Monday, November 3, 2014

‘খান’ কাসেমের প্রাণদণ্ড:কালের কন্ঠ

একাত্তরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং জামায়াতের প্রধান অর্থ
জোগানদার মীর কাসেম আলীকে ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় বিভিন্ন ব্যক্তিকে অপহরণের পর চট্টগ্রামের ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতনের দায়ে ৭২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে একাত্তরে চট্টগ্রাম অঞ্চলে ‘বাঙালি খান সাহেব’ বা ‘সরদার’ নামে পরিচিত এই আলবদর কমান্ডারকে। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গতকাল রবিবার এ রায় দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিঞা ও বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলাম। গতকাল ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দেখা যায়, মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা মোট ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এসবের মধ্যে দুটি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে আলাদাভাবে মৃত্যুদণ্ড এবং আরো আটটি নির্যাতনের ঘটনায় বিভিন্ন মেয়াদে মোট ৭২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া চারটি নির্যাতনের অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় ওই সব অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয় আসামিকে। প্রমাণ হওয়া অভিযোগগুলোর মধ্যে কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম হত্যাকাণ্ড ও আটটি নির্যাতনের অভিযোগে সর্বসম্মতভাবে সাজা দেওয়া হয়েছে। জসিমের সঙ্গে আরো পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগ আনা হলেও শুধু জসিমকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া অন্য একটি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে (রণজিৎ দাস লাথু ও টুনটু সেন রাজু হত্যা) সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে আসামিকে। এই অভিযোগ থেকে মীর কাসেম আলীকে খালাস দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের সদস্য বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিঞা। অন্য দুই সদস্য কাসেম আলীকে এ অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দেন। রায়ে বলা হয়, যেহেতু আসামিকে দুটি অভিযোগে পৃথকভাবে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে, তাই একটি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবে। তাঁর মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে এ রায় কার্যকর করতে হবে। একটি কার্যকর হলে অন্য দণ্ড কার্যকর করার প্রয়োজন নেই। মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে ২, ৩, ৪, ৬, ৭, ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৪ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। ২ নম্বর অভিযোগে ২০ বছর; ৩, ৪, ৬, ৭, ৯ ও ১০ নম্বর অভিযোগে প্রতিটিতে সাত বছর করে; ১১ ও ১২ নম্বর অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড এবং ১৪ নম্বর অভিযোগে ১০ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। কারাদণ্ডের ক্ষেত্রে একটির পর একটি সাজা চলবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়। এ ছাড়া ১, ৫, ৮ ও ১৩ নম্বর অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় এসব অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন বিচারক গতকাল সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে এজলাসে আসন গ্রহণ করেন। এরপর অন্য দুটি মামলায় পরবর্তী দিন নির্ধারণ করে আদেশ দেন তাঁরা। এর ৫ মিনিট পর মীর কাসেম আলীর মামলায় রায় ঘোষণা শুরু করেন। ৩৫১ পৃষ্ঠার এ রায়ের আদেশের অংশ সংক্ষিপ্তভাবে (১১ পৃষ্ঠা) পড়ে শোনান ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান। সকাল ১১টা ৩৩ মিনিটে রায় ঘোষণা শেষ হয়। পরিকল্পিতভাবে বেছে বেছে হত্যা : রায়ের অভিমতে বলা হয়, অপরাধের ধরন, আসামির অংশগ্রহণ, পারিপার্শ্বিক অবস্থা, আলবদর বাহিনীতে তাঁর অবস্থান বিবেচনায় সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য। তাঁকে শাস্তি দেওয়া হবে ভিকটিমদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তির প্রতিফলন। সচেতনভাবে একটির পর একটি মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। ডালিম হোটেলে নির্যাতনের পর কাউকে কাউকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর বেছে বেছে লোককে হত্যা করা হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে এসব অপরাধ করায় তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তি প্রাপ্য। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এসব অপরাধে তাঁর মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। গতকাল ট্রাইব্যুনাল চেয়ারম্যান নিজেই সংক্ষিপ্ত রায় পাঠ করেন। রায় শুনেই উত্তেজিত আসামি : রায় ঘোষণার আগে ১০টা ৪৪ মিনিটে মীর কাসেম আলীকে ট্রাইব্যুনালের কাঠগড়ায় নেওয়া হয়। কাঠগড়ায় বসেই তিনি রায় শোনেন। এর আগে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাঁকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালের হাজতখানায় নিয়ে রাখা হয়। তিনি পুরো রায় নিবিড়ভাবে শোনেন। সারাক্ষণ তিনি ফুরফুরে মেজাজে থাকলেও রায় ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে উত্তেজিত হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। তিনি উচ্চস্বরে ট্রাইব্যুনাল ও রায় সম্পর্কে কটূক্তি করেন। এরপর তাঁকে আবার হাজতখানায় নিয়ে রাখা হয়। কঠোর নিরাপত্তা : এ রায় ঘোষণা উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনাল এলাকায় আইনজীবী, বুদ্ধিজীবীসহ সাধারণ মানুষ ও সংবাদকর্মীরা ভিড় করে। সকাল থেকে সেখানে কড়া নিরাপত্তা বসানো হয়। জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে মামলার রায় ঘোষণার দিনের চেয়ে গতকাল নিরাপত্তা ছিল আরো বেশি। গতকাল অধিক মাত্রায় আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল।   রাষ্ট্রপক্ষের সন্তোষ : গতকাল এ রায়ের পর রাষ্ট্রপক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম ও ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আলাদাভাবে সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাঁরা বলেন, দেশবাসী প্রত্যাশিত ন্যায়বিচার পেয়েছে। প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, ‘কোর্ট তিনবার উচ্চারণ করেছেন যে মীর কাসেম ছিলেন মার্ডারিং মেশিনারি বা হত্যাকাণ্ডের প্রতিটি ক্যাম্পের একটি অপরিহার্য অংশ। কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম হত্যার এই রায়টি সকল শহীদ মুক্তিযোদ্ধার প্রতি নিবেদিত করা হয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং একটি মামলা ছিল। আমরা এ মামলায় আসামির মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করতে পেরেছি।’ জেয়াদ আল মালুম বলেন, ‘এই রায়ের মাধ্যমে দেশবাসী, ভুক্তভোগী ও বিচারপ্রার্থীরা ন্যায়বিচার পেয়েছেন। এর মাধ্যমে বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি থেকে দেশ বেরিয়ে আসছে।’ ক্ষুব্ধ আসামিপক্ষ : অন্যদিকে আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মিজানুল ইসলাম বলেন, দ্বিধাবিভক্ত রায়ে মৃত্যুদণ্ড হতে পারে না। রাষ্ট্রপক্ষ যেসব প্রমাণ ও দলিল উপস্থাপন করেছে, তা ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ‘এ রায়ে আমরা ক্ষুব্ধ, আমরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ট্রাইব্যুনালে আমরা ন্যায়বিচার পাইনি। তাই আমরা এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করব।’ মামলার কার্যক্রম : গত ৪ মে মামলার যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে মামলাটি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণা অপেক্ষমাণ রাখার প্রায় ছয় মাস পর গতকাল রায় ঘোষণা করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে হত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ, দেশান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী  অপরাধের ১৪টি অভিযোগ এনেছিল রাষ্ট্রপক্ষ। তবে দুটি অভিযোগে রাষ্ট্রপক্ষ সাক্ষী হাজির করেনি। হত্যা, নারী নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুটের ১৪টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করে গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন এক নম্বর ট্রাইব্যুনাল। একই বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর মামলাটি ২ নম্বর ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। ওই বছরের ১১ ডিসেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। রাষ্ট্রপক্ষে মোট ২৪ জন সাক্ষী ১২টি অভিযোগের বিষয়ে সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে মীর কাসেম আলীকে নির্দোষ দাবি করে সাফাই সাক্ষ্য দেন তিনজন। ২০১২ সালের ১৭ জুন মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। সেদিন বিকেলেই তাঁকে মতিঝিলে দৈনিক নয়া দিগন্ত কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তারের পর ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। এরপর থেকে তিনি কারাবন্দি। ১৯৭১ সালের প্রথমদিকে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি ছিলেন কাসেম আলী। শেষদিকে তাঁকে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রসংঘের সাধারণ সম্পাদক করা হয়। স্বাধীনতার পর ইসলামী ছাত্রসংঘের নাম বদল করে রাখা হয় ইসলামী ছাত্রশিবির। এই ছাত্রশিবিরের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মীর কাসেম। যত অভিযোগ প্রমাণিত নম্বর দুই : এ অভিযোগে বলা হয়, মীর কাসেমের নেতৃত্বে ১৯ নভেম্বর চাকতাই থেকে লুৎফর রহমান ফারুক ও সিরাজকে অপহরণ করে পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ন্ত্রিত বাকলি পুলিশ স্টেশনে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয় এবং তাদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। ফারুককে দু-তিন দিন ডালিম হোটেলে নির্যাতনের পর পাঠিয়ে দেওয়া হয় চট্টগ্রাম কারাগারে। ১৬ ডিসেম্বর ফারুক মুক্তি পান। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কাসেমকে ২০ বছর কারাদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। নম্বর তিন : মীর কাসেমের নেতৃত্বে ২২ বা ২৩ নভেম্বর সকালে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে বাসা থেকে ধরে ডবলমুরিং থানায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে ডালিম হোটেলে নিয়ে তাঁকে নির্যাতন করে আলবদর বাহিনী। বিজয়ের পর জাহাঙ্গীর আলম মুক্ত হন ওই হোটেল থেকে। এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মীর কাসেমকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নম্বর চার : চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার আজিজ কলোনির সাইফ উদ্দিন খানকে ধরে ডালিম হোটেলে নেওয়া হয়। সেখানে মীর কাসেমের নেতৃত্বে তাঁকে নির্যাতন করে আলবদররা। ২ কিংবা ৩ ডিসেম্বর সাইফ উদ্দিনকে চট্টগ্রাম কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সাইফ উদ্দিনকে জেলখানায় রক্তাক্ত অবস্থায় খুঁজে পান তাঁর স্ত্রী নূর জাহান বেগম। এই অভিযোগে কাসেমকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নম্বর ছয় : একাত্তরের ২৮ নভেম্বর চট্টগ্রামের একটি চায়ের দোকান থেকে হারুন-অর-রশিদকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে চোখ বাঁধা অবস্থায় ঝুলিয়ে রেখে নির্যাতন করা হয়। কয়েক দিন পর হারুনকে নেওয়া হয় সালমা মঞ্জিলে। ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি সেখানে আটক ছিলেন। এই অভিযোগে মীর কাসেমকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নম্বর সাত : ২৭ নভেম্বর মাগরিবের নামাজের পর মীর কাসেমের নেতৃত্বে সাত-আট যুবক চট্টগ্রামের ডবলমুরিং থানার সানাউল্লাহ চৌধুরী, হাবিবুর রহমান ও ইলিয়াসকে ধরে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করে। সেখানে তাঁদের ওপর নির্যাতন করে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে নানা তথ্য নিত মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী। ডালিম হোটেল থেকে ৬ ও ৯ ডিসেম্বর মুক্তি পান ওই বন্দিরা। তাঁদের সামনে ডালিম হোটেলে অনেক মানুষকে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। এই অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নম্বর নয় : ২৯ নভেম্বর সৈয়দ ওসমান, সৈয়দ জামাল উদ্দিন, সৈয়দ কামাল উদ্দিন, সৈয়দ সরোয়ার উদ্দিন, সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া ও সৈয়দ গোলাম রহমানকে অপহরণ করে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডালিম হোটেলে নির্যাতন করা হয়। মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নম্বর দশ. ২৯ নভেম্বর চট্টগ্রামের নাজিরবাড়ী এলাকা থেকে মীর কাসেমের নির্দেশে মো. জাকারিয়া সালাউদ্দিন, চুট্টু মিয়া, ইস্কান্দার আলম চৌধুরী ও নাজিম উদ্দিনকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। এই অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে সাত বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। নম্বর এগারো. একাত্তরে ঈদুল ফিতরের দিন মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনকে অপহরণ করে আলবদর বাহিনী। তাঁকে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়। সেখানে আরো পাঁচজনকে হত্যা করে মুক্তিযোদ্ধা জসিমের লাশের সঙ্গে তাদের লাশও গুম করে আলবদর বাহিনী। এসব হয়েছে মীর কাসেম আলীর নেতৃত্বে। জসিমের সঙ্গে আরো পাঁচজনকে হত্যার অভিযোগ আনা হলেও শুধু জসিমকে হত্যার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ড দেন ট্রাইব্যুনাল। নম্বর বার : জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, রণজিত দাস লুথু ও টনটু সেন রাজুকে চট্টগ্রামের হাজির লেন থেকে অপহরণ করে নির্যাতন করে আলবদর বাহিনী। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে ডালিম হোটেল থেকে কয়েক দিন পর মুক্তি দেওয়া হয়। কিন্তু লুথু ও রাজুকে কাসেমের নির্দেশে হত্যা করে আলবদর বাহিনী। তাঁদের লাশও গুম করে দেওয়া হয়। কাসেমের নির্দেশে আলবদর, আলশামস ও পাকিস্তানি সেনারা ওই এলাকার ২০০-২৫০ বাড়িঘর ও দোকান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয় এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বী শতাধিক লোককে দেশ ছেড়ে ভারতে যেতে বাধ্য করে। এই অভিযোগে মীর কাসেমকে মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন ট্রাইব্যুনাল। নম্বর চৌদ্দ. কোতোয়ালি থানা এলাকা থেকে নাসির উদ্দিন চৌধুরীকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে আলবদর বাহিনীর সদস্যরা নির্যাতন করে। ১৬ ডিসেম্বর নাসির উদ্দিনসহ এক-দেড় শ স্থানীয় ব্যক্তি মুক্তি পায় ডালিম হোটেল থেকে। এই অভিযোগে মীর কাসেম আলীকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। যেসব অভিযোগ থেকে খালাস নম্বর এক. মীর কাসেমের নেতৃত্বে আলবদর বাহিনীর কিছু সদস্য ১৯৭১ সালের ৮ নভেম্বর সকাল ১০টায় চট্টগ্রামের ওমারুল ইসলাম চৌধুরীকে অপহরণ করে। পরে কয়েক দফায় চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লার ডালিম হোটেল ও পাঁচলাইশ থানার সালমা মঞ্জিল এবং একটি চামড়ার গুদামে নিয়ে নির্যাতন করা হয় তাঁকে। এই অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাঁকে খালাস দেন ট্রাইব্যুনাল। নম্বর পাঁচ : ২৫ নভেম্বর নন্দন কানন এলাকায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনে থেকে কাসেম আলীর নির্দেশে রাজাকার জালাল চৌধুরীর নেতৃত্বে আবদুল জব্বার মেম্বারকে ধরে নিয়ে ডালিম হোটেলে মীর কাসেমের সামনে হাজির করা হয়। সেখানে জব্বার মেম্বারকে ১৭-১৮ দিন চোখ বাঁধা অবস্থায় নির্যাতন করা হয়। এই অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামিকে খালাস দেন ট্রাইব্যুনাল। নম্বর আট : কাসেম আলীর নির্দেশে আলবদর বাহিনী পাকিস্তানি সেনাদের সহযোগিতায় ২৯ নভেম্বর রাতে চাদগাঁও থানার নূরুল কুদ্দুস, মো. নাসির, নুরুল হাশেমসহ কয়েকজনকে অপহরণ করে ডালিম হোটেলে নিয়ে নির্যাতন করে। এই অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। নম্বর তেরো. নভেম্বরের শেষ দিকে সুনীল কান্তি বর্ধনকে অপহরণ ও নির্যাতন করা হয়। এই অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় আসামিকে খালাস দেওয়া হয়।

No comments:

Post a Comment