Monday, November 3, 2014

খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান স্থগিত:কালের কন্ঠ

পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্বের কারণে ফরমালিনবিরোধী অভিযান স্থগিত হয়ে গেল। এ অভিযান চালানোর জন্
য মেট্রোপলিটন এলাকায় পুলিশকে ক্ষমতা দিয়ে পরিপত্র জারি করায় চটেছিলেন জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা। তাঁরা এর বিরোধিতা করে চিঠি লেখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। অবশেষে গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পরিপত্রে ভুলত্রুটি থাকার কথা উল্লেখ করে ‘খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্য ও ভেজাল মিশ্রণ নিরোধ অভিযান’ সংক্রান্ত জারি করা পরিপত্রের কার্যক্রম স্থগিত করার নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের কাছে। ভলান্টারি কনজুমার ট্রেনিং অ্যান্ড অ্যাওয়ারনেস সোসাইটির (ভোক্তা) নির্বাহী পরিচালক খলিলুর রহমান সজল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভেজালবিরোধী অভিযান চালানোর কারণে বিক্রেতা ও ভোক্তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ছিল। কিন্তু এখন বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে জানা গিয়েছিল, সরকার সারা দেশে একযোগে ফরমালিনসহ খাদ্যে বিষের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে যাচ্ছে। শুনে আমরা খুব খুশি হয়েছিলাম।’ তিনি আরো বলেন, ‘অভিযান স্থগিতের নির্দেশনার কথা শুনে খুব খারাপ লাগছে। এটি খুব দুঃখজনক। ভেজালবিরোধী অভিযানের ক্ষেত্রে পুলিশ ও সিভিল প্রশাসনের সমন্বয় দরকার। তাদের একসঙ্গে মিলে কাজ করতে হবে। তা না হলে সফলতা পাওয়া যাবে না। আমরা আশা করব, তারা মিলেমিশে অভিযান পরিচালনা করে ভোক্তাদের রক্ষা করবে।’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২১ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির তৃতীয় সভায় ফলমূল ও খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন ও বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিক এবং ভেজাল মিশ্রণকারীদের বিরুদ্ধে ‘খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্য ও েেভজাল মিশ্রণ নিরোধ অভিযান’ নামের সমন্বিত অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ স্বাক্ষরিত একটি পরিপত্র জারি করা হয়। পরিপত্রে মেট্রোপলিটন এলাকা, জেলা ও উপজেলায় কমিটি গঠন করে অভিযান পরিচালনা-সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়। এতে মেট্রোপলিটন এলাকায় মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, জেলায় জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলায় ইউএনওকে কমিটির সভাপতি করার নির্দেশ দেওয়া হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পুলিশের নেতৃত্বে মেট্রোপলিটন এলাকাগুলোতে কমিটি গঠন করা হয়ে গেছে। এর মধ্যে কদিন আগে ঢাকা মেট্রোপলিটনেও কমিটি গঠন করা হয়। কিন্তু কমিটি গঠন করে ফরমালিনবিরোধী অভিযান চালানোর আগেই সেটি বন্ধ করে দেওয়া হলো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফরমালিনবিরোধী অভিযান স্থগিতাদেশে বলা হয়েছে, ‘খাদ্যে রাসায়নিক দ্রব্য ও ভেজাল মিশ্রণ নিরোধ অভিযান’ পরিচালনার লক্ষ্যে গত ৮ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারিকৃত পরিপত্রে কিছু মুদ্রণজনিত ভুলত্রুটি থাকার পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মতিক্রমে পরিপত্রটির কার্যক্রম নির্দেশক্রমে আপাতত স্থগিত করা হলো। পরিপত্রটি সংশোধিত রূপে শিগগিরই জারি করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পরিপত্র পাওয়ার পর জেলা প্রশাসকরা ক্ষিপ্ত হন। তাঁরা মনে করেন, তাড়াহুড়ো করে পরিপত্র তৈরি করায় সেখানে অনেক ভুল রয়েছে। সেসব ভুল সংশোধন না করে এ অভিযান চালাতে তাঁরা অনীহা প্রকাশ করেন। তাঁরা মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছেন, পুলিশকে এ দায়িত্ব দিয়ে রুলস অব বিজনেস লঙ্ঘন করা হয়েছে। পরিপত্রের বিরোধিতা করে অন্তত ১০ জন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গত মাসের শুরুর দিকে এ ধরনের চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন খুলনা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, পাবনা, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, শেরপুরসহ আরো কয়েকটি জেলার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, পরিপত্র জারি ও নির্দেশনার ত্রুটি-সংক্রান্ত চিঠি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের কাছ থেকে পাওয়ার পর গত ১৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বৈঠক হয়। সেখানে পুলিশ কমিশনারদের সভাপতির দায়িত্ব থেকে বাদ দিয়ে পরিপত্র সংশোধন করা হবে কি না তা সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। অবশেষে গত মঙ্গলবার পরিপত্রই স্থগিত করে চিঠি দেওয়া হলো।

No comments:

Post a Comment