বিশ্বের শক্তিশালী অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-২০-এর নেতারা ইবোলা ভাইরাস ‘নির্মূলে’ সম্ভব সবকিছু করার অঙ্গীকার করেছেন। তবে পশ্চিম আফ্রিকায় ভয়াবহভাবে ছড়িয়ে পড়া এ ভাইরাসের সমস্যা মোকাবিলায় সুনির্দিষ্ট তহবিল গঠনের কোনো ঘোষণা দেননি তাঁরা। অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেন নগরে গতকাল শনিবার শুরু হওয়া দুই দিনের জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে নেতারা ওই অঙ্গীকার করেন। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর এ জোটের রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধ
ানদের এটি নবম সম্মেলন। বৈশ্বিক অর্থনীতির মোট জিডিপির ৮৫ শতাংশই এই জোটভুক্ত দেশগুলোর। ইবোলা ও ইউক্রেন সংকট ছাড়াও বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে আলোচনা করছেন জি-২০ নেতারা। এক বিবৃতিতে জি-২০-এর নেতারা গতকাল বলেন, ‘ইবোলা নির্মূলে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টা নিশ্চিত করতে যা কিছু করা প্রয়োজন, জোটভুক্ত দেশগুলো তা-ই করার অঙ্গীকার করছে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইবোলার প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় ‘দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় মাধ্যমে’ পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এর আওতায় নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করা, স্বাস্থ্য সতর্কতার প্রশিক্ষণ দেওয়া ও ত্রাণকর্মী পাঠিয়ে সহায়তা দেবে জি-২০-ভুক্ত দেশগুলো। ব্রিসবেনে গতকাল এই শীর্ষ সম্মেলন শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন ইবোলা দমনে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জি-২০ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ইবোলার প্রভাবে স্বাস্থ্যসংকট দেখা দেবে, যার প্রভাব ধীরে ধীরে সবকিছুতেই পড়বে। এর ফলে খাদ্যসংকটও দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করেন বিশ্ব সংস্থার মহাসচিব। কোণঠাসা রাশিয়ার পুতিন: এদিকে ইউক্রেন সংকটের জেরে শীর্ষ সম্মেলনে অন্য নেতাদের কাছ থেকে শীতল সাড়া পেয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি ইউক্রেনে কথিত হস্তক্ষেপের কারণে বিশেষ করে পাশ্চাত্যের নেতাদের তরফ থেকে ব্যাপক চাপের সম্মুখীন হন। পুতিন শীর্ষ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হওয়ার কিছু আগেই অস্ট্রেলিয়া ত্যাগ করবেন বলে রাশিয়ার প্রতিনিধিদলের সূত্র জানিয়েছে। তবে এর পেছনে কোনো চাপ কাজ করেছে—এ কথা অস্বীকার করেছেন রুশ কর্মকর্তারা। এদিকে ব্রিসবেনে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন রুশ নেতার সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে পাশ্চাত্যের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে সমঝোতায় পেঁৗছেছেন বলেও জানানো হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগতিক দেশ অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবট বলেন, এই সম্মেলনে নেতারা বৈশ্বিক জিডিপি দুই লাখ কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করার উদ্যোগের কথা ঘোষণা করবেন। এ ছাড়া মুক্ত বাণিজ্য এলাকার ঘোষণা ও অবকাঠামো খাতে আরও বেশি করে বিনিয়োগের কথা জানাবেন। তিনি জানান, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপি ‘২ শতাংশের বেশি’ বৃদ্ধির পরিকল্পনা রয়েছে জি-২০-ভুক্ত দেশগুলোর নেতাদের। ‘বলপ্রয়োগ নিরাপত্তার ভিত্তি হবে না’: সম্মেলনের বাইরে এক অনুষ্ঠানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, বলপ্রয়োগ বা ভীতি প্রদর্শন অবশ্যই এশিয়ার নিরাপত্তার ভিত্তি হবে না। শক্তিশালী দেশগুলো অবশ্যই অন্য দেশগুলোর প্রতি বলপ্রয়োগের আচরণ করবে না। শিক্ষার্থীদের নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি। বারাক ওবামা বলেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি, আন্তর্জাতিক আইন ও মূল্যবোধ, পারস্পরিক সমঝোতা এবং শান্তিপূর্ণ প্রস্তাবের মাধ্যমে বিরোধ সমাধানের মধ্য দিয়ে এশিয়ার নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।’ আঞ্চলিক পরাশক্তি এবং ক্ষেত্রবিশেষে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের নাম উল্লেখ না করে ওবামা বলেন, দক্ষিণ চীন সাগরে সীমানা নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে যে বিরোধ চলছে তা বিপজ্জনক।
No comments:
Post a Comment