Thursday, November 27, 2014

আরএসও-প্রধান বাংলাদেশে!:কালের কন্ঠ

মিয়ানমারভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) প্রধান মোহাম্মদ ইউনুসুর রহমান এখন বাংলাদেশে। সীম
ান্ত জেলা কক্সবাজার অথবা বান্দরবানের কোনো এক গহিন স্থানে তিনি আত্মগোপন করে আছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। তিনি বাংলাদেশে বিশেষ মিশন নিয়েই এসেছেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে। চট্টগ্রামে গত রবিবার দুই বিদেশি নাগরিক ও তিন আরএসও জঙ্গি নেতাকে আটক ও রিমান্ডে নেওয়ার পর থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবানের সীমান্ত এলাকার অন্যান্য রোহিঙ্গা জঙ্গি ও তাদের পৃষ্ঠপোষকরা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। তবে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে রোহিঙ্গাদের জঙ্গি সংগঠন আরএসওর বিভিন্ন তথ্য এবং আটক আরএসও নেতা শফি উল্লাহ ও হাফেজ সালামত উল্লাহর বহু তথ্য বের হয়ে আসছে। সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরএসও সভাপতি মো. ইউনুসুর রহমানের সঙ্গে কিছুদিন আগেও কক্সবাজারে বৈঠক করেন সম্প্রতি র‌্যাবের হাতে আটক আরএসও নেতা শফি উল্লাহ ও আইয়ুব মাস্টার। আরএসও-প্রধান এ মুহূর্তে বাংলাদেশে থাকলেও তাঁর অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। র‌্যাবের গোয়েন্দা উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালামের কাছে জানতে চাইলে কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ‘মোহাম্মদ ইউনুস আরএসওর প্রধান, এ তথ্য আমরা জানি। ইন্টারপোলও তাকে খুঁজছে। সে এখন বাংলাদেশে আছে  কি না তা আমরা অবগত নই। তবে এই জঙ্গি সংগঠনের বেশ কিছু নেতাকে ইতিমধ্যে আটক করা হয়েছে। অন্যদের ওপর কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে।’ গত রবিবার দুপুরে চট্টগ্রামের একটি হোটেল থেকে জঙ্গি সন্দেহে পাকিস্তানের করাচির বাসিন্দা মোহাম্মদ আলম, কক্সবাজারের বিসিক এলাকার আদর্শ শিক্ষানিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা ছালামত উল্লাহ ও নাইক্ষ্যংছড়ির আরএসও নেতা শফি উল্লাহসহ পাঁচজনকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠনের এই নেতাদের ঢাকায় জয়েন্ট ইন্টারোগেশেন সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আটক ছালামত উল্লাহ সরাসরি ও শফি উল্লাহ মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। শফি উল্লাহ আরএসওর বাংলাদেশ শাখার সেকেন্ড ইন কমান্ড ও মজলিসে শুরার সদস্য। বাংলাদেশে এই সংগঠনের প্রধান হিসেবে কাজ করছে কক্সবাজারের বহুল আলোচিত হাফেজ সালাউল ইসলাম। আরএসওর কেন্দ্রীয় প্রধান মোহাম্মদ ইউনুসের সঙ্গে আটক দুজনেরর সরাসরি যোগাযোগের প্রমাণও রয়েছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালংয়ের সাবেক ইউপি সদস্য বখতিয়ার মেম্বার জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পরে তিনি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। এখন তিনি উখিয়া মৎস্যলীগের সাধারণ সম্পাদক, এলাকায় প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবে পরিচিত। শূন্য থেকে তিনি কোটিপতি হয়েছেন ইয়াবা চোরাচালান ও রোহিঙ্গা জঙ্গিবাদের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার কারণে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তাঁকে উখিয়া অঞ্চলের আরএসও জঙ্গিদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে বলা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা হওয়ায় তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। রামুতে বৌদ্ধবিহারে অগ্নিসংযোগের মদদদাতাদের তালিকায় তাঁর নাম রয়েছে। জানা গেছে, আরএসও জঙ্গি নেতারা রোহিঙ্গা রিফিউজি হিউম্যান রাইটস ও ইত্তেহাদুল জামিয়াতুল রোহিঙ্গা নামের দুটি জঙ্গি সংগঠনের কর্মকাণ্ড কক্সবাজার ও বান্দরবানে সরাসরি পরিচালনা করে আসছেন। এই দুই সংগঠনের শুরা কমিটিতে রয়েছেন কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের আরো একাধিক রোহিঙ্গা জঙ্গি নেতা। এঁরা হলেন আরএসওর সামরিক প্রশিক্ষক মাস্টার আইয়ুব, রোহিঙ্গা জঙ্গিদের মুখপাত্র কালাদান প্রেসের আবু তাহের প্রকাশ পিন্টু, উখিয়ার কুতুপালংয়ের রোহিঙ্গাদের গডফাদার খ্যাত বখতিয়ার মেম্বার, তাঁর ছেলে বোরহান উদ্দিন, কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলির মৌলভী আবু সালে, টেকনাফের শাপলাপুরের মৌলভী আজিজ ও ডা. খাইরুল আমিন। আরো আছেন টেকনাফের শাপলাপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মৌলভী আজিজ, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের মানবসম্পদবিষয়ক সম্পাদক ও শিবিরের সাবেক সাথী শফি উল্লাহ। ক্ষমতাসীন দলের নেতা হওয়ায় এঁরা প্রকাশ্যেই ঘোরাফেরা করছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, এই জঙ্গি নেতারা কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে ও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে জঙ্গিদের সংগঠিত করে প্রশিক্ষণ দেন। আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে জঙ্গি প্রশিক্ষণ ও সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা মিয়ানমারের নাগরিক মাস্টার আইয়ুব আরএসওর জঙ্গিদের অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। এই জঙ্গিরা গত বছর নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে কক্সবাজারের পাঁচ পুলিশকে অপহরণ করেছিলেন। ওই সময় পুলিশ সমঝোতার মাধ্যমে ওই পাঁচ পুলিশ সদস্যকে মুক্ত করে এনেছিল। বিষয়টি ওই সময় ধামাচাপা দেওয়া হলেও এখন তা প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। জিজ্ঞাসাবাদে আরএসও নেতা শফি উল্লাহ ও সালামত উল্লাহ পুলিশ সদস্যদের অস্ত্রের মুখে অপহরণের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানা গেছে।  

No comments:

Post a Comment