মন্ত্রিসভা থেকে অপসারিত এবং ক্ষমতাসীন দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ার পর আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেছেন, তিনি দেশে ফিরে যেতে চান, তবে এ ব্যাপারে দলের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় বিবিসি বাংলায় দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফরকালে পবিত্র হজ এবং মহানবী (সা.) সম্পর্কে বিতর্কিত মন্তব্য করায় দেশে তাঁর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ শুরু হয়। গত রোববার তাঁকে দল ও সরকার থেকে অপ
সারণ করা হয়। লতিফ সিদ্দিকী বর্তমানে ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছেন। সেখান থেকে টেলিফোনে তিনি বিবিসিকে এ সাক্ষাৎকার দেন। নিচে তা প্রশ্ন-উত্তর আকারে তুলে ধরা হলো। প্রশ্ন: সরকার ও দল থেকে বের করে দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কীভাবে নিচ্ছেন? লতিফ সিদ্দিকী: আমার প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক। কারণ, আমি একটা দল করি। দলের একটা নিয়মশৃঙ্খলা আছে। সেই নিয়মশৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছি বলে দল ও দলনেতা মনে করেছেন। সেই মতো দলনেতা ব্যবস্থা নিয়েছেন। এটা নিয়ে আমার তো বিরূপ প্রতিক্রিয়া হওয়ার কথা না। এই দলই আমাকে মন্ত্রী বানাইছে, এই নেতাই আমাকে মন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। এখন তিনি বা তাঁর সহকর্মী মিলে যদি আমাকে মনে করেন যে আমি সহকর্মী হওয়ার যোগ্যতা রাখি না। সংখ্যাগরিষ্ঠ গণতন্ত্রে এটা তো কোনো অপরাধ নয়। দলের নেতাদের সঙ্গে আপনি একমত? আমি একমত। কারণ, আমি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। সংখ্যাগরিষ্ঠর সিদ্ধান্তই আমার সিদ্ধান্ত। আপনার প্রতি অবিচার করা হচ্ছে, এমন মনে হয়েছে কি? না, না, বরং আমি অনুতপ্ত। আমি আমার দল, আমার দলনেতাকে একটা বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছি। অন্য কোনো অনুশোচনা হচ্ছে কি? পুরো অবস্থার জন্য অনুশোচনা হচ্ছে কি? না, আমার কোনো অনুশোচনা বা অনুতাপ নেই। আমার নেতাকে আমি বিব্রত করেছি। তিনি আমার ওপর আস্থা রেখেছিলেন। আমি তাঁকে খুব কষ্ট দিয়েছি। কিন্তু আপনি যা বলেছিলেন, তা নিয়ে কোনোভাবে অনুশোচনা হচ্ছে? আমার আক্ষেপ, সারা বিশ্বে এমন কোনো মানুষ বা সাংবাদিক নেই। জিজ্ঞেস করল না যে উনি একটা আড্ডাতে কথাগুলো বলেছেন। কোনো সভায় নয়, সমিতিতে নয়, মাইকে নয়। সেই আড্ডায় উনি পুরোটা কী বললেন, সেইটা না জেনে, একটা খণ্ডিত অংশ, বিকৃতও হতে পারে, অপ্রাসঙ্গিক হতে পারে, পুরোটা কেউ চাইলেন না আজ পর্যন্ত। এইটা আমার আক্ষেপ আছে। আমি পুরো কথাটার দায়িত্ব নিচ্ছি। দেড় ঘণ্টা আমি কথা বলেছি। সেই দেড় ঘণ্টার টেপটা আপনারা বাইর করান। সেটার পুরো দায়িত্ব আমার। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, এখন আপনার পদক্ষেপ কী হবে, দেশে ফিরবেন কি না? আমি দেশে ফিরতে আগ্রহী। কারণ, এই দেশটার স্বাধীনতা ও উন্নয়নের জন্য আমি কাজ করেছি। কিন্তু প্রেক্ষাপট এমন হয়েছে যে আমি কী করব বুঝতে পারছি না। কারণ, আমি দেশে গেলে, আমার নেতা যদি আরও বিব্রত হন, সেই জন্য আমি খুবই মানসিক সংকটে আছি। আমি প্রথম সুযোগেই দেশে ঢুকে পড়ব। আপনি এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না? বিষয়টি তা নয়। নেতা বা আমার দলের ক্ষতি হবে কি না আমি ঢুকলে, সেইটা নিয়ে আমি চিন্তিত। আমাকে নিয়ে আমি চিন্তিত না। আপনি যদি দেশে না ঢোকেন, তাহলে তো বুঝতে পারবেন না সবাই বিব্রত হবে কি না। আমাকে তো কিছুটা জানাবে। জানতে তো আমি পারব। দলের নেতার সঙ্গে নিজে থেকেই যোগাযোগের চেষ্টা করছেন কি? দলের নেতা, মানে শেখ হাসিনার সঙ্গে। না, আমি চেষ্টা করিনি। আপনি কি চাইছেন, দলের পক্ষ থেকে আপনাকে দেশে আসার কথা বলুক? আমি চাইছি না। তাঁরা কী করবেন। তাঁরাই সিদ্ধান্ত নিবেন। তসলিমা নাসরিন ও দাউদ হায়দার দেশে ফিরতে পারছেন না। তাঁদের মতো দেশে ফেরা নিয়ে আপনার ভয় হচ্ছে কি না? তাঁরা লেখনীর মাধ্যমে বলেছেন। তাঁরা এক কথা বলেছেন আর আমি তো এখনো বলছি যে আমার অবস্থান, আমার কথাগুলোকে বিকৃত ও খণ্ডিত করা হয়েছে। একত্রে যোগ করলে দেখা যাবে যে আমি একটি একাডেমিক ডিসকাশন করেছি। মানুষ বিশ্বাস করছে যে আপনি ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। আপনার ভেতরে কি ভয় জাগছে যে আপনি দেশে ফিরতে পারবেন কি না? সেটা দেখা যাবে, সময়ই বলে দেবে। আমার জীবনে এমন ঘটনা এসেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর প্রতিবাদ করেছিলাম। তার পরে বিতাড়িত হয়েছিলাম। ...কাদের সিদ্দিকীর সঙ্গে দ্বিমত হয়েছিল বলে সরে এসেছিলাম। এখন কাদের সিদ্দিকী ক্ষমা চাচ্ছে। এই ব্যাটাকে আমার পক্ষে ক্ষমা চাওয়ার অধিকার কে দিল? আমি তো তাঁকে দায়িত্ব দেইনি যে আমার পক্ষ থেকে ক্ষমা চাও। সে একদল করে, আমি একদল করি। অদূর ভবিষ্যতে যদি আপনি দেশে ফিরতে না পারেন এবং দল যদি ফেরার কোনো ইঙ্গিত না দেয়, তবে কোথায় থাকবেন? ভারতেই থাকবেন কি না? না। আমি ইউরোপ, আমেরিকায় থাকতে পারব না বলে কলকাতায় এসেছি। আমি মাটির কাছে থাকতে চাই। ভারতে থাকতে পারবেন কি না? কোনো ইঙ্গিত ভারত সরকার দিয়েছে কি না? লতিফ সিদ্দিকীর জবাব: আমি এখন এ বিষয়ে কিছু বলব না। সময়ই বলে দেবে।
No comments:
Post a Comment