হুমকির মুখে জননিরাপত্তা। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন সাধারণ মানুষ থেকে সর্বমহল। রাস্তাঘাট তো দূরে থাক মানুষ তার ঘরেও নিরাপদে নেই এখন। স্বরাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী এবং পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিদের বক্তব্যে মানুষ চরম হতাশ হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি কয়েকটি খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে এই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। এ দিকে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার যথেষ্ট প্রমাণ থাকার পরও গ্রেফতার করা হচ্ছে না অনেক অপরাধীকে।
এতে মানুষের উদ্বেগ আরো বাড়ছে। ভুক্তভোগীরা বলেছেন, এভাবে অপরাধীরা আইনের ঊর্ধ্বে থেকে গেলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হবে। তবে আইজিপি বলেছেন, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে। তবে পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, চলতি বছরের গত সাত মাসে খুন হয়েছে ২৬৬৯ জন। গত বুধবার রাতে রাজধানীর পূর্ব রাজাবাজারের বাসায় নৃশংসভাবে খুন হন চ্যানেল আই’র উপস্থাপক নুরুল ইসলাম ফারুকী। দুর্বৃত্তরা তার নিজ বাসায় ঢুকে গলা কেটে হত্যা করে তাকে। ঘটনার সময় পরিবারের সদস্যদের বাসার ভেতরেই আটকে রাখা হয়। ঘটনার সাত দিন পরও এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি পুলিশ-গোয়েন্দারা। গত বৃহস্পতিবার রাতে রাজধানীর মগবাজারে দুর্বৃত্তদের গুলিতে নিহত হয়েছেন তিনজন। জমিসংক্রান্ত বিরোধ এবং চাঁদার টাকা না পেয়ে দুর্বৃত্তরা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে শত শত লোকের সামনে দিয়ে নির্বিঘেœ চলে যায়। স্থানীয় সন্ত্রাসী কালাবাবু দীর্ঘদিন এই এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব সৃষ্টি করে রেখেছিল। পুলিশ এবং গোয়েন্দাদের কাছে এ তথ্য থাকার পরও কালাবাবু ছিল ধরাছোঁয়ার বাইরে। সবশেষে তিনজনকে হত্যা করার পর টনক নড়ে পুলিশ গোয়েন্দাদের। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই দুর্বৃত্ত নিজেকে ক্ষমতাসীন দলের লোক বলে পরিচয় দিয়ে আসছিল। শুধু অপরাধীরাই নয়, পুলিশের কিছু সদস্য যে আচরণ করছে মানুষের সাথে তাও উদ্বেগের বিষয়। এমনকি তাদের রোষানল থেকে রেহাই পাচ্ছেন না সাংবাদিকরাও। সম্প্রতি কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে পুলিশ কর্মকর্তা আজাদের নির্যাতনে মারাত্মক আহত হয়েছেন সাংবাদিক অখিল পোদ্দার। গত মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে অপহৃত হন প্রবাসী সাংবাদিক দর্পণ কবির এবং দৈনিক ডেসটিনির সাংবাদিক মিজান। এসব ঘটনায় এখনো কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। কারা জড়িত থাকতে পারে সে সম্পর্কেও কোনো তথ্য দিতে পারেননি পুলিশ গোয়েন্দারা। বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনার সাথে জড়িত সন্ত্রাসীরা গ্রেফতার হচ্ছে না। তারা প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল করিম হত্যার সাথে জড়িতরাও ধরা পড়ছে না। সূত্র জানায়, এভাবে অপরাধীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর ফলে মানুষ এমনিতেই আতঙ্কে থাকে। বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক আবুল বাশার বলেন, এর প্রধান কারণ অপরাধীদের বিচার হয় না। বিচার না হওয়ায় অপরাধের বিস্তৃতি ঘটছে। দেশে আইনের শাসন না থাকার কারণে এটা হচ্ছে। মানুষ এ নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন। আমি নিজেও উদ্বিগ্ন। পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহমুদ খন্দকার নয়া দিগন্তকে বলেছেন, খুনের যে ঘটনা ঘটেছে এটা অনভিপ্রেত এবং দুঃখজনক। লোমহর্ষক এই ঘটনার সাথে কারা জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দোষীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনা হবে। তবে এ ঘটনা দিয়ে বিবেচনার কারণ নেই যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। তিনি বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
No comments:
Post a Comment