Friday, November 7, 2014

৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই ভালো শিখছে না:কালের কন্ঠ

ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির গণিত, ইংরেজি ও বাংলা বিষয়ে ৭৪ শতাংশ শিক্ষার্থীই ভালো শিখছে না। ষষ্ঠ শ্রেণির গণিতে ১৩, ইংরেজিতে ৭
এবং বাংলায় ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির গণিতে ৫, ইংরেজিতে ১ এবং বাংলায় ১০ শতাংশ শিক্ষার্থী নিজের শ্রেণির চেয়েও বেশি দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে। একই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের মধ্যে গণিতে ৮২, ইংরেজিতে ৯২ এবং বাংলায় ৮৯ শতাংশ নিজেদের শ্রেণির দক্ষতার চেয়ে কম দক্ষ। অষ্টম শ্রেণির গণিতে ২২, ইংরেজিতে ২৩ এবং বাংলায় ৩৮ শতাংশ শিক্ষার্থী নির্দিষ্ট দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে। গণিতে ১৩, ইংরেজিতে ১১ এবং বাংলায় ১১ শতাংশ নির্দিষ্ট শ্রেণির চেয়েও অধিক দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে। গণিতে ৬৬, ইংরেজিতে ৬৬ এবং বাংলায় ৫১ শতাংশ নির্দিষ্ট শ্রেণির দক্ষতার চেয়ে ক্রমান্বয়ে নিম্নতর দক্ষতা অর্জন করেছে। সেই হিসাবে দুই শ্রেণির সব বিষয় গড় করলে দেখা যায়, ৭৪.৩৩ শতাংশ শিক্ষার্থীই ভালো শিখছে না। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের মনিটরিং অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের করা এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সম্প্রতি শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষাবিদরা। তাঁদের দাবি, পরীক্ষায় পাসের হার বেশি হলেও মান ভালো নয়। এ জরিপেও শিক্ষবিদদের করা মন্তব্যের সত্যতা মিলল। পরীক্ষার খাতায় লিখে তারা বেশি নম্বর পেলেও সব ক্ষেত্রে তাদের দক্ষতা আশানুরূপ নয়। ২০১২ সালের সঙ্গে গত বছরের শিখন মানের তুলনা করলেও দেখা যায়, দিন দিন শিক্ষার্থীদের দক্ষতা কমছে। অথচ প্রতিবছরই পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা উন্নতি করছে। সাধারণ শিক্ষায় ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে বাংলায় ২৪, ইংরেজিতে ১৪ এবং গণিতে ৩ শতাংশ শিক্ষার্থী কম দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে। মাদ্রাসায় ২০১২ সালের তুলনায় ২০১৩ সালে বাংলায় ৩৫, ইংরেজিতে ১৫ শতাংশ শিক্ষার্থী কম দক্ষতা অর্জন করতে পেরেছে। তবে মাদ্রাসার গণিতে ২০১২ সালের তুলনায় এবার মাত্র ১ শতাংশ শিক্ষার্থী ভালো শিখতে পেরেছে। তবে ২০১২ সালে অ্যাসেসমেন্ট করা হয়েছিল নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওপর। গত বছর যেহেতু নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অ্যাসেসমেন্ট করা হয়নি, তাই অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ওপর করা অ্যাসেসমেন্টের সঙ্গে এই জরিপে তুলনা করা হয়েছে। জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সরকারের উদ্যোগে লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট হয়েছে, একে সাধুবাদ জানাই। এতে ভুলত্রুটি ধরা পড়বে। আর জরিপের ফলাফলে বোঝা যায়, মান উন্নয়নে আমাদের অনেক বেশি কাজ করতে হবে। আমরা প্রচুর শিক্ষার্থী আনতে পারছি; কিন্তু দক্ষতা অর্জন করতে পারছি না। পাবলিক পরীক্ষাগুলোতে পাসের হার বাড়লেও দক্ষতা যে বাড়ছে না তা বোঝা যাচ্ছে। ফলে শিক্ষাক্ষেত্রে আমাদের বিনিয়োগ আরো বাড়াতে হবে।’ জানা যায়, গত বছর মাউশির সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ) দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ৩০টি উপজেলার ২৩৯টি বিদ্যালয় ও ৭০টি মাদ্রাসার ষষ্ঠ ও অষ্টম শ্রেণির ১৪ হাজার ৩১২ শিক্ষার্থীর ওপর ‘লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট অব ইনস্টিটিউশন’ শীর্ষক জরিপ পরিচালনা করে। এ ছাড়া শিক্ষক, প্রতিষ্ঠানপ্রধান ও শিক্ষা কর্মকর্তারা এতে অংশ নেন। শিক্ষকের পাঠদানের মান, প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষাক্রম, পাঠ্যপুস্তক, সিলেবাস ইত্যাদি তথ্যের মাধ্যমে এই মূল্যায়ন করা হয়। জরিপে দেখা গেছে, ষষ্ঠ শ্রেণির কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে বাংলায় ১২ শতাংশ ছাত্র ও ১১ শতাংশ ছাত্রী, ইংরেজিতে ১১ শতাংশ ছাত্র ও ৭ শতাংশ ছাত্রী, গণিতে ২১ শতাংশ ছাত্র ও ১৬ শতাংশ ছাত্রী। অষ্টম শ্রেণির কাঙ্ক্ষিত দক্ষতা অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাংলায় ৪৯ শতাংশ ছাত্র ও ৫০ শতাংশ ছাত্রী, ইংরেজিতে ৩৫ শতাংশ ছাত্র ও ৩১ শতাংশ ছাত্রী, গণিতে ৪১ শতাংশ ছাত্র ও ২৯ শতাংশ ছাত্রী। এতে দেখা যায়, দক্ষতা অর্জনের ক্ষেত্রে ছেলেরা মেয়েদের তুলনায় সামান্য এগিয়ে। আর ষষ্ঠ শ্রেণির তুলনায় অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা বেশি দক্ষতা অর্জন করেছে। ষষ্ঠ শ্রেণির গণিত বিষয় ছাড়া সব শ্রেণির সব বিষয়েই মাদ্রাসার তুলনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভালো শিখছে। যেসব শিক্ষার্থী নিয়মিত ক্লাস করে ও যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া হয় তারাই বেশি ভালো করেছে। অঞ্চলভেদে শিক্ষার্থীদের কাঙ্ক্ষিত শিখন মানে দেখা যায়, সিলেট অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা সবচেয়ে খারাপ শিখছে। আর সবেচেয়ে ভালো করছে বরিশাল অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। প্রায় কাছাকাছি রয়েছে কুমিল্লা, ঢাকা, যশোর ও রাজশাহী অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা। অষ্টম শ্রেণির ক্ষেত্রে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা মোটামুটি শিখলেও ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের শিখনচিত্র হতাশাজনক। রংপুর অঞ্চলের অবস্থাও তেমন ভালো নয়। লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট বিষয়ক কর্মশালা : লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট বিষয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমিতে (নায়েম) বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নিয়ে ‘লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট ২০১৩’-এর ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে দিনব্যাপী এক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘অন্যান্য দেশের অ্যাসেসমেন্টের ফলাফলও প্রায় একই ধরনের থাকে। ফলে আমরা মানের দিক দিয়ে পেছনে নেই। আর গত বছর যখন অ্যাসেসমেন্ট করা হয় তখন ছিল রাজনৈতিক অস্থিরতা। আর ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সবেমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। তবে এই ফলাফলে আমরা সন্তুষ্ট নই। ফলাফল বিশ্লেষণ করে যেসব সুপারিশ করা হয়েছে তা বাস্তবায়ন করা হবে।’ তিনি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, ‘আগে শিক্ষকদের দক্ষতা অর্জন করতে হবে। তাঁদের কাজগুলো যথাসময়ে শেষ করতে হবে। ভবিষ্যতে এগিয়ে যেতে এই অ্যাসেসমেন্ট কাজে লাগবে। ২০১৫ ও ২০১৭ সালে জাতীয় পর্যায়ে শিক্ষার মান যাচাইয়ের লক্ষ্যে লার্নিং অ্যাসেসমেন্ট পরিচালনা করা হবে।’ তবে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান তাঁর বক্তব্যে বলেন, ক্লাসের পরীক্ষা দিয়ে সব কিছু বোঝা যায় না- এই অ্যাসেসমেন্ট সেটাই প্রমাণ করল। মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ফাহিমা খাতুনের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য দেন নায়েমের মহাপরিচালক ইফফাত আরা নার্গিস, প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের সদস্য শ্যামল কান্তি ঘোষ, বিশ্বব্যাংকের আবাসিক কার্যালয়ের সিনিয়র অপারেশন অফিসার ড. মুখলেছুর রহমান, সেকায়েপের প্রকল্প পরিচালক শহীদ বখতিয়ার আলম, মাউশির মনিটরিং ও ইভ্যালুয়েশন উইংয়ের পরিচালক অধ্যাপক মো. দিদারুল আলম প্রমুখ।

No comments:

Post a Comment