Wednesday, October 15, 2014

বিচারাধীন মামলা যাচ্ছে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে:কালের কন্ঠ

দীর্ঘ ১৮ বছর আগে ১৯৯৬ সালে কারসাজির মাধ্যমে শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি করে পুঁজিবাজার থেকে কোটি কোটি টাকা সরিয়ে নেওয়ার ঘটনায় দায়ের করা দুই মামলায় সব আসামিকে অব্যাহতি দেওয়ার পর বাকি মামলাগুলো বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে দীর্ঘদিন আগেই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পরও মামলাগুলো নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়ায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
এসইসির আইনজীবী রেজাউল করিম গতকাল মঙ্গলবার কালের কণ্ঠকে জানান, বিচারাধীন মামলাগুলো যাতে দ্রুতই বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসেবে গতকাল একটি মামলার শুনানির ধার্য দিনে সেটির কার্যক্রম স্থগিতের আবেদন জানানো হয়েছে। ১৯৯৬ সালের শেয়ার কেলেঙ্কারির ঘটনায় ১৯৯৭ সালে দায়ের করা মামলার আসামি অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের (ফরমার বাংলাদেশ কারবাইড লিমিটেড) স্বত্বাধিকারী আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও মোহাম্মদ ভাই গতকাল মামলার শুনানিতে আদালতে হাজির হননি। অন্যদিকে এসইসির পক্ষ থেকে আবেদন দাখিল করে আদালতকে মামলার কার্যক্রম স্থগিত রাখার অনুরোধ করা হয়। আবেদনে বলা হয়, সরকার ইতিমধ্যে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো বিচারের জন্য বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে। মামলাগুলোর বিচার সেই আদালতে হবে। এ কারণে বিচার কার্যক্রম আপাতত স্থগিত রাখা আবশ্যক। এসএইসির আইনজীবী জানান, ভবিষ্যতে বাকি সব মামলাই বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হবে। গত ২৯ এপ্রিল ঢাকা মহানগর দায়রা জজ মো. জহুরুল হকের আদালত থেকে দুই মামলার আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। সঙ্গে দুটি প্রতিষ্ঠানকেও মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এই অব্যাহতির বিরুদ্ধে এসইসি উচ্চ আদালতে আপিল করেছে। দুই মামলার নথি থেকে দেখা যায়, আমাম সি ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ ও অ্যাপেক্স ফুডস লিমিটেড দুটি প্রতিষ্ঠানের মালিকই এক। বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাফর আহমেদ ও জহুর আহমেদ এবং তাঁদের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ছিয়ানব্বইয়ের শেয়ার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকলেও সব দায় থেকে তাঁরা অব্যাহতি পেয়ে গেছেন মহানগর দায়রা জজের আদেশে। গতকাল এ নিয়ে কালের কণ্ঠে প্রতিবেদন ছাপা হওয়ার পর এসইসি বাকি মামলাগুলো স্থানান্তরের আবেদন জানাল। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয় প্রায় ১০ মাস আগে : চলতি বছরের ২ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট মামলাগুলোর এখন থেকে বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার হবে। ওই প্রজ্ঞাপনেই বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। এসইসি সূত্রে জানা গেছে, ইতিমধ্যে জেলা ও দায়রা জজ পদমর্যাদার বিচারক মো. হুমায়ুন কবীরকে ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। মহানগর দায়রা জজ আদালত দুটি মামলায় আসামিদের অব্যাহতি দিয়েছেন বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন ও বিচারক নিয়োগের পর। ওই দুটি মামলাও ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরিত হওয়ার কথা। কিন্তু কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় আগে আদালতেই আসামিদের অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি হয়। তবে প্রজ্ঞাপন জারি করে ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মহানগর দায়রা আদালতের ওই সব মামলার বিচারের এখতিয়ার থাকে না বলে মনে করেন আইনজীবীরা। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী নিজামুল হক মোল্যা কালের কণ্ঠকে বলেন, পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলো স্পর্শকাতর। বিনিয়োগকারীদের কোটি কোটি টাকা কারসাজির মাধ্যমে আত্মসাৎ করে সহজে দুই মামলার আসামিরা পার পেয়ে গেছেন এসইসির যথাযথ পদক্ষেপ না নেওয়া বা গাফিলতির কারণে। বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর তাঁদেরই দায়িত্ব ছিল যেসব আদালতে মামলাগুলো বিচারাধীন ছিল সেসব আদালতকে বিষয়টি জানানো এবং মামলা স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তা করা হয়নি। মামলাগুলো বিশেষ ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরে এসইসির নীরবতা, মামলা দায়েরে গাফিলতি, প্রক্রিয়াগত ভুলভ্রান্তির মতো ঘটনা সন্দেহের সৃষ্টি করে যে তারা আদৌ প্রভাবশালীদের বিচার চায় কি না। ছিয়ানব্বইয়ের শেয়ার কেলেঙ্কারির পর বিনিয়োগকারীরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে। ওই আন্দোলন থামাতে তদন্ত কমিটি হয়। কমিটির প্রতিবেদনে শেয়ার কেলেঙ্কারির হোতাদের বিরুদ্ধে মামলা করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়। ওই সুপারিশের ভিত্তিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আমলে শেয়ারবাজারের কেলেঙ্কারির ঘটনায় ১৫টি মামলা হয়। মামলাগুলো বাতিলের জন্য হাইকোর্টে আবেদন জানান আসামিরা। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে মামলাগুলোর কার্যক্রম স্থগিত ছিল। ২০১০ সালে আবারও বড় ধরনের শেয়ার কেলেঙ্কারির পর ছিয়ানব্বইয়ের ঘটনায় দায়ের করা মামলাগুলোতে এসইসি শুনানিতে অংশ নেয়। সম্প্রতি কয়েকটি মামলায় হাইকোর্ট আসামিপক্ষের আবেদন খারিজ করে দেন। যেসব মামলা বাতিলের আবেদন খারিজ হয় তার বিচারিক কার্যক্রম চলতে থাকে। এর মধ্যে দুটি মামলার দায় থেকে আসামিদের অব্যাহতি দেওয়া হয়।

No comments:

Post a Comment