Monday, October 13, 2014

সড়কে প্রাণ হরণের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে ১০ বছরের জেল:কালের কন্ঠ

দেশে বছরে ১৫ হাজার সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এর বড় একটি কারণ হলো বৈধ লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো। ৬১ শতাংশ গাড়িচালক পরীক্ষা না দিয়েই ড্রাইভিং লাইসেন্স নিচ্ছেন। বৈধ লাইসেন্স ছাড়াই রাস্তায় গাড়ি চালাচ্ছেন ১৬ লাখ চালক। এ অবস্থায় লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালিয়ে রাস্তায় কাউকে আঘাত করলে বা সম্পত্তির ক্ষতি হলে দায়ী ব্যক্তির কমপক্ষে এক বছরের কারাদণ্ড এবং সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জন্য দায়ী চালকের (লাইসেন্সবিহীন) সর্বোচ্চ
১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে একটি আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। বর্তমান আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির জন্য দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।  সূত্র মতে, নতুন এ আইনের নাম দেওয়া হচ্ছে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৪’। এ আইনের প্রায় ৩০০ পৃষ্ঠার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়াটি শিগগিরই চূড়ান্ত করে তা মন্ত্রিসভা বৈঠকে তোলা হবে অনুমোদনের জন্য। খসড়ার বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে বিআরটিএ থেকে পাঠানোর পর গতকাল রবিবার এটি মন্ত্রণালয়ে পৌঁছেছে। জানা গেছে, এ খসড়া আইনে সড়কে কোনো ব্যক্তি শরীরে আঘাত পেলে দায়ী ব্যক্তির সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখা হচ্ছে। এ আইন বাস্তবায়িত হলে বিআরটিএর ক্ষমতার আওতা বেড়ে যাবে। বর্তমানে গাড়িচালকদের একটি অংশ নিরক্ষর। নতুন আইন হলে কোনো নিরক্ষর ব্যক্তি লাইসেন্স পাবেন না। লাইসেন্সের জন্য আবেদন করতে হলে প্রার্থীকে বাংলা বা ইংরেজি ভাষা লেখা, পড়া ও বোঝার যোগ্যতা থাকতে হবে। থাকতে হবে যথাযথ দৃষ্টিশক্তি। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন-মহাসড়ক বিভাগের সচিব এম এ এন ছিদ্দিক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এ আইন প্রণয়ন করা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। সড়ক পরিবহন খাত নিয়ন্ত্রণে ও সড়ক নিরাপত্তার জন্য আইনটি তৈরি করা হচ্ছে। এ আইনের আওতায় অপরাধ করলে চালকদের পয়েন্ট কেটে রাখা হবে। একপর্যায়ে তাঁদের লাইসেন্স অকার্যকর হয়ে যেতে পারে। প্রস্তাবিত আইনের চূড়ান্ত পরিমার্জনের জন্য তা বিআরটিএতে পাঠানো হয়েছিল। সেখানে পরিমার্জন শেষে এটি মন্ত্রণালয়ে এসেছে। এ নিয়ে আগামী সপ্তাহে আমরা বৈঠকে বসব। এটির সর্বশেষ পরিমার্জন শেষ করে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে মন্ত্রিসভা বৈঠকে।’  জানতে চাইলে বিআরটিএর চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সচিব কমিটিতে প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এটি একটি বড় আইন। লাইসেন্স না থাকলে কী ধরনের শাস্তি হবে বা অন্যান্য বিষয়ে প্রস্তাবিত আইনের বেশির ভাগ সুপারিশ বা প্রস্তাবই অপরিবর্তিত থাকবে। পরিমার্জনের জন্য মন্ত্রণালয় থেকে বিআরটিএতে পাঠানোর পর চূড়ান্ত হয় এটি। আমরা চাই এ আইন দ্রুত বাস্তবায়িত হোক।’ ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের চেয়ারম্যান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বর্তমানে সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি তিন বছরের কারাদণ্ড। এখন এটি জামিনযোগ্য। শাস্তি বাড়ানোর পাশাপাশি এটিকে জামিন অযোগ্য করতে হবে। জাপানে এ শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড, যুক্তরাষ্ট্রে এক থেকে ৯৯ বছরের। এ আইন প্রণয়নকারীরা আমাকে বলেছেন, বেশি শাস্তি দেওয়া হয় এমন দেশ তাঁরা খুঁজে পাননি।’ আইনের খসড়া থেকে জানা গেছে, এ আইনের আওতায় ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো ব্যক্তিকে গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দেওয়া হবে না। ভারী যানবাহন চালানোর লাইসেন্স পেতে হলে আবেদনকারীর বয়স কমপক্ষে ২১ বছর হতে হবে। পেশাদার চালকের ক্ষেত্রে ৬০ এবং অপেশাদার চালকের ক্ষেত্রে ৬৫ বছরের অধিক বয়সী ব্যক্তি লাইসেন্স নিতে পারবেন না। চালকদের পাশাপাশি চালকের সহকারী, সুপারভাইজার ও কন্ডাক্টরদেরও লাইসেন্স নিতে হবে। অসতর্কতা, অসাবধানতা বা বেপরোয়া গাড়ি চালানোর কারণে কোনো ব্যক্তির প্রাণহানি হলে দায়ী চালকের (লাইসেন্সধারী) সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনকারী চালকের বৈধ লাইসেন্স না থাকলে তাঁর বেলায় সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। আইনের আওতায় চালকদের লাইসেন্সের বিপরীতে পয়েন্টের ব্যবস্থা রাখা হবে। আইন ভঙ্গ করলে বা দুর্ঘটনা ঘটালে শাস্তির পাশাপাশি লাইসেন্সের কিছু পয়েন্ট কাটা হবে। এভাবে পুরো পয়েন্ট কাটা হয়ে গেলে চালকের লাইসেন্স অকার্যকর হয়ে যাবে। বর্তমানে রাস্তায় দুর্ঘটনার পর গাড়িচালকরা পালিয়ে যান। দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ৮৭ শতাংশ গাড়িচালককেই পুলিশ ধরতে পারে না। সড়কে দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পলায়নকারী গাড়িচালকদের বিরুদ্ধে শাস্তি, ইনস্যুরেন্স পলিসির পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য পর্যাপ্ত আর্থিক নিরাপত্তার ব্যবস্থার সুপারিশ করা হয়েছে প্রস্তাবিত খসড়া আইনে। চলন্ত অবস্থায় সেলফোন ও ইয়ারপ্লাগ ব্যবহার, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো, সিটবেল্ট না বাঁধা, নির্দিষ্ট সীমার অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালানো, হাইওয়ে কোড ও সিগন্যাল অমান্য করায় বিভিন্ন পরিমাণে জরিমানার সুপারিশ করা হয়েছে। বর্তমানে মোটরযান অধ্যাদেশ ১৯৮৩-এর মাধ্যমে বিআরটিএর কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা হচ্ছে। এটিকে যুগোপযোগী করতেই নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১০ সালে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে নেওয়া ক্লিন এয়ার অ্যান্ড সাসটেইনেবল এনভায়রনমেন্ট প্রকল্পের অধীনে এ আইনের খসড়া তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০১২ সালের ২০ জুন আইনের খসড়া তৈরি হয়। এর পর থেকেই বলা হচ্ছিল এটি বিভিন্ন পর্যায়ে যাছাই-বাছাই চলছে। জানা গেছে, পরিবহন শ্রমিকদের একটি পক্ষের চাপের কারণে এ খসড়া যাচাই-বাছাইয়ের নামে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে। অথচ সড়ক নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা এ আইন দ্রুত প্রণয়নের তাগিদ দিচ্ছেন।  রাস্তায় কোন কোন কর্মকাণ্ড অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে তার সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে প্রস্তাবিত খসড়া আইনে। মোটরযান অধ্যাদেশে বর্ণিত অপরাধের ক্ষেত্রে নিরূপিত অর্থদণ্ডের চেয়ে প্রস্তাবিত আইনে এটি দ্বিগুণ থেকে সর্বাধিক ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রস্তাবিত খসড়া আইন অনুসারে, সরকারের নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ থেকে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই অথরাইজেশন সার্টিফিকেট নিয়ে গাড়ি কিনতে হবে। সরকারের অথরাইজেশন সার্টিফিকেটের সংখ্যা নির্ধারণ করে দেওয়ার ক্ষমতা থাকবে। আর কেউ চাইলেই সরকার এ সার্টিফিকেট দিতে বাধ্য থাকবে না।

No comments:

Post a Comment