Monday, November 24, 2014

বিপদের আশঙ্কায় আন্দোলন প্রস্তুতি:প্রথম অালো

মামলার বেড়াজালে বন্দী দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সমূহ বিপদ এবং মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের হতাশা কাটাতে আন্দোলনের বিকল্প দেখছে না বিএনপি। এবার আন্দোলন সফল করার লক্ষ্যে দলের ঢাকা মহানগর কমিটি ঘোষণার পরপরই নতুন সংসদ নির্বাচনের দাবিতে মাঠে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দলটির দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জানায়, বিজয় দিবসের পরপরই আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি শুরু করা হতে পারে। এবার কর্মসূচি দিলে মাঠে থাকতে দ
লের নেতা-কর্মীদের এখন থেকেই সাংগঠনিক ও মানসিকভাবে প্রস্তুতির তাগিদ দেওয়া হচ্ছে। যদিও কর্মসূচি বাস্তবায়নে নেতারা কতটা সক্রিয় হবেন, তা নিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃত্বেই সংশয় আছে। সর্বশেষ দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতাদের দলীয় কর্মসূচিতে নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বৈঠকে খালেদা জিয়া আন্দোলনের ব্যাপারে কঠোর মনোভাব দেখান এবং জানান, নেতাদের কেউ মাঠে না নামলে প্রয়োজনে তিনি একাই মাঠে নামবেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটি ও দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপির সামনে কয়েকটি বিষয় চ্যালেঞ্জ হয়ে আসছে। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বিচারাধীন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলা দুটি দ্রুত নিষ্পত্তির দিকে এগোচ্ছে। দলটির নেতারা মনে করছেন, মামলা দুটির ব্যাপারে সরকারের উচ্চমহলের বিশেষ পর্যবেক্ষণ রয়েছে। এতে খালেদা জিয়ার কারাদণ্ড এবং তাঁকে গ্রেপ্তারও করা হতে পারে। এর পাশাপাশি দলের শীর্ষস্থানীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নামে থাকা মামলাগুলোর দ্রুত বিচারপ্রক্রিয়া নিয়েও শঙ্কা আছে। এ অবস্থায় বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন, দ্রুত আন্দোলনে নেমে সরকারের ওপর চাপ তৈরি করা না গেলে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে না। নইলে সরকার এর সুযোগ নিয়ে দলে ভাঙন বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। বিএনপির নেতাদের ধারণা, ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের আগে জামায়াতে ইসলামীর নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায় কার্যকর করা হতে পারে। এরপরই মাঠে নামতে চায় বিএনপি। বিজয় দিবসের আগে কর্মসূচি দিলে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানোর কথা উঠতে পারে। তাই এ সময়টা পার করেই কর্মসূচি দেওয়ার কৌশল নেওয়া হয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানায়। বিএনপির নেতাদের মূল্যায়ন হচ্ছে, যখনই আন্দোলন দানা বাঁধে, তখনই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অথবা আপিল বিভাগে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার কোনো না কোনো রায় সামনে এসে পড়ে। বিশেষ করে জামায়াত নেতাদের যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুতেই বারবার চাপা পড়ে যাচ্ছে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সংসদ নির্বাচনের আন্দোলন। গত ৩ নভেম্বর দেশের সর্বোচ্চ আদালত কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলেও তা এখনো কার্যকর করা হয়নি। বিএনপি মনে করছে, বিরোধী দলের আন্দোলনকে চাপা দিতেই সরকার রায় হাতে রেখে পুরোনো কৌশলে এগোচ্ছে। এ অবস্থায় বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এবার সব দিকের হিসাব মিলিয়েই মাঠের কর্মসূচির ছক কষছেন বলে সূত্রগুলো জানায়। বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, এবার আন্দোলনে নামার আগে দেশি-বিদেশি বড় শক্তি বা গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে দলের পক্ষ থেকে যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পদে থাকা দুই প্রধানের চাকরির মেয়াদ আগামী কয়েক মাসের মধ্যে শেষ হবে। এতে কারা নিয়োগ পান, সেটাও দেখার অপেক্ষায় আছেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। এর আগে দুই ঈদের পর আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে বিএনপি কিছু করতে পারেনি। মূলত দলের ঢাকা মহানগর কমিটি ও ছাত্রদলের কারণে আন্দোলনে নামা সম্ভব হয়নি বলে মনে করেন দলের নেতারা। তাই বিএনপির চেয়ারপারসন এবার ঢাকার মাঠ ঠিক করে আন্দোলনে যেতে চান। এ জন্য চার মাস আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি হাবীন-উন নবী খানকে সদস্যসচিব করে ঢাকায় কমিটি করা হয়। কমিটি পুনর্গঠনের সঙ্গে যুক্ত একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানান, গত মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকা মহানগর বিএনপির ১২০টি সাংগঠনিক ওয়ার্ডের প্রায় ১৪০০ থানা ও ইউনিটের ৫৫ ভাগ কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। এ মাসের শেষ নাগাদ ৮০ ভাগ কমিটি গঠন সম্পন্ন হবে। এরপর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে পর্যায়ক্রমে ঢাকা মহানগরের ইউনিট, ওয়ার্ড ও থানা কমিটি ঘোষণা করা হবে। তবে ‘কৌশলগত’ কারণে ২০ ভাগ ওয়ার্ডের কমিটি দেওয়া হবে না। এর মধ্যে আগের কমিটির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকার নিজ এলাকা এবং দলের কয়েক পক্ষের মধ্যে চরম বিরোধপূর্ণ ওয়ার্ড রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান। মহানগরের দুজন দায়িত্বশীল নেতা জানান, প্রায় চুপিসারে তাঁদের কমিটি গঠন করতে হচ্ছে। কারণ, সম্মেলন করার জন্য তাঁরা মিলনায়তন ভাড়া পাচ্ছেন না। আবার পুলিশের গ্রেপ্তার আতঙ্কে বাসা-বাড়িতেও একত্র হতে পারছেন না। এ পরিস্থিতিতে সামনের আন্দোলনে ঢাকার নেতা-কর্মীরা কতটা ভূমিকা রাখতে পারবেন, তা নিয়ে সংশয় আছে নেতাদের। ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব হাবীব-উন নবী খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কমিটি পুনর্গঠনের পাশাপাশি বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে সমন্বয়কেও সমানভাবে প্রাধান্য দিচ্ছি। এতে নেতা-কর্মীদের মধ্যে যে সাড়া জেগেছে, তাতে আমরা আশাবাদী যে শিগগিরই ঢাকায় বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম হব।’ দলের দায়িত্বশীল আরেকটি সূত্র জানায়, জামায়াতের কারণে বিএনপির সঙ্গে যেতে পারছে না, এমন কয়েকটি দলকে আন্দোলনের সহায়ক শক্তি হিসেবে পেতে নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হবে। যাতে একটা বৃহত্তর ঐক্য হয়। এর জন্য উপযুক্ত ‘পন্থা’ বের করতে দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের একটি অত্যাচারী সরকারকে হটাতে হলে জাতীয় ঐক্য দরকার। বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যকরভাবেই বৃহত্তর ঐক্য চাচ্ছেন। আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এ ব্যাপারে কাজ করছেন। বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা জানান, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের চিন্তা হচ্ছে নতুন বছরে অর্থাৎ ২০১৫ সালের শুরুতেই আন্দোলন মাঠে গড়ানো। এরপর নরমে-গরমে নানা আঙ্গিকে কর্মসূচির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আন্দোলনকে কয়েক মাসের মধ্যেই একটা বৃহত্তর ও সবর্জনীন রূপ দেওয়া। এর পাশাপাশি ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে অসন্তুষ্ট আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীকে তৎপর ও সক্রিয় করা। যাতে ভেতরে-বাইরে চাপ সৃষ্টি করে সরকারকে নতুন সংসদ নির্বাচন দিতে বাধ্য করা যায়। আগামী ২৯ ডিসেম্বর কুমিল্লায় অনুষ্ঠেয় ২০-দলীয় জোটের জনসভায় অথবা পরবর্তী কোনো সমাবেশ থেকে আন্দোলনের বড় কর্মসূচির ঘোষণা আসতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়। অবশ্য কর্মসূচির বিষয়ে এখনই কিছু বলতে রাজি হননি নেতারা। এ বিষয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আন্দোলনের মধ্যেই আছি। আন্দোলনের বর্তমান পর্যায় শেষ হলে আমরা আবার আমাদের দাবি জানাব। এরপর দেখব, সরকার কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। তার ওপর ভিত্তি করেই কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

No comments:

Post a Comment