Friday, September 5, 2014

‘এক্সকুসিভ ইকোনমিক জোনের বাইরে বাংলাদেশের এলাকা খুবই সঙ্কুচিত হয়েছে’:নয়াদিগন্ত

বিতর্কটা চাপা পড়ে গেলেও তা ফের জাগিয়ে তুলেছেন ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা। তারা  ভারত-বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতের রায়  বিশ্লেষণ করে ৩১ আগস্ট বলেছেন, ‘এক্সকুসিভ ইকোনমিক জোনের বাইরে বাংলাদেশের এলাকা খুবই সঙ্কুচিত হয়েছে’।  কিন্তু জুলাই মাসের গোড়ার দিকে আন্তর্জাতিক আদালত যখন রায়টি দিয়েছিল সে সময় সরকার তরফে দাবি করা হয় সমুদ্রে আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। অন্য দিকে বিরোধী শিবির থেকে তালপট্টি
দ্বীপটির মালিকানা হারানোর বিষয়টি তুলে ধরা হলেও চুলচেরা বিশ্লেষণ কেউই করেননি। দিল্লি থেকে ৩১ আগস্ট বিবিসি পরিবেশিত খবরের ভাষ্য মতে, ভারত-বাংলাদেশ সমুদ্রসীমা নিয়ে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায় বিশ্লেষণ করে ভারতীয় বিশেষজ্ঞদের দাবি, বঙ্গোপসাগরে এক্সকুসিভ ইকোনমিক জোনের বাইরে ভারতের কর্তৃত্ব এই রায়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং সেটি স্ট্র্যাটেজিক দৃষ্টিকোণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে বিতর্কিত দণি তালপট্টি দ্বীপটি রায়ে ভারতের দিকে পড়লেও তার আলাদা কোনো তাৎপর্য নেই বলেই তারা মনে করছেন। সমুদ্রসীমা নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চার দশকের পুরনো বিবাদের নিষ্পত্তি করে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল তাদের রায় দিয়েছে জুলাই মাসের গোড়ার দিকে। সাগরে এক্সকুসিভ ইকোনমিক জোনের  (ইইজেড) যে অংশটা নিয়ে বিরোধ ছিল, তার বেশিটা বাংলাদেশের দিকে পড়েছে ঠিকই, কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রায় খুঁটিয়ে পড়ে ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তার বাইরে সাগরের বড় অংশে এই রায় ভারতের পইে গেছে। জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার মেরিন শাখার সাবেক ডিজি বিজন কুমার সাহা বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বিবিসিকে  বলেছেন, ‘সমুদ্রসীমার রেখাটা যেহেতু ১৭৭ ডিগ্রি ৩০ মিনিট বরাবর সোজা টানা হয়েছে। কোনো ডান দিক বাঁ দিক করা হয়নি। তাই ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত ইইজেডে বাংলাদেশ তাদের দাবির অনেকটাই পেয়েছে, তবে তার বাইরে কিন্তু তারা বিশেষ কিছুই পায়নি। তিনি বলেন, এক্সকুসিভ ইকোনমিক জোনের  বাইরে এই অংশটায় বাংলাদেশ চেয়েছিল সীমারেখাটা টানা হোক আরো পশ্চিম ঘেঁষে, ২১৪ ডিগ্রিতে, কিন্তু তা হয়নি। তা ছাড়া দেিণ ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ আর পূর্বে মিয়ানমার থাকায় এক্সকুসিভ ইকোনমিক জোনের  বাইরে বাংলাদেশের এলাকা খুবই সঙ্কুচিত হয়ে গেছে, অন্য দিকে ভারতের স্বার্থ সুরতি হয়েছে। অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরের বেশির ভাগ অংশে ভারতের কর্তৃত্ব এই রায়ে নিশ্চিত হয়েছে, তাই স্ট্র্যাটেজিক দৃষ্টিতেও এই রায়ে ভারত খুশি। তবে হাঁড়িয়াভাঙা নদী মোহনার কাছে দণি তালপট্টি তথা নিউ মুর আইল্যান্ড দ্বীপটি ভারতের দিকে পড়লেও সমুদ্রসম্পদের দিক থেকে একে আলাদা গুরুত্ব দিতে নারাজ ভারতীয় বিশেষজ্ঞরা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিদ্যা বিভাগের প্রধান ড. সুগত হাজরা বলছেন, বঙ্গোপসাগরের উত্তরভাগে তেল বা প্রাকৃতিক গ্যাস পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি। কারণ সেখানে উপকূলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য আছে। তবে সেটা আছে সীমান্তের দু’দিকেই, ফলে ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশই তাতে লাভবান হতে পারে, যদিও এখন পর্যন্ত ওই অঞ্চলে অনুসন্ধান খুব কমই হয়েছে। তিনি বলেন, শুধু হাইড্রোকার্বনই নয়, সীমানা নির্ধারণের পর ইলিশ-পমফ্রেট-সার্ডিনের মতো দামি মাছ আহরণের সুযোগও বাড়বে দুই দেশেরই। তবে তালপট্টি কোন দিকে গেল তাতে খুব একটা কিছু আসবে-যাবে না বলেই তাদের ধারণা। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিন বলেন, দুই পই ট্রাইব্যুনালে গেছে, তাদের রায় মেনে নিয়েছে এবং এখন দুই দেশই চেষ্টা করছে এই রায়ের ভিত্তিতে কিভাবে সহযোগিতার নতুন নতুন পথ খোলা যায়। ফলে এই রায়কে আমরা বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্কের আলোতেই দেখছি। সাদা-কালোয় বিচার করছি না। বিবিসির ভাষ্য মতে, জয়-পরাজয়ে না গেলেও ভারত মনে করছে, এই রায়ে তাদের কোনো লোকসান তো হয়ইনি বরং লাভই হয়েছে। কারণ এত দিন থমকে থাকার পর এক্সকুসিভ ইকোনমিক জোনে নানা কর্মকাণ্ড যেমন এবার শুরু করা যাবে, তেমনি তার বাইরেও বঙ্গোপসাগরে ভারত জানান দিতে পারবে তাদের স্ট্র্যাটেজিক উপস্থিতি। অন্য দিকে ঢাকায় ব্লু ইকোনমি নিয়ে আয়োজিত কর্মশালায় জানানো হয়, আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ে ভারত ও মিয়ানমারের সাথে সমুদ্রসীমা নির্ধারিত হওয়ায় বাংলাদেশ এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার সমুদ্র অঞ্চল, ২০০ নটিক্যাল মাইলের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম উপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপানে অবস্থিত সব ধরনের প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার অধিকার পেয়েছে।  

No comments:

Post a Comment