Wednesday, November 12, 2014

পর্যটনের বিকাশে নিরাপত্তা উন্নত যোগাযোগ জরুরি:কালের কন্ঠ

কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পকে বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে হলে কয়েকটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে এগোতে হবে। যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, দে
শি-বিদেশি সব ধরনের পর্যটকের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে এবং মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী পুরো কক্সবাজারকে বিন্যস্ত করতে হবে। না হলে পর্যটনশিল্প বিকাশের স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি মিলনায়তনে কালের কণ্ঠের আয়োজনে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে এসব মত তুলে ধরেন আলোচকরা। কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকের দ্বিতীয় পর্বে সঞ্চালনা করেন কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন। প্রথম পর্বে সঞ্চালনা করেন কালের কণ্ঠের কক্সবাজার অফিসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক তোফায়েল আহমদ। ওই পর্বে স্বাগত বক্তব্য দেন ইমদাদুল হক মিলন, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি ও সেক্রেটারি মো. মুজিবুর রহমান। গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় অংশ নেন শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মো. মোস্তাক আহমদ, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম, কক্সবাজার-১ আসনের এমপি মৌলভী মোহাম্মদ ইলিয়াছ, কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক, পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ, বিএনপির সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী, কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল, কক্সবাজার জেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের, দৈনিক আজকের কক্সবাজারের সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান ও হোটেল দ্য কক্স টুডের এমডি এম এ কাইউম। ইমদাদুল হক মিলন বলেন, কালের কণ্ঠ বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের একটি নির্ভরযোগ্য সংবাদপত্র। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকে এই পত্রিকা। যেহেতু পর্যটনশিল্প দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখতে পারে, সে জন্য দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে আজকের এই গোলটেবিলের আয়োজন। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের চারটি প্রকাশনার মধ্যে কালের কণ্ঠ অন্যতম- এ কথা উল্লেখ করে পত্রিকাটির সম্পাদক বলেন, দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে এ পত্রিকাটি সর্বদা নিবেদিত থাকবে। অর্থনীতিতে পর্যটন শিল্পের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য প্রচারণার ক্ষেত্রে যা যা করার দরকার কালের কণ্ঠ সব সময় সেটা করবে। পাশাপাশি কালের কণ্ঠের এই আয়োজনে কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগিতাও মনে রাখবে। অধ্যাপক মোস্তাক আহমদ বলেন, কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় দিন দিন বিলুপ্তির দিকে যাচ্ছে। বিদেশিরা এখানে এসে তাদের জীবনাচরণ দেখতে চায়। কিন্তু রাখাইন সম্প্রদায় যদি বিলুপ্ত হয়ে যায় তাহলে কেন তারা আমাদের দেশে আসবে। আমাদের কৃষ্টি-সংস্কৃতির বৈচিত্র্য টিকিয়ে রাখতে হবে। সবুজ-সজল-শ্যামল পরিবেশ ধরে রাখতে হবে। ইট-পাথরের গাঁথুনির কারণে সমুদ্র সৈকত সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। এর থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। পর্যটকরা যদি নিরাপদে ভ্রমণ করতে পারে, বিনোদনের সুযোগ পায় তাহলেই পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঘটবে। ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আবুল কাশেম বলেন, কক্সবাজারে পর্যটনের উন্নয়নে এ বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্যুরিজম অ্যান্ড হোটেল ম্যানেজমেন্ট বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স ও ডিপ্লোমা কোর্স চালু করা হয়েছে। ফলে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত জনবল কক্সবাজার থেকেই সৃষ্টি হবে। পর্যটনের সত্যিকার বিকাশ ঘটাতে হলে কক্সবাজারের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহকে রক্ষা করতে হবে। কক্সবাজার-১ আসনের এমপি মৌলভী মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, ‘পর্যটনের বিকাশে একমাত্র সরকারই বাধা বলে মনে করি। তবে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাই, তিনি কক্সবাজারের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণ করছেন না। তিনি একটি মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছেন। তিনি বলেন, পর্যটকরা সমুদ্রে নেমে যাতে মৃত্যুর মুখে পতিত না হয় সে জন্য নেটিং ব্যবস্থা করতে হবে।’ কক্সবাজার-২ আসনের এমপি আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, কক্সবাজারের পর্যটনশিল্পের সত্যিকারের বিকাশ ঘটাতে হলে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি বাদ দিয়ে পর্যটন ম্যানেজমেন্ট কমিটি গঠন করতে হবে। কক্সবাজারের সম্পদকে বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলতে হবে। ইতিমধ্যে সরকার কক্সবাজারকে নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে সাবরাং এক্সক্লুসিভ ট্যুরিস্ট জোন, মোটেল উপলকে পাঁচতারকা মান দেওয়া, আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ, খাসজমি পর্যটন খাতের উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়ার ব্যবস্থা করা, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তরিত করা প্রভৃতি। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ বলেন, পর্যটনশিল্পের সঠিক বিকাশ ঘটলে এই কক্সবাজারই বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে। তিনি বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তার জন্য ট্যুরিস্ট পুলিশ দায়িত্ব পালন করছে। পাশাপাশি পুরো শহরকে সিসিটিভির আওতায় নিয়ে আসার জন্য কাজ করছে পুলিশ। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এর সুফল পাওয়া যাবে। বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী বলেন, আমাদের কক্সবাজার মৌলবাদী এলাকা বলে অনেকে অপপ্রচার করে আসছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং সরকারের সঠিক পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে পর্যটনের ক্ষেত্রে কক্সবাজারই হবে বিশ্বের বড় উদাহরণ। বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী কক্সবাজারে একটি বিশ্ববিদ্যালয় উপহার দেওয়ায় সাধুবাদ জানান তিনি। কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র সরওয়ার কামাল বলেন, কক্সবাজার সারা দেশেরই সম্পদ। যেভাবে উন্নয়ন হওয়ার কথা ছিল তা না হওয়ায় পর্যটনশিল্পের যথাযথ বিকাশ ঘটেনি। তিনি কক্সবাজারের জন্য মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী কাজ করতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানান। জাতীয় মহিলা সংস্থা কক্সবাজারের চেয়ারম্যান কানিজ ফাতেমা মোস্তাক বলেন, বঙ্গবন্ধু আমাকে বলেছিলেন, ‘তুই কি কক্সবাজারকে মিয়ামি বানাতে পারবি? তখন আমি তাঁকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম। বর্তমান সরকার কক্সবাজারের উন্নয়নে যে পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে তা বাস্তবায়িত হলে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণ হবে।’ কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু তাহের বলেন, ‘আমাদের দেশে বিদেশি পর্যটকের আগমনের বার্ষিক সংখ্যা নিয়ে ভ্রান্ত তথ্য রয়েছে সরকারের কাছে। আমাদের দেশের নাগরিকরা বিদেশ থেকে দেশে এলে তাঁদেরও এ পরিসংখ্যানে দেখানো হচ্ছে। বর্তমানে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা একেবারে কমে গেছে। এটা পর্যটনশিল্পের জন্য অশনি সংকেত।’ স্থানীয় দৈনিক আজকের কক্সবাজারের সম্পাদক মুজিবুর রহমান বলেন, কক্সবাজারে পর্যটনের বিকাশ ঘটাতে হলে বিমানবন্দরকে সংস্কার করতে হবে, আন্তর্জাতিক করতে হবে। এখানে বিনিয়োগ করার জন্য দেশি-বিদেশি অনেক ব্যবসায়ী তাকিয়ে আছে। মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হলে দক্ষ মানুষকে কাজে লাগাতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, কক্সবাজার শহরের ব্যস্ততম এলাকা থেকে বিমানবন্দরটি আরো দূরে সরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। হোটেল দ্য কক্স টুডের এমডি এম এ কাইউম বলেন, কক্সবাজারে পর্যটনশিল্পে যারা বিনিয়োগ করেছে তাদের অবস্থা খুবই নাজুক। এ অবস্থা চলতে থাকলে এ শিল্পের বিকাশ সম্ভব নয়। আমাদের এখানে যেসব পর্যটক বেড়াতে আসেন তাঁরা রাতে ঘুমান। আর বিশ্বের অন্যান্য দেশে পর্যটকদের জন্য রাতে নানা কালচারাল অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকে। এ বিষয়ে দৃষ্টি দিতে হবে। কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি বলেন, পর্যটনশিল্পের বিকাশে আমরা যাতে পিছিয়ে না পড়ি সে জন্য সরকারের পাশাপাশি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিতে হবে। রাজনৈতিকভাবে সবাইকে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে। হরতাল কর্মসূচি থেকে কক্সবাজারকে মুক্ত রাখলে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ত্বরান্বিত করা যাবে। ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টির সেক্রেটারি লায়ন মো. মুজিবুর রহমান বলেন, এ ইউনিভার্সিটিই কক্সবাজারকে পর্যটনের উত্তম এলাকা হিসেবে বিশ্বের কাছে পরিচিত করে তুলবে। উল্লেখ্য, গোলটেবিল বৈঠক শেষে দুপুর আড়াইটা থেকে ৪টা পর্যন্ত কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রাণবন্ত আলোচনায় অংশ নেন জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরও দেন।

No comments:

Post a Comment