উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের অজুহাতে ছয় মাস ধরে ঢাকার কেরানীগঞ্জের শিশু পরাগ অপহরণ মামলার বিচারকাজ থেমে আছে। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি বলছেন, উচ্চ আদালতের কোনো স্থগিতাদেশ নেই। আসামিপক্ষ আদালতকে ভুল বুঝিয়ে মুলতবির আদেশ নিয়েছে। এরই মধ্যে বহুল আলোচিত এই মামলার দুজন আসামি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। একজন পলাতক রয়েছেন। আসামিরা মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছেন বলে প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেছেন পরাগের বাবা
ব্যবসায়ী বিমল মণ্ডল। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর প্রথম আলোকে বলেন, হুমকির বিষয়ে থানায় লিখিত কোনো অভিযোগ কেউ করেনি। তবে পরাগ মণ্ডল ও তার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য তাদের বাড়িতে সার্বক্ষণিক পাহারায় থাকে দুজন পুলিশ। ২০১২ সালের ১১ নভেম্বর সকালে বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে মা-বোন ও গাড়িচালককে গুলি করে ছয় বছরের পরাগকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। রাজধানীর উপকণ্ঠে কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যার এ ঘটনায় তখন দেশব্যাপী চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। অপহরণের ৬৪ ঘণ্টা পর কেরানীগঞ্জের আঁটিবাজার এলাকায় অচেতন অবস্থায় পরাগ মণ্ডলকে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে পুলিশ সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে এবং পরবর্তী সময়ে যুবলীগের স্থানীয় নেতা আমিনুল ইসলাম ওরফে জুয়েল মোল্লাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করে। এ ঘটনায় কেরানীগঞ্জ থানায় মামলা হয়। পরে জুয়েল মোল্লাকে অব্যাহতি দিয়ে গত বছরের ৩১ মার্চ ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় গোয়েন্দা পুলিশ। অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিরা হলেন মোক্তার হোসেন আমির ওরফে ল্যাংড়া আমির, তাঁর স্ত্রী বিউটি বেগম, ভাতিজা আকাশ, ভগ্নিপতি আবুল কাশেম, জাহিদুল ইসলাম, কালা চান, আল-আমিন, মোহাম্মদ আলী রিফাত, মামুন মিয়া, শাকিল, সুলতান ও ওয়াসিম। তাঁদের মধ্যে ওয়াসিম এখনো পলাতক রয়েছেন। বিউটি ও মামুন মিয়া জামিনে মুক্ত আছেন। বাকি নয়জন কারাগারে আটক আছেন। পরবর্তী সময়ে মামলাটি ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারের জন্য যায় এবং গত বছরের ২৩ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। সাক্ষ্য গ্রহণও শুরু হয়েছিল। গত মার্চে আসামিপক্ষের এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলাটি মুলতবি করেন। সেই থেকে বিচারকাজ থেমে আছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি এম এ বারি প্রথম আলোকে বলেন, এই মামলার একজন আসামি মামুন মিয়া অভিযোগ গঠনের আদেশের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন করেন। আরেক আসামি মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করেন। কোনো আবেদনের ওপরই হাইকোর্ট কোনো স্থগিতাদেশ দেননি। আদালতে এ-সংক্রান্ত কোনো কাগজও দাখিল করেনি আসামিপক্ষ। কিন্তু আসামিপক্ষ মার্চ মাসে ট্রাইব্যুনালের তৎকালীন বিচারকের কাছে একটি দরখাস্ত দিয়ে জানায়, তাদের আবেদনের ওপর হাইকোর্ট আংশিক শুনানি গ্রহণ করেছেন। পূর্ণাঙ্গ শুনানি না হওয়া পর্যন্ত মামলার কার্যক্রম মুলতবি করা প্রয়োজন। শুনানি শেষে আদালত আসামিপক্ষের মুলতবির আবেদন মঞ্জুর করেন। বিমল মণ্ডলের আইনজীবী প্রাণনাথ প্রথম আলোকে বলেন, এই আদালতে নতুন বিচারক দায়িত্ব গ্রহণের পর মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ আবার শুরু করার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু হাইকোর্টে এ-সংক্রান্ত একটি আবেদনের ওপর আংশিক শুনানি হওয়ায় তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বিচারিক আদালত সাক্ষ্য গ্রহণের নতুন কোনো তারিখ ধার্য করেননি।
No comments:
Post a Comment