বেসরকারি ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৮টি ক্যাম্পাসে ভর্তিতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সতর্ক করে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে সঠিক তথ্যাদি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের। তবে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিমধ্যে অধ্যয়নরত ও পাস করা শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। এ অবস্থায় নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কায় পড়ে
ছে অধ্যয়নরত ও পাস করা অর্ধলক্ষাধিক শিক্ষার্থী। বেসরকারি অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি হওয়া নিয়েও সংশয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই জোড়াতালির সতর্কতা দিয়ে ইউজিসি তাদের দায়িত্ব শেষ করতে পারে না। যাচাই-বাছাইয়ের ভার যদি শিক্ষার্র্থী-অভিভাবকদেরই দেওয়া হয় তাহলে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইউজিসির ভূমিকা কী? অনেক ক্যাম্পাসের ব্যাপারে আদালতের কোনো নিষেধাজ্ঞাও নেই। তার পরও কেন সরাসরি নিষিদ্ধ না করে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করেই ইউজিসি দায়িত্ব শেষ করতে চাইছে তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এ ছাড়া সাতটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্তিকরণ পরীক্ষায় অংশ নিতে রেজিস্ট্রেশন করতে না দেওয়ার সুপারিশ করেছে বার কাউন্সিলের লিগ্যাল এডুকেশন কমিটি। এ বিষয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর কাউন্সিলের মুলতবি সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একদিকে বার কাউন্সিলের নিষেধাজ্ঞা, অন্যদিকে ইউজিসির এই সতর্কবার্তায় উদ্বিগ্ন শিক্ষার্থীরা। এমনকি যাঁরা এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্প্রতি পাস করে বেরিয়েছেন, তাঁরাও চাকরি খোঁজার ক্ষেত্রে সমস্যায় পড়ছেন। বিতর্কিত এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম দেখলেই চাকরিদাতারা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। যে ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ব্যাপারে সতর্কতা জারি করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম, সাউদার্ন, নর্দান, বিজিসি ট্রাস্ট, ইবাইস, অতীশ দীপঙ্কর, দ্য পিপলস, আন্তর্জাতিক ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম, শান্ত-মারিয়াম ইউনিভার্সিটি অব ক্রিয়েটিভ টেকনোলজি, আমেরিকা-বাংলাদেশ ও কুইন্স ইউনিভার্সিটি। দারুল ইহসান বাদে বাকি ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৫০ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত বলে জানা যায়। প্রাইম ইউনিভার্সিটির দারুস সালাম রোডের ক্যাম্পাস থেকে সম্প্রতি আইন বিষয়ে অনার্স শেষ করেছেন মো. হাসনাত। তিনি বলেন, ‘লক্ষ্য ছিল আইনজীবী হওয়ার। কিন্তু এনরোলমেন্ট পরীক্ষায় অংশ নিতে পারছি না। বিভিন্ন জায়গায় চাকরির চেষ্টা করতে গিয়েও বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। ইউজিসির এই সতর্কতার কারণে বেশি বাধার মুখে পড়তে হবে।’ ইবাইস ইউনিভার্সিটির ধানমণ্ডি ক্যাম্পাসের বিবিএ তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভর্তির ক্ষেত্রে সতর্কতা জারি করলেও আমরা যারা পড়ছি, তাদের কী হবে? এ ধরনের একটি বিজ্ঞপ্তির পর আমরা কি কোথাও গিয়ে গুরুত্ব পাব? সরকার আগেই ব্যবস্থা নিলে আমাদের ঝামেলায় পড়তে হতো না।’ জানা যায়, সারা দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রায় ৩০০ অবৈধ ক্যাম্পাস রয়েছে। কিন্তু ইউজিসি শুধু ৪৮টি ক্যাম্পাসের ওপর সতর্কতা জারি করেছে। সতর্কবার্তায় প্রাইম বিশ্ববিদ্যালয়ের ধানমণ্ডি, বারিধারা, ফার্মগেট ও মিরপুর-১-এর চিড়িয়াখানা রোড ক্যাম্পাস অননুমোদিত বলা হয়েছে। আর আদালতে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় মিরপুর-১-এর দারুস সালাম রোড ও উত্তরার বিএনএস সেন্টারে দুটি ক্যাম্পাস মূল ক্যাম্পাস হিসেবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এখন যদি দুটি ক্যাম্পাসেই শিক্ষার্থী ভর্তি হয় আর পরে তার ক্যাম্পাস বৈধ হিসেবে ঘোষণা করা হয় তাহলে বাকি ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীদের কী হবে? আর এত দিন শুধু দারুস সালাম ক্যাম্পাসকে বৈধ বললেও এখন সেখান থেকে সরে এসেছে ইউজিসি। এ ছাড়া ইবাইস ইউনিভার্সিটির মোহাম্মদপুর হাউজিং সোসাইটি ও উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের দুটি ক্যাম্পাসকে অননুমোদিত বলা হলেও এর বাইরে রাজধানীর ধানমণ্ডি, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর ও গুলশানের শাহাজাদপুরে চারটি ক্যাম্পাস রয়েছে। সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে ১৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিভিন্ন সময়ে তাঁর বক্তব্যে ১৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেছেন। এই ১৫টি থেকেই ১২টির ব্যাপারে সতর্ক করল ইউজিসি। যদিও এর বাইরেও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক ক্যাম্পাস এবং ট্রাস্টিবোর্ড নিয়ে নানা ধরনের ঝামেলা রয়েছে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ খুলনা এবং ঢাকার মতিঝিলে দুটি অননুমোদিত ক্যাম্পাস পরিচালনা করলেও তাদের বিষয়ে কোনো সতর্কবার্তা নেই। এখন এই ১২টির বাইরে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার ভরসা পাচ্ছেন না। কেননা পরে সেগুলোকেও একইভাবে সতর্কবার্তা দেওয়া হলে তাঁদের সমস্যায় পড়তে হবে। নর্দান ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘যখন একাধিক ক্যাম্পাসে নিষেধাজ্ঞা ছিল না, তখন আমরা ক্যাম্পাসগুলো করেছি। আমাদের খুলনা ক্যাম্পাস যথেষ্ট সাকসেসফুল। এখন যেহেতু খুলনায় হাজার হাজার শিক্ষার্র্থী রয়েছে, তাই আমরা ওখানেই একটি পৃথক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন চাই।’ ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে আজাদ চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেন, ‘আমরা ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়কে সতর্ক করিনি। সতর্ক করা হয়েছে তাদের ৪৮টি ক্যাম্পাসের ব্যাপারে। আর এই ক্যাম্পাসগুলো আগে থেকেই কালো তালিকাভুক্ত ছিল। এসব ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে গেলে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে ভাবা হবে। যারা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল না করে এসব ক্যাম্পাসে ভর্তি হয়েছে, তাদের বৈধ ক্যাম্পাসে স্থানান্তর করা হবে। আর এই তালিকার বাইরেও যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ের অবৈধ ক্যাম্পাস রয়েছে, সেসব অনুসন্ধান শেষে পরে প্রকাশ করা হবে।’
No comments:
Post a Comment