Thursday, September 18, 2014

ভাবমূর্তি সুসংহত করার সুযোগ মনে করছে বাংলাদেশ:কালের কন্ঠ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৯তম অধিবেশনে অংশ নিতে আগামী রবিবার নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন। সোমবার থেকে তিনি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকগুলোতে নেতৃত্ব দেবেন ও শীর্ষ পর্যায়ের বিভিন্ন সভায় অংশ নেবেন। এর মধ্যে ২৬ সেপ্টেম্বর শান্তিরক্ষা কার্যক্রমবিষয়ক এক সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে ও রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট পল কাগামের সঙ্গে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবে
ন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ‘গত ১২ জানুয়ারি বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রথম অধিবেশন। এতে প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সর্বোচ্চ পর্যায়ের অংশগ্রহণ বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি সুসংহত করবে এবং এর মধ্য দিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারের বহুমুখী সফলতা তুলে ধরার যথাযথ সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আমি মনে করি।’ গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর এবারই প্রথম জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে শেখ হাসিনার। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ পাওয়ার চার দশক পূর্তি উপলক্ষে বান কি মুন যে বাণী পাঠিয়েছেন তাতে এ দেশের ও বর্তমান নেতৃত্বের অনেক প্রশংসা থাকলেও শেষাংশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সংলাপের আহ্বান রয়েছে। চার দশক পূর্তি উপলক্ষে প্রকাশিত ক্রোড়পত্রে সেই বাণী স্থান পায়নি। কেউ কেউ এ জন্য বাণীতে সংলাপের আহ্বান থাকাকে দায়ী করলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বহিঃপ্রচার অনুবিভাগের মহাপরিচালক নূর-এ-হেলাল সাইফুর রহমান গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, দেরিতে আসার কারণে জাতিসংঘ মহাসচিবের বাণী ক্রোড়পত্রে স্থান দেওয়া সম্ভব হয়নি। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক, সচিব (দ্বিপক্ষীয়) মুস্তাফা কামাল, মহাপরিচালক (জাতিসংঘ) সাঈদা মুনা তাসনীম উপস্থিত ছিলেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী ২২ থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে অবস্থান করবেন। ২৯ সেপ্টেম্বর তিনি দেশে ফিরবেন। এ বছর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের বিতর্কের প্রতিপাদ্য হলো- ‘ডেলিভারিং অন অ্যান্ড ইমপ্লিমেন্টিং অ্যা ট্রান্সফরমেটিভ পোস্ট-২০১৫ ডেভেলপমেন্ট এজেন্ডা’। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদে বাংলায় বক্তব্য দেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রীর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, উচ্চ পর্যায়ের সভাগুলোর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী আগামী ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনের উদ্যোগে অনুষ্ঠেয় ২০১৪ সালের জলবায়ু সম্মেলনের বিভিন্ন সেশনে অংশ নেবেন। এতে তিনি জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অভিযোজন ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে অর্জিত অগ্রগতি, এ ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় অর্থ, প্রযুক্তি ও সক্ষমতা সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৬ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগে শীর্ষ পর্যায়ের ‘শান্তিরক্ষা সম্মেলন’ অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্বশান্তি ও উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অঙ্গীকার, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ ও ভবিষ্যৎমুখী তৎপরতা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক উদ্যোগের পরিপ্রেক্ষিতে শেখ হাসিনাকে ওই সম্মেলনে যৌথ সভাপতিত্ব করার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ মহাসচিব আয়োজিত ‘গ্লোবাল এডুকেশন ফার্স্ট ইনিশিয়েটিভের (জিইএফআই) ‘কোয়ালিটি এডুকেশন ফর দ্য ওয়ার্ল্ড উই ওয়ান্ট’ শীর্ষক বৈঠকে অংশ নেবেন। এতে তিনি জিইএফআইয়ের অন্যতম চ্যাম্পিয়ন সরকারপ্রধান হিসেবে ২০১৫-পরবর্তী উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার আওতায় শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা তুলে ধরবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য হওয়ার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্রী উপস্থিত থাকবেন। এই অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ছাড়াও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদের উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২৭ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কের সেন্ট্রাল পার্কে ‘গ্লোবাল পোভার্টি প্রজেক্ট’ আয়োজিত ‘গ্লোবাল সিটিজেন ফেস্টিভ্যাল ২০১৪-তে যোগ দেবেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এসব কর্মসূচি ছাড়াও প্রধানমন্ত্রী ভারত, নেপাল, চিলি, কাতার, বেলারুশসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনা করবেন। এসব বৈঠকের তারিখ ও সময় নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি চলমান। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শেখ হাসিনার আনুষ্ঠানিক বৈঠকের কথা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিউ ইয়র্কে অবস্থানকালে প্রতিবারের মতো জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আয়োজিত দুটি আলাদা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। এ ছাড়া তিনি যুক্তরাষ্ট্র চেম্বার ও বিজনেস কাউন্সিলের যৌথ আয়োজনে এক বৈঠকে অংশ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা যেমন সার্ক, ওআইসি, ন্যাম, জি-৭৭ ও চীন, কমনওয়েলথ, অ্যালায়েন্স অব সিভিলাইজেশন, এশিয়ান কো-অপারেশন ডায়ালগ ইত্যাদি সংস্থাগুলোর মন্ত্রিপর্যায়ের সভাগুলোতে অংশ নেবেন। অর্ধডজন মন্ত্রীসহ সফরসঙ্গী ১৭৫ : পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিনি ছাড়াও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন, খাদ্যমন্ত্রী মো. কামরুল ইসলাম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দেবেন। পাশাপাশি সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনিসহ কয়েকজন সংসদ সদস্য, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, সাংবাদিক ও ব্যবসায়িক প্রতিনিধিরা প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হবেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীর সংখ্যা কত জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকারি প্রতিনিধিদলে ৫০ জনের মতো আছেন। কজন সচিব যাচ্ছেন জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক বলেন, সংশ্লিষ্ট একাধিক সচিব প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, নিরাপত্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল মিলে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী দাঁড়াবে প্রায় ১৭৫ জন। এর মধ্যে ব্যবসায়ীরা নিজ খরচে যাচ্ছেন। উন্নত বিশ্ব কথা রাখছে না : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম বলেন, উন্নত বিশ্বের দেশগুলো কথা রাখছে না। তাদের গ্রস ন্যাশনাল ইনকামের দশমিক ৭ শতাংশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে দেওয়ার কথা। এবারের অধিবেশনে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) নিয়ে আলোচনায় এটি বড় বিষয় হিসেবে উঠে আসতে পারে। এসডিজির সম্ভাব্য ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে বাংলাদেশ কোনগুলোতে গুরুত্ব দেবে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ নয়। আমরা ফ্যাসিলিটেট করি। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় এসব প্রশ্নের ভালো উত্তর দিতে পারবে।’ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে যেগুলোই গ্রহণ করা হোক না কেন সেগুলো বাংলাদেশের ২০২১ ও ২০৪১ লক্ষ্য অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

No comments:

Post a Comment