Monday, November 24, 2014

দেশে ফিরলেও গ্রেপ্তার হলেন না লতিফ সিদ্দিকী:প্রথম অালো

গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে দেশে ফিরলেও গ্রেপ্তার হননি বহিষ্কৃত মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী। বিমানবন্দর থেকে তাঁকে নিরাপদে চলে যেতে সহায়তা করেছে পুলিশ। গতকাল রোববার রাত আটটা ৪০ মিনিটে লতিফ সিদ্দিকী এয়ার ইন্ডিয়ার ২৩০ ফ্লাইটে কলকাতা থেকে ঢাকায় হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে নামেন। ঢাকা বিমানবন্দরে অবতরণের পর লতিফ সিদ্দিকী কিছু সময় ভিআইপি টার্মিনালে অবস্থান করেন। সেখানে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার ল
োক তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। রাত নয়টার কিছু পরে ভিআইপি টার্মিনাল থেকে সংস্থার লোকেরা তাঁকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর টার্মিনালের ভেতর দিয়ে হাঁটিয়ে অভ্যন্তরীণ টার্মিনালে নিয়ে যান। এরপর সেখান থেকে লতিফ সিদ্দিকী গাড়িতে করে চলে যান। তবে কোনো সূত্র নিশ্চিত করতে পারেনি যে সেখান থেকে তিনি কোথায় গেছেন। বিমানবন্দরে অবস্থানকালে প্রথম আলোর প্রতিবেদক লতিফ সিদ্দিকীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ফোন ধরেন। তবে কোনো কথা বলবেন না বলে জানান। লতিফ সিদ্দিকী গত ২৮ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে পবিত্র হজ, মহানবী (সা.), তাবলিগ জামাত ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্য করেন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ায় মন্ত্রিসভা ও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ থেকে তাঁকে অপসারণ করা হয়। অপসারণের আগে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছিলেন। তাঁকে দলীয় পদ ও দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়। ধর্মীয় অনভূতিতে আঘাত হানার জন্য লতিফ সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে ঢাকা ও দেশের ১৮টি জেলায় ২২টি মামলা হয়। নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজির না হওয়ায় প্রতিটি মামলায় আদালত তাঁর বিরুদ্ধে প্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। গ্রেপ্তার না করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট আইনজীবী শাহ্দীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হবে। প্রথমত, তিনি একজন সংসদ সদস্য। সংসদ অধিবেশন চলছে, এই অবস্থায় তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য স্পিকারের অনুমতি লাগবে। দ্বিতীয়ত, তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য যে পরোয়ানা জারি হয়েছে, তা বিমানবন্দর থানা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে গিয়েছে কি না। পরোয়ানা পৌঁছাতে অনেক ক্ষেত্রে সময়ও লেগে যায়। পুলিশ সূত্র জানায়, বিমানবন্দরে নামার পর তারা সরকারের উচ্চপর্যায়ে যোগাযোগ করে। কিন্তু তাঁকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সবুজ সংকেত পাওয়া যায়নি। ২৮ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের একটি হোটেলে সেখানকার টাঙ্গাইল সমিতির সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে লতিফ সিদ্দিকী বলেন, ‘আমি কিন্তু হজ আর তাবলিগ জামাতের ঘোরতর বিরোধী। আমি জামায়াতে ইসলামীরও বিরোধী। তবে তার চেয়েও হজ ও তাবলিগ জামাতের বেশি বিরোধী। এ হজে যে কত ম্যানপাওয়ার (জনশক্তি) নষ্ট হয়। হজের জন্য ২০ লাখ লোক আজ সৌদি আরবে গিয়েছে। এদের কোনো কাম নাই। এদের কোনো প্রডাকশন নাই। শুধু রিডাকশন দিচ্ছে। শুধু খাচ্ছে আর দেশের টাকা দিয়ে আসছে।’ লতিফ সিদ্দিকীর এই বক্তব্যের পর সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়। এ কারণে নিউইয়র্ক থেকে আর দেশে ফেরেননি তিনি। তিনি ভারতের কলকাতায় অবস্থান করছিলেন। প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে টেলিফোনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বারবারই বলেছিলেন, তিনি দেশে ফিরবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ঘটনার প্রায় দুই মাস পর দেশে ফিরলেন নানা কারণে বিতর্কিত এই সাবেক মন্ত্রী। লতিফ সিদ্দিকীকে নিয়ে যখন দেশে তোলপাড় চলছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ছিলেন না। দেশে ফিরে তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, লতিফ সিদ্দিকী গর্হিত কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও বলেন তিনি। এরপর গত ১২ অক্টোবর তাঁকে মন্ত্রী ও দলীয় সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যপদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। সর্বশেষ ২৪ অক্টোবর দলের সদস্যপদ থেকে তাঁকে বাদ দেওয়া হয়।

No comments:

Post a Comment