উঠতি মাস্তানদের প্রতি নজর নেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। আর এই সুযোগে এসব মাস্তান দুর্ধর্ষ হয়ে উঠছে। কোনো কোনো এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের ছত্রচ্ছায়ায় তারা নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর খুন, জখম, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন অপরাধ এখন উঠতি মাস্তানদের নিয়ন্ত্রণে। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি এলাকায় সম্প্রতি খুনসহ যেসব অপরাধের ঘটনা ঘটেছে তার বেশির ভাগই এসব মাস্তানের দ্বারা সংঘ
টিত হয়েছে বলে জানা যায়। ৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর খিলগাঁওয়ে নৃশংসভাবে খুন হন শরিফুল ইসলাম সায়মন নামের এক ব্যবসায়ী। দুর্বৃত্তদের গুলিতে ঘটনাস্থলে আহত হন তার পিতা ইসরাইল হোসেন। দুর্বৃত্তরা তাদের কাছ থেকে ৪৮ লাখ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এই ঘটনায় ঢাকা মহানগর ১ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম শাহীন গ্রেফতার হয়েছেন। এই ছিনতাই ও হত্যাকাণ্ডের সাথে সংশ্লিষ্টতা মিলেছে শাহীনের। স্থানীয় সূত্র জানায়, এলাকায় শাহীনের বিশাল বাহিনী রয়েছে। এই বাহিনীর সদস্য সংখ্যা অন্তত ৩০ জন। তারা এলাকার বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত। রামপুরা এলাকার অপর এক ছাত্রলীগ নেতা তপুর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা হত্যার। স্থানীয় সূত্র জানায়, এই নেতার বিরুদ্ধেও মাদক ব্যবসায়সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, রাজধানীর মিরপুর, পল্লবী, শাহআলী, কাফরুল এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী শাহাদাত বাহিনীর উঠতি মাস্তান মাসুদ, মিলন, বিপ্লব, রাজু, শাহীন ও গাজী মাসুদ অপ্রতিরোধ্যভাবে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এসব সন্ত্রাসীর অনেকেরই বয়স ২০ বছরের নিচে। এই বাহিনীর হাতে জিম্মি রাজধানীর একটি বিশাল এলাকার বাসিন্দারা। এলাকায় চাঁদাবাজি, ছিনতাই, খুন, জখম, অপরের জমি দখলসহ অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ডে এরা নেতৃত্ব দিয়ে আসছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানীর দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল দীর্ঘ দিন ধরে কারাগারে বন্দী থাকলেও তার বাহিনীর সদস্যরা মোহাম্মদপুর, আদাবর ও ধানমন্ডি এলাকার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করছে। স্থানীয় সূত্র জানান, পিচ্চি হেলালের সেকেন্ড ইন কমান্ড আদনানের নেতৃত্বে বিশাল এক বাহিনী এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। আদনানের অন্য সহযোগীরা হচ্ছে তুহিন, সাঈদ, বাদল, জলিল, হুমায়ুন, সুমন ও ইসলাম। শ্যামপুর, কদমতলী, যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা এলাকার উঠতি মাস্তানদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো সম্প্রতি র্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত বড় মিয়া শাহীনের দুই ভাই শাওন ও স্বাধীন, কালা মিয়ার নাতি মজিবর, ঝন্টু, সাগর, কালা আমির, লিটন, মতি, অনিক, জাকির, টিকটিকি কামাল, টুনুর শ্যালক সুজন, বাবা আলী, জনি, রনি, যুব, জাহিদ, সেন্টু, পিচ্চি কামাল, হাশেম, কইতর রাসেল, কলিমুদ্দিন, বুইট্টা ফারুক, আরিফ, আয়নাল, সাগর, টেপু ফর্মা, কাইল্যা আরিফ, সুমন, তাইজুল, রেজাউল, বাবুল, নুর ইসলাম, জহির, মুচি মামুন, সুজন, ফর্মা দুলাল, জুম্মন আবুল হোসেন মন্টু, ডাকাত দেলোয়ার, কাউয়া রাজন, দেউয়া সুমন, শহীদ, জাকির আহম্মদ, রুবেল, বাটি রুবেল, মোস্তাকিম, জাহিদ, কালা নজরুল, ইয়াসিন, নাজমুল ওরফে ঠাণ্ডু, জেলিন, ফর্মা কালু ও চুলকানি কালু। সবুজবাগের মুগদা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে আঙুল কাটা সোহেল, মোফাজ্জল, লম্বা সোহেল ও শাহীন। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজধানীতে যেসব নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটছে তার সব ক’টির সাথেই জড়িত রয়েছে উঠতি মাস্তানেরা। বিশেষ করে সরাসরি যারা কিলিং মিশনে ছিল তারাও অনেকে এখন উঠতি মাস্তান। রাজধানীর আগারগাঁও এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুল হক হত্যা, জুরাইন এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ হত্যা, কদমতলীর বাবু, জনি ও হাসান, পুলিশ কর্মকর্তা ফজলুল হক, মগবাজারের ট্রিপল মার্ডার, ভাসানটেকে নাসির হত্যা এবং মিরপুরে ইমন হত্যাসহ বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনায় জড়িতদের বেশির ভাগই উঠতি মাস্তান। ১৮-২০ বছর বয়সী এসব মাস্তানের হাতেও রয়েছে অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র। এসব অস্ত্রের মূল নিয়ন্ত্রক শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকেই দেশের বাইরে বা কারাগারে। তাদের অস্ত্রগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে উঠতি মাস্তানদের কাছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, উঠতি মাস্তানদের মধ্যে অনেকেই আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে অপরিচিত মুখ। ফলে তাদের গ্রেফতারে সফল হচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রাজধানীতে ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছেন এমন কয়েক ব্যক্তির সাথে আলাপ করে জানা যায়, যারা তাদের টাকা-পয়সা ছিনিয়ে নিয়েছে তাদের বেশির ভাগের বয়সই ১৫-১৬ বছর। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় যারা ছিনতাই করছে তাদের অনেকেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেলের ডিসি মাসুদুর রহমান বলেছেন, যারা অপরাধের সাথে জড়িত তারা সবাই নজরদারির মধ্যে আছে। এদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
No comments:
Post a Comment