালতে ধারাবাহিকভাবে অভিযোগপত্র জমা দিচ্ছে পুলিশ। এসবের ওপর ভিত্তি করে শুরু হচ্ছে বিচারকাজ। সম্প্রতি এই জোটের শীর্ষ ১৪৭ জন নেতার বিরুদ্ধে বিচারকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশেনের সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন নয়া দিগন্তকে বলেন, দেশের সাধারণ মানুষ জানে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব মামলা দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসাচরিতার্থ করতেই সরকার এখন এসব মামলায় অভিযোগপত্র দিচ্ছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হচ্ছে সাধারণ মানুষ তা বিশ্বাস করে না। তিনি বলেন, সরকার যদি মনে করে এভাবে মামলায় অভিযুক্ত করে রাজনীতিবিদদের রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেবে, তাহলে তারা ভুল করবে। অতীতেও এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল, তা সফল হয়নি। এভাবে আন্দোলন দমন করা যায় না, নেতাদের জনবিচ্ছিন্ন করা যায় না। আমি মনে করি সরকার এই অশুভ পথে না হেঁটে সুস্থ রাজনীতির ধারায় ফিরে আসবে। বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. পিয়াস করিম বলেন, সরকার স্পষ্টতই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এসব মামলা সচল করছে। বিরোধী দল আন্দোলনের কথা বলছে। তাদের আন্দোলন দমিয়ে দেয়ার জন্য একটি মনস্তাত্ত্বিক চাপ সৃষ্টি করতে সরকার এসব পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে মনে হয়। বিএনপি জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সারা দেশে কী পরিমাণ মামলা আছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই নেতৃত্বদানকারী দল বা কারো কাছে। তবে জোটের প্রধান দল বিএনপির চেয়ারপারসন থেকে শুরু করে প্রায় সব নেতার বিরুদ্ধেই মামলা রয়েছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী নয়া দিগন্তকে বলেন, সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ১০-১২ হাজার রাজনৈতিক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় অভিযুক্ত আছেন প্রায় ৩০ হাজার নেতাকর্মী। এদের মধ্যে এখনো কারাগারে আছেন প্রায় সাত হাজার নেতাকর্মী। জোটপ্রধান বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রয়েছে পাঁচটি মামলা। ইতোমধ্যে দু’টি মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নি¤œ আদালতে একটি দুর্নীতি মামলা থেকে বেকসুর খালাস পেয়েছেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে এখনো বিচারাধীন আছে ১৪টি মামলা। সব মিলিয়ে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে রয়েছে ২৬টি মামলা। দলটির স্থায়ী কমিটির ১৮ সদস্যের মধ্যে দুইজন বাদে সবার বিরুদ্ধেই রয়েছে মামলা। স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী দীর্ঘ দিন কারাগারে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে দণ্ডিত করেছেন ট্রাইব্যুনাল। স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দুর্নীতির অভিযোগে হওয়া এক মামলায় কয়েক মাস ধরে জেলে। একাধিকবার জামিন নিয়েও মুক্তি মেলেনি তার। তার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ২০টির বেশি। ১৪ মামলার আসামি স্থায়ী কমিটির আরেক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তার বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একটি মামলায় চার্জশিট দাখিল করেছে দুদক। স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আ স ম হান্নান শাহ ১১ মামলার আসামি, এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে রয়েছে ৯ মামলা, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে আছে ২৩ মামলা, স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪১টি মামলা। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪৭টি মামলা। এ ছাড়া বিএনপির কিছু নেতার বিরুদ্ধে আছে শতাধিক মামলা। বিএনপির সহছাত্রবিষয়ক সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ১৬০টি, যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের বিরুদ্ধে ১১০টি, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নিরবের বিরুদ্ধে ১৩০টি মামলা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেলের বিরুদ্ধে রয়েছে ৭৫টি মামলা। ছাত্রদলের সভাপতি আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েলের বিরুদ্ধে ৮০টি, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিবের বিরুদ্ধে ১৪০টি মামলা রয়েছে। এসব মামলা ছাড়াও থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সারা দেশে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার সংখ্যা লক্ষাধিক। গত সোমবার রাজধানীর পল্টন থানায় করা দ্রুত বিচার আইনের একটি মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জশিট) গঠন করেছেন আদালত। এ মামলায় ২৫ সেপ্টেম্বর স্যাগ্রহণের দিনও ধার্য করা হয়েছে। অপর একটি মামলায় আরো কয়েক নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন আদালত। এই দু’টি মামলায় মোট ১৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন আমানউল্লাহ আমান, বিরোধীদলীয় সাবেক চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক, ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, মোহাম্মদ শাহজাহান ছাড়াও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের শীর্ষ নেতারা। এ দিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে দেয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ের খসড়া ফাঁসের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় গত বৃহস্পতিবার আদালতে চার্জশিট দিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ওই মামলায় সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর স্ত্রী-ছেলে, আইনজীবীসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। এ ছাড়া দুর্নীতি দমন কমিশন দুদককেও কয়েক দিন ধরে মামলা নিয়ে বেশ সচল দেখা গেছে। অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে সরকারদলীয় কয়েক নেতার পাশাপাশি বিরোধী দলের বেশ কয়েকজন নেতাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। গত সোমবার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এম মোরশেদ খান ও তার ছেলেকে অর্থ পাচার মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের দুই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এ মামলায় এম মোরশেদ খান ও তার ছেলেসহ অভিযুক্তরা জামিনে রয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুদক কমিশনার জানান, অর্থ পাচারের এ মামলায় শিগগিরই চার্জশিট দেয়া হবে। নিয়মবহির্ভূতভাবে সিটি করপোরেশনের দোকান বরাদ্দ দেয়ার অভিযোগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর বিএনপির উপদেষ্টা সাদেক হোসেন খোকার নামেও নতুন করে একটি মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় সব নেতাই আছেন কারাগারে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাদের কয়েকজনকে দণ্ডিত করা হয়েছে, কয়েকজনের রায় অপেক্ষমাণ। দণ্ডপ্রাপ্তদের একজনের রায় কার্যকর করেছে সরকার। একজন ইন্তেকাল করেছেন কারাগারে। দলটির দ্বিতীয় সারির প্রায় সব নেতাও রাজনৈতিক মামলায় আটক আছেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ৫ জানুয়ারির আগে যে আন্দোলন হয়, সেই আন্দোলনের সময় পুলিশের করা বিভিন্ন মামলায় তাদেরও আসামি করা হয়। এসব মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার অভিযোগ গঠন করা হয় জামায়াত ও শিবিরের সাবেক ও বর্তমান ১৫৪ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয়া আছে আরো অনেক মামলায়। দলটির যেসব নেতাকর্মী এখন বাইরে আছেন, তাদের বেশির ভাগই আছেন পলাতক ও আত্মগোপনে। গত ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রায় দেড় বছর রাজধানীসহ সারা দেশে হরতাল-অবরোধে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক সহিংসতা হয়। এসব ঘটনায় শুধু রাজধানীতেই বিএনপি-জামায়াতসহ তখনকার ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় প্রায় ৩০০ মামলা হয়। এর মধ্যে শতাধিক মামলায় এরই মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। বাকিগুলোর তদন্ত চলছে। বেশির ভাগ মামলায়ই বিএনপি-জামায়াত জোটের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরপর্যায়ের নেতাকর্মীরা আসামি। বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান এ প্রসঙ্গে নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকার রাজনৈতিকভাবে তার প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করবে। কিন্তু সরকার যে পদ্ধতি অবলম্বন করছে তাতে জনগণ এবং বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিগুলোর গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক অধিকার ুণœ হচ্ছে। বিরোধী রাজনৈতিক জোটের গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে দমাতেই তারা দ্রুততার সাথে বিভিন্ন মামলায় অভিযোগপত্র দিচ্ছে। তারা সম্প্রচার নীতিমালার মতো একটি কালো নীতিমালা করেছে। বিচারপতিদের অভিশংসনের ক্ষমতা সংসদে নিচ্ছে। এটি এমন একটি সংসদে নেয়া হচ্ছে যার কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই। ৭২ মামলায় অভিযোগপত্র : পুলিশের অপরাধ ও তথ্য প্রসিকিউশন সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় কেবল ঢাকাতেই বিএনপির নেতৃত্বাধীন তখনকার ১৮ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ২০০টি মামলা হয়। এতে নামে এক হাজার ৪০০ এবং বেনামে কয়েক হাজার লোককে আসামি করা হয়। তবে এর মধ্যে একই ব্যক্তি একাধিক মামলার আসামি আছেন। গত সাত মাসে ৭২টি মামলার অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ২১ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। মির্জা ফখরুলকে ৪৭টি মামলায় আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি মামলার বিচার শুরু হয়েছে। ঢাকায় গত এক মাসে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে ১২ মামলায় অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে। চার মামলায় অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচারও শুরু হয়েছে। সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার দ্রুত বিচার আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ তারেক মঈনুল ইসলাম ভূঁইয়া দুই মামলায় বিএনপির ৪১ জন নেতার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন। শাহজাহানপুর থানায় দায়ের করা দ্রুত বিচার আইনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করা হয়েছে। আগামী ২ অক্টোবর অভিযোগ শুনানির জন্য তারিখ ধার্য করা হয়েছে। একই আদালত পল্টন মডেল থানায় দায়ের করা ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগে দায়ের করা মামলায় বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, বরকতউল্লাহ বুলু, আলালসহ ৪১ জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন। এ মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১২ অক্টোবর পরবর্তী তারিখ ধার্য করেছেন আদালত।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment